কৃষিবিদ মো: মজিবুর রহমান:
” রাধতে সোজা, খেতে ভাল,ডিম ছাড়া আর কি বলো”। আজ ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। যদি সুস্থ থাকতে চান প্রতিদিন একটি করে ডিম খান,এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ বাংলাদেশেও বিশ্ব ‘ডিম দিবস‘ পালিত হচ্ছে। ডিমকে বলা হয় জীবনের আধার,আদর্শ খাদ্য।এর অসাধারণ পুষ্টিগুন ডিমকে স্বাতন্ত্র বহুমুখি প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদানের তালিকায় স্থান করে দিয়েছে। ডিম বিত্তবান থেকে দরিদ্র শ্রেণী সকলের পুস্টি চাহিদা মেটায় এবং সবার কাছে সমান গ্রহনযোগ্য। যারা মনে করে ডিম খেলে মানুষ মোটা হয়ে যায় বা হার্ট ডিজিজের সম্ভাবনা আছে তাদের জন্য চমকপ্রদ খবর হলো, Rochester Center for Obesity Research এর মতে বিষয়টি মোটেও সত্য নয়। বরং শরীর থেকে ৪০০ ক্যালরী কমাতে পারে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি ডিম। গবেষনায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন সকালের নাশতায় একটি ডিম মাসে তিন পাঊন্ড ওজন কমাতে পারে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন পরামর্শ প্রদান করে যে, নির্দিষ্ট মাত্রায় ডিম গ্রহন হৃদ রোগের ঝুকি বৃদ্ধি করে না।
২০০৩ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক সমীক্ষায় দেখিয়েছে যে, অ্যাডোলেসেন্ট পিরিয়ডে বা পরবর্তীকালে সপ্তাহে ৬ টি করে ডিম খেলে ৪৪ ভাগ ব্রেষ্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের ভাষ্য মতে একজন সুস্থ্য সবল মানুষ প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে পারে। সঙ্গে আরও জানিয়েছে ডিম হৃৎপিন্ডে রক্ত জমাট বাধতে দেয়না, ফলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম থাকে। ডিমের সাদা অংশে কোন ফ্যাট থাকেনা, কিন্ত হলুদ অংশে মাত্র ৫ গ্রাম ফ্যাট আছে যার ক্ষতিকর অংশের পরিমান ১.৬ গ্রাম । আমরা সাধারণত খাদ্যের মাধ্যমে যে, কোলেস্টেরল পা্য় তা কোন মতেই রক্তে কোলেস্টেরল লেবেল বৃদ্ধি করে না। আরও একটি সমিক্ষায় জানা যায় যে দিনে দুটি ডিম রক্তে লোহিত কনিকা তৈরি করে এবং লিপিড প্রফাইলে কোন প্রভাব ফেলে না। এক সমীক্ষায় দেখা যায ৬৫ ভাগ বডি ওয়েট, ১৬ ভাগ বডি ফ্যাট এবং ৩৪ ভাগ কোমরে জমে থাকা মেদ কমাতে পারে ডিম।
ডিম উচ্চ মানের প্রাকৃতিক প্রোটিন, প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। ডিমে আছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন বি-১২। আমরা যে খাবার খাই, সেই খাবারকে ভেঙ্গে শক্তিতে রুপান্তরিত হতে সহায়তা করে ভিটামিন বি-১২। এই ভিটামিন সবচেয়ে বেশী গুরুতপূর্ন¡ ভুমিকা রাখে শরীর বৃদ্ধিতে। সুতরাং শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে ডিমের জুড়ি মেলা ভার।
ডিমের ভিতরে আছে ভিটামিন ‘এ’ কেরোটিনয়েড, ল্যুটেন জিয়েক্সেথিন। এই সকল উপাদান দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি ও চোখের ছানি কমাতে সহায়তা করে। ডিমে আছে ভিটামিন ‘ডি’। পেশির ব্যথা কমাতে ও হাড় গঠনে এই ভিটামিন ‘ডি’ ভ’মিকা পালন করে। ডিমের ভিটামিন ‘ই’ কোষ ও ত্বকে ফ্রি রেডিক্যাল নষ্ট করে স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং ডিমের ভিতর অবস্থিত জিংক , ফসফরাস ও আয়রন। মা এবং শিশুদের ইমিউন বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে ডিম। ফসফরাস দাত ও হাড় মজবুত করে। ডিমে প্রায় ৩০০ মাইকোগ্রাম কোলিন (Choline) থাকে যা কার্ডিওভাসকুলার সিসটেম, স্নায়ু যকৃৎ ও মস্তিস্ককে নিয়ন্ত্রন রাখে।
মানুষের সুস্থ শরীর গঠনে ২১ টি এমিনো এসিড মূখ্য ভ’মিকা পালন করে কিন্তু আমাদের শরীর অতিপ্রয়োজনীয় ৯ টি এমিনো এসিড তৈরি করতে পারেনা ফলে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়, আর এর জন্য আদর্শ প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট হল ডিম। অনেকে শখ করে নখ বড় রাখে এবং চুলের স্বাস্থ্য’/সৈৗন্দয্য নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নাই। নখ ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা ও কোমল মসৃন স্বাস্থ্যোজ্জল চুলের জন্য ডিমের ভিতর অবস্থিত সালফারের ভ’মিকা গুরুত্বপূর্ন।
ফলে সহজেই অনুমেয় যে, ডিম পুষ্টি গুনে অনন্য খাদ্য উপাদান। আবার মূল্যমানের দিক দিয়ে বিচার করলে বাজারের অন্য যে কোন খাদ্য উপাদান থেকে ডিমের মূল্য তুলনা মুলক অনেক কম। বাজারে এক হালি ডিমের মূল্য ৩২ টাকা। একটি পরিবারের একবেলা পূর্ণ পুষ্টি ও ভাতের সাথে তরকারীর চাহিদা পূরন করে এক হালি ডিম। অথচ। ৩২ টাকা সমমূল্যে বর্তমান বাজার কোন প্রকার মাছ কিংবা ১দিনের সবজিও কেনা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে আমরা অনেকে বাজারের বিভিন্ন খাদ্য পণ্যের চটকদার প্রচারনায় আকৃষ্ট হয়ে নিজের শিশু সন্তানদের স্কুলের টিফিনে বাজার থেকে কেনা বিভিন্ন খাদ্যপণ্য দিয়ে থাকি যা আপনার শিশুর জন্য আদৌ স্বাস্থ্যকর কিনা সেটা চিন্তা করিনা। কিন্তু অত্যন্ত সাধারণ একটি খাবার অথচ অবিশ্বাস্য পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ ডিম শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পূর্নাঙ্গ ভূ’মিকা রাখে, দামও সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে, ফলে ডিমের মত উৎকৃষ্ট মানের অত্যাবশ্যক খাদ্য উপাদান আর কি হতে পারে।
—
লেখকঃ বি,এস-সি এ,এইচ; এম,এস ইন এনিম্যাল নিউট্রিশন, বিসিএস (প্রাণিসম্পদ),উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার, রায়পুরা, নরসিংদী
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম