কৃষিসংবাদ ডেস্কঃ
সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বায়োচার ক্রমবর্ধমান একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে,বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, আর্সেনিক দূষন, শিল্পবর্জ্য হতে ভারী ধাতু দ্বারা মাটির দূষন, মাটির অম্লতা, মাটির লবনাক্ততা ইত্যাদি প্রশমনে কৌশল হিসেবে গ্রহন করা হয়। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি সহ কার্বন সিকুয়েস্ট্রেশন কার্যকরীভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হচ্ছে। এই তথ্য সমূহের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহ বিক্ষিপ্ত ভাবে বায়োচার নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। যাহোক,মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে Systematically সবগুলো বিষয়কে বিবেচনায় এনে প্রফেসর ড. জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে এবং গ্রাজুয়েট ছাত্র-ছাত্রীদের সক্রিয় সহযোগীতায় ক্রমাগত ভাবে বায়োচার নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবংআর্সেনিকসহ ভারীধাতু (Heavy metal) সমূহের দূষণ প্রশমনে যুগান্তকারী ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়াও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি সহমাটিতে কার্বন সিকুয়েস্ট্রেশন হচ্ছে যা জলবায়ূর ক্ষতিকর প্রভাবকে প্রশমনে সহায়তা করবে।
পাইরোলাইসিস (4000c – 5000 c) পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকার শস্যের অবশিষ্টাংশ যেমন ধানের খড়, ধানের তুষ, কাঠের গুড়া ইত্যাদি ব্যবহার করে বায়োচার তৈরি করা হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় (4000c – 5000 c) এই সমস্ত শস্যের অবশিষ্টাংশ অর্ধ-পোড়ানো অর্থাৎ ছাই না বানানোপদ্ধতিতে বায়োচার তৈরি করা হয়। বায়োচরের কার্বনের পরিমান শতকরা ৪০ – ৫০ ভাগ,যা খুবই স্থায়ী এবং মাটিতে শত শত বৎসর জমা থাকে, যাতে মাটির কার্বনের পরিমান স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পায়। উচ্চ তাপমাত্রা ও আদ্রতার ফলে আমাদের মাটিতে কার্বন জমা রাখা খুবই কষ্টদায়ক। কিন্তু বায়োচার একমাত্র সহায়ক যা মাটিতে কার্বনের পরিমান বাড়াতে পারে, ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় ও অনুজীবদের ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া বায়োচারের আরও কয়েকটি গুনের মধ্যে অন্যতম গুলো হচ্ছে হেভী মেটাল শোষনকারী হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রাখে যাতে আর্সেনিক ও হেভী মেটালের দূষণ কমায় তাছাড়াও বায়োচার ক্ষারধর্মী হওয়ার ফলে তীব্র অম্ল (acid) মাটির অম্লতা কমায় ও বায়োচার মাটির লবনাক্ততাও কমায়। মৃত্তিকা বিজ্ঞানবিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ড. জি. কে. এম. মোস্তাফিজুর রহমান প্রত্যেকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বায়োচার নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে, বশেমুরকৃবিতে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে শিল্পবর্জ্য দ্বারা হেভী মেটাল দূষণ মাটিতে বায়োচার প্রয়োগের ফলে শস্যে হেভী মেটালের দূষণ শতকরা ৫০-৬০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব।
আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় মাটির কার্বনের পরিমান অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচন্ডভাবে আর্সেনিক দূষণ মাটি ফরিদপুর সদরে একটি চলমান পরীক্ষন স্থাপন করা হয়েছে, যা একজন পিএইচডি ছাত্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। এই পরিক্ষনটি প্রফেসর ড. মোস্তাফিজ এর তত্ত্ববধানে পিএইচডি ফেলো জনাব নাছির উদ্দীন মাহামুদ পরিচালনা করছেন। এই পরীক্ষনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বায়োচার প্রয়োগে মুসুর ডালে আর্সেনিকের মাত্রা প্রশমন (mitigation) করা।
কাজেই বায়োচার একটি যুগান্তকারী উপাদান যার দ্বারা মাটিতে শস্যের আর্সেনিক ও হেভীমেটাল বিষাক্ততা কমানো যায়। কার্বন সিকুয়েস্ট্রেশনের মাধ্যমে জলবায়ূর ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসসহ মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি, মাটির অম্লতা হ্রাসের ফলে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করে। বায়োচার জলবায়ূর ক্ষতিকর প্রভাবে মাটির লবণাক্ততা হ্রাসে তুলনাহীন (unparallel) একটি গবেষণার উপাদান।