বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) লবণাক্ততা সহিঞ্চু গমের উন্নত একটি জাত “বিনা গম-১” উদ্ভাবন করেছে । লাবণাক্ততায় আক্রান্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জমিতে এ জাতটি ভাল ফলন দিবে । স্বাভাবিক জমিতেও এটি অনেক ফলন দিবে ।
বৈশিষ্ট্যঃ
“বিনা গম ১”এর উদ্ভাবক বিজ্ঞানী, উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড আবুল কালাম আজাদ এই জাতের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেন, এ মিউট্যান্টটি অঙ্গজ বৃদ্ধি পর্যায় থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ১২ ডি এস সি/ মি লবণাক্ততায়ও চেক জাত ‘বারি গম ২৫’ অপেক্ষা ১০-১৫% বেশী ফলন দিতে সক্ষম । লবণাক্ত জমিতে বয়স্ক গাছের উচ্ছতা ৬৭-৯০ সেমি এবং অলবণাক্ত জমিতে ৯৮-১০৪ সেমি, গাছ হেলে পরে না, গাছের কান্ড এবং পাতার শীর্ষে মোমের আস্তর থাকে । জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন ।
ফলনঃ
পরমাণু কৃষি বিজ্ঞানী ড আজাদ আরো বলেন, গমের দানা মাঝারি সাইজের এবং বাদামী রঙের । “বিনা গম ১”জাতটি একই সাথে পাকে; লবণাক্ত জমিতে ২.২৩-৩.৫ টন / হেক্টর ; গড়ে ২।৯ টন / হেক্টর এবং অলবণাক্ত জমিতে ৩.৫ – ৪.৫ টন / হেক্টর ; গড়ে ৩.৮ টন / হেক্টর ফলন দিবে । এক হাজার দানার ওজন হবে ৩৬.৬ গ্রাম ।
চাষ পদ্ধতিঃ
“বিনা গম ১” এর চাষাবাদ পদ্ধতি অন্য গম জাতের মতই । নভেম্বরের ১৫ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । তবে এই সময় জমির লবণাক্ততা ৫ ডি এস সি / মি অধিক না হওয়াই ভাল । ২-৪ টি চাষ ও মৈ দিয়ে জমি প্রস্তত করে ১২ ইঞ্চি বা ৩০ সেমি দুরত্বে সারি করে এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্বে গাছ রাখতে হবে ।
ড আজাদ বলেন, প্রতি হেক্টর লবণাক্ত জমিতে ২২০-২৬০ কেজি ইউরিয়া; ১২৫-১৫০ কেজি টি এস পি; ১২০-১৪০ কেজি এম ও পি; ৬৫ -৮৫ কেজি জিপসাম; ৬ কেজি করে জিংক সালফেট ও বোরিক এসিড এবং অলবণাক্ত জমিতে ৪০ কেজি ইউরিয়া; ২০ কেজি এম ও পি বেশী দিতে হবে । ইউরিয়া সারের অর্ধেকসহ বাকী রাসায়নিক সার জমি প্রস্তুতকালে শেষ চাষের সময় এবং বাকী ইউরিয়া বীজ বপনের ২০-২৫ দিন পর ছিটিয়ে দিতে হবে । তাছাড় জমিতে হেক্টর প্রতি ৫ টন করে পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট সার জমি প্রস্তুতকালে ব্যবহার করেল ভাল ফলন পাওয়াযাবে । এর ফলে রাসায়নিক সার হিসাব করে কম ব্যবহার করতে হবে । গমে খুবই কম সেচ লাগে । বৃষ্টিপাত ৮০ মিটি এর কম হলে ১ম সেচ ২০-২৫ দিন পর এবং অপর সেচটি ফুল আসা শুরু হলে দিতে হবে । “বিনা মুগ ১” জাটি কাল দাগ (Black point) এবং পাতা পোড়া (Leaf bloch) সহণশীল । জাব পোকার আক্রমণ দেখা দিলে কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে ।
বিনা’র মহাপরিচালক ড. শমশের আলী “বিনা মুগ ১” সম্পর্কে বলেন, এই জাতটি চাষ সম্প্রাসারণের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লবণাক্ত জমিকে চাষাধীনে আনা সম্ভব হবে । অলবণাক্ত জমিতেও এটি বেশী ফলন দিবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন । তিনি আরো বলেন, এই জাতটি যেহেতু চাষে অল্প দিন লাগে, তাই গম চাষ করেও অন্য ফসল চাষ করা সম্ভব হবে । তিনি বলেন, লবণাক্ত জমিতেঃ গম-বোনা আউস/পতিত – রোপা আমন এবং অলবণাক্ত জমিতেঃ গম – নাবি বোরো ধান বা আউশ ধান – রোপা আমন শস্য বিন্যাসে চাষ করা যাবে । আবার অলবণাক্ত জমিতেঃ গম – গ্রীস্মকালিন মুগ – রোপা আমন ধানের চাষ করা যাবে । “বিনা গম ১” খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ।
ড নিয়াজ পাশা, কৃষি প্রকৌশলী এবং কৃষি সাংবাদিক ।
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম