Site icon

জেনে নিন নিরাপদ বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদনের কৌশল

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ

শাকসবজির পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন করার জন্য রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। কীটনাশক মানবদেহে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে।কীটনাশক প্রয়োগের ২১ দিনের মধ্যে গাছ থেকে শাকসবজি সংগ্রহ করলে দেহে প্রত্যক্ষ বিষাক্ততা সৃষ্টি করে । ২১ দিন পরে সংগৃহীত শাকসবজি পরোক্ষভাবে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে ।বাজারে যত শাকসবজি উঠে প্রায় সবই কীটনাশক প্রয়োগ করা।কীটনাশক প্রয়োগকৃত শাকসবজি খেলে বিভিন্ন রকম রোগ যেমন Ñ ক্যান্সার, অন্ত্রে জটিলতা ফুসফুস জনিত রোগ, প্রজনন হ্রাস ,বমি, মাথাঘুরানোসহ জটিল রোগ হয়। তবে রাসায়নিক কীটনাশক ছাড়াও অরাসায়নিক পদ্ধতিতে পোকামাকড় রোগবলাই দমন করা যায়। যা সম্পূর্ন স্বাস্থ্য ও পরিবেশসম্মত। শীতকালে শাকসবজি বেশি উৎপাদন হয় এবং রাসায়নিক কীটনাশকও বেশি প্রয়োগ করে শাকসবজিকে বিষাক্ত করা হয়।কীটনাশক ছাড়া পোকামাকড় ও রোগ দমন করে বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করার কিছু পদ্ধতি এখানে উল্লেখ করা হলো ঃ
সকল শাকসবজির জন্যÑ
(১) চারা অবস্থায় সকল শাকসবজির চারার গোড়া ফিল্ড ক্রিকেট ও কাটুই পোকা কেটে দেয়। এই পোকা দমন করার জন্য হালকা সেচ দিলে পোকা মাটির ভিতর থেকে উপরে উঠে আসলে কাস্তে বা লাঠি বা হাত বা পা দ্বারা মেরে ফেলা যায় । সেচ দেয়া সম্ভব না হলে মাটির গর্তে পানি ঢাললে পোকা এমনিতে মাটির উপর উঠে চারার গোড়া কাটার সময় মারতে হবে। মাটির গর্তে কেরোসিন ঢেলেও পোকা মারা যায়।
(২) গোড়াপচা রোগ ঃ এতে চারার গোড়া পচে গাছ মারা যায়।
দমন পদ্ধতি – অতিরিক্ত সেচ দেয়া যাবে না। সেচ দেয়ার পর মাটির স্তর ভেঙ্গে মাটি শুকাতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ জমি থেকে তুলে অন্যত্র ফেলে দিতে হবে।

ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, ওলকপি, শালগম, গাজর ও ব্রকলি ঃ পোকা, প্রজাপতি এসব সবজির পাতা ও ডগা খায়। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফুলকপি ও বাঁধাকপির মাথা ছোট হয় বা বাধে না।
বন গাজর, সরিষা, শালগম এসব উদ্ভিদ এই সবজি ক্ষেতে রাখা যাবে না। *হাত জাল দ্বারা ধরা যাবে ।*আঠা লাগিয়ে আটকানো যায়। বাঁধাকপিতে কালোপচন রোগ হয় ।

এ রোগের লক্ষন হচ্ছেঃ চারাগাছের বীজপাত্রের কিনার কালচে দাগ হয়। পাতায় দাগ পড়ে। বীজ ১০ মিনিট গরম পানিতে ডুবিয়ে বপন করলে এ রোগ হয় না। এছাড়াও বোর্দমিকচার দেয়া যেতে পারে। বিকৃতমূল রোগ বাঁধাকপিতে হলে মূল স্কীত হয়ে বিভিন্ন আকারের হয় । এ রোগ দমনের জন্য মাটি শোধন করে নিরোগ বীজতলায় চারা উৎপাদন করতে হবে উক্ত সব গুলো সবজিতে হলদে হওয়া রোগ হয়। আক্রান্ত গাছের পাতার নিম্নাংশ বৃন্ত বরাবর খানিকটা অংশ সর্ব প্রথম ঢলে পরে এবং পরে মরে যায়। রোগ দমন Ñ বীজ শোধন, শস্য পর্যায় অবলম্বন ফানজিসাইড প্রয়োগ এবং রোগক্রান্ত অংশ কেটে অন্যত্র ফেলে দিতে হবে । পাতায় দাগ রোগ হলে এসব সবজি পাতায় গোলাকার হলুদ দাগ পরে । রোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য বীজ গরম পানিতে ডুবিয়ে রেখে পরে বপন করতে হবে । ডাউনি মিলডিও রোগে উক্ত সবজি গুলোর পাতা সাদা পাউডারের মতো আবরন পড়ে। রোগ দমনের জন্য বীজ গরম পানিতে ডুবানো, শস্য -পর্যায় অবলম্বন , পরিস্কার বীজ তলায় চারা উৎপাদন ও সরিষা জাতীয় আগাছা দমন করতে হবে ।
লাউ মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, শসা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করলা ঃ পোকা ঃ রেড পাম্পকিন বিটল এসব সবজি গাছের ফুল ,ফল পাতা , কচিডগা গর্ত করে খায় । দমনÑছাই ছিটিয়ে সাময়িক দমন করা যায়। হাত দিয়ে ধরে মারা যায়। মাছি স্ত্রী পোকা কচি সবজি ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। দমন Ñ হাত জাল ও ফাঁদের সাহায্যে এই পোকা আটকানো যায় । রোগ ঃ পাউডারি মিলিডিওÑ পাতার উপর বিক্ষিপ্ত সাদা সাদা দাগ হয় । দমনÑ লাউ ও কুমড়া জাতীয় আগাছা দমন করতে হবে। আক্রান্ত পাতা ছিরে বা পুড়ে ফেলে দিতে হবে। ডাউনি মিলডিওÑআক্রান্ত পাতায় নানা আকারের দাগ পড়ে। পাতা কুচঁকে যায় । দমন Ñপাউডারি মিলডিও এর মত। এছাড়াও বোর্দমিকচার প্রয়োগ করা যেতে পারে । বারি লাউ এর জাত চাষ করলে এরোগ হয়না ।
টমেটো ও বেগুন
পোকাঃ ফল ছেদক পোকা Ñ বেগুন ও টমেটো কচি অবস্থায় ছিদ্র করে রস খায়।ফলে টমেটো নষ্ট হয় বা পচে যায় । এর লার্ভা কচি ডগাও খায় । ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় । দমনÑ আক্রান্ত ডগা ও ফল ছিড়ে কীড়া মারতে হবে। ক্ষেত সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে । ছাই ছিটিয়ে, আলোর ফাঁদ দিয়ে ও হাত জল দিয়ে মাছি আটকানো যায় । কাজলা ও ঝুমকা জাতের বেগুনে এপোকা আক্রমন করে না বলে এগুলো চাষ করা উচিত । রোগঃ নেতিয়ে পড়া রোগÑ চারা অবস্থায় ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে গাছ নেতিয়ে পড়ে। বীজ বপনের পরেই বীজ ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হলে চারা হয় না । দমনÑ হালকা ঝুর ঝুর মাটিতে বীজ বপন করা, সেচ না দেওয়া ,মাটি সবসময় শুকনা রাখা।বীজ ও মাটি শোধন করে বীজ বপন করা।
লেইট ব্লাইট রোগÑ পাতা, কান্ড ও ফলে সাদা সাদা দাগ পরে । দমনÑ আলু ও টমেটো পাশাপাশি জমিতে চাষ না করা। আক্রান্ত অংশ ছিড়ে পুড়ে ফেলা ।
আরলি ব্লাইট রোগÑচারা গাছের কান্ড এবং বড় গাছের পাতায় বাদামি দাগ পড়ে। দমনÑ আগাছা দমন, সুষম সার ব্যবহার ও প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে । বীজ শোধন করে বপন করা ।
ফিউজেরিয়াম উইন্টÑ টমেটোর চারা গাছের বয়স্ক পাতাগুলো নিচের দিকে বেঁকে ঢলে পড়ে এবং মারা যায়। দমন – মাটি শোধন ও বীজ শোধন করে বীজ বপন করতে হবে। রতন, অপূর্ব ও লালিমা জাতের টমেটোতে ঢলে পড়া রোগ হয় না।
ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট ঃ আক্রান্ত গাছের পাতা ও ডাঁটা খুব দ্রুত ঢলে পড়ে। এবং গাছ মারা যায়। দমন – নেই। তবে আক্রান্ত জমিতে ৪-৫ বছরের মধ্যে তামাক, আলু, বেগুন, মরিচ ও টমেটোর চাষ করা যাবে না। আক্রান্ত জমি বীজতলা করা যাবে না। ২-১ গাছে রোগ দেখার সাথে সাথে তুলে পুড়ে ফেলতে হবে। মাটি শোধন করে বীজ বপন করা উচিত। রতন, বারিটমেটো-৩, চৈতী, অপূর্ব, লালিমা জাতের টমেটো চাষ করলে এ রোগ হয় না।
অ্যানথ্রাকনোজ রোগ ঃ টমেটো ও বেগুনে কালো দাগ পড়ে। দাগগুলোতে পরে পচন ধরে ফল পড়ে যায়। দমন – যে সব জমিতে এই রোগ হয় সেখানে ৩-৪ বছর পর পর টমেটো চাষ করা উচিত।
মোজাইক রোগ ঃ টমেটোর পাতায় সবুজ হলদে দাগ পড়ে। এতে ফলন কম হয়।
দমন – আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়তে হবে। জমিতে কাজ করার সময় বিড়ি সিগারেট খাওয়া উচিত না। ক্ষেত পরিস্কার রাখতে হবে। জাব পোকা ছাই দিয়ে দমন করতে হবে।
মড়ক রোগ ঃ বেগুন গাছের কান্ডে ক্যাঙ্কার হয়। বাকল খসে পড়ে, বাতাসে ভেঙে পড়ে। বেগুন শুকিয়ে যায়। পাতায় দাগ পড়ে। গাছ মারা যায়।
দমন – নীরোগ বীজ বপন করা। বীজ শোধন করতে হবে। কালো ও কুচকানো বীজ বপন করা উচিত না।
পাতা ছোট হওয়া রোগ ঃ ভাইরাসের আক্রমণে পাতা ছোট হয়। গাছ বড় হয় না। পাতা হলুদ ও সাদা হয়। পাতায় কাটা থাকে না। পাতা মসৃন থাকে।
দমন – ধুতরা জাতীয় গাছ ধবংস করা । আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে ফেলা।
শিম, বরবটি, ফরাসি শিম, মটারগুটি ঃ
পোকামাকড়
জাবপোকা ঃ ফলের কচি অংশের রস চুষে খায়। এতে ফলন খুব কম হয়। ঝাঁক ধরে গাছের কচি ডগায় বসে রস খায়।
দমন – লেডিবার্ড বিটল, টাইগার বিটল নামক শিকারী পোকা গাছে রাখা। এরা জাব পোকা এর লার্ভা খায়। ছাই ছিটিয়ে, পানি ¯েপ্র করে এ পোকা দমন করা যায়।
ফল ছেদক পোকা ঃ শিমের কুঁড়ি, ফুল ও ফল খেয়ে ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে। ভিতরে ঢুকেও ফল খায় ও মলত্যাগ করে।
দমন – আক্রান্ত শিম তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলা। শুককীট পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়।
রেড মাইট ঃ গাছের পাতা ও ফুলের কুঁড়ি থেকে রস চুষে খায়।
দমন – গাছ তুলে পুড়ে ফেলা। সঠিক দূরত্বে গাছ রোপন করা।
রোগ ঃ অ্যানথাকনোজ ঃ শিমে বাদামি-কালো আঁকাবাঁকা দাগ পড়ে।
দমন- ফসল উঠানোর পর পরিত্যাক্ত কান্ড পাতা পুড়ে ফেলা। নিরোগ বীজ বপন করা। ক্ষেত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
মরিচা রোগ ঃ গাছের কান্ডে, পাতায়, ফলে সাদা-হলুদ বর্ণের দাগ পড়ে ও পাতা শুকিয়ে যায়।
দমন – রোগ প্রতিরোধী জাত – ফ্লোরি, গ্রীন, ক্যানফ্রিজার, সেমিনোল জাতের শিম চাষ করা। সুস্থ, নিরোগ বীজ বপন করা। আক্রান্ত অংশ ছিঁড়ে পুড়ে ফেলা।
পাতার কোনাচে দাগ রোগ ঃ পাতা আঁকাবাঁকা ছোট ছোট কোণাচে হয়। পাতায় গাঢ় বাদামি দাগ পড়ে। শিম ঝরে পড়ে।
দমন – সুস্থ ও নিরোগ বীজ বপন করা। রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন – স্কারনেট, রানার, বারিশিম-১, নেভিবিন, স্কোটিয়া চাষ করা।
গোল আলূ ঃ
পোকা ঃ সুতলী পোকা ঃ ক্ষেত ও সংরক্ষণাগারে আক্রমণ করে। আলুর ভিতরে প্রবেশ করে আলু খায়।
দমন – আলু বড় হওয়ার সময় কয়েকদিন পর পর সেচ দিয়ে গাছের গোড়া মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যাতে স্ত্রীমথ আলুর উপর ডিম না পাড়তে পারে। ক্ষেত সব সময় আগাছামুক্ত পরিস্কার রাখা। আলু তুলে দ্রুত ক্ষেত থেকে সরাতে হবে। গুদামজাত করার আগে আলু বাছতে হবে। সংরক্ষণাগারের তাপমাত্রা, আদ্রতা ও বায়ু নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
জাব পোকা ঃ শিমের মত দমন করতে হবে।
রোগ ঃ লেইট ব্লাইট ঃ আলু গাছের পাতায় ও কিনারা বাদামি ও কালো দাগ পড়ে। পাতা পচে গাছ মরে যায়।
দমন – রোগমুক্ত এলাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করা। বোর্দমিকচার প্রয়োগ করা। গাছের গোড়ার মাটি উঁচু করে দেয়। আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে ফেলা।
আরলি ব্লাইট ঃ পাতায় গোলাকার কালো দাগ পড়ে। আলুর আকার ছোট হয়।
দমন – সুস্থ গাছ থেকে সংগৃহীত বীজ বপন করা। আক্রান্ত গাছ পুড়ে ফেলা। আক্রান্ত জমিতে ২-৩ বছরের মধ্যে আলু চাষ না করা। টমেটো আশেপাশের জমিতে চাষ না করা। বোর্দমিকচার ছিটানো যেতে পারে।
সাধারণ স্ক্যাব রোগ ঃ আলুর উপর বাদামি দাগ পড়ে এবং গভীরে যায়। আলুর ত্বক খসখসে হয়।
দমন – রোগমুক্ত, সুস্থ বীজ বপন করা।
রোগ প্রতিরোধী জাত – সেনেকা, কেউগা, অন্টারিও বপন করা উচিত। কম অম্লযুক্ত (৫-৫.৮) মাটিতে আলু চাষ করা নিষেধ।
পাউডারি স্ক্যাব রোগ ঃ কচি আলুতে ছোট ছোট দাগ পড়ে। অনেক দাগ মিলে বাদামি বড় দাগের সৃষ্টি হয়।
দমন – রোগমুক্ত বীজ বপন করা।
ঢলে পড়া রোগ ঃ পাতা ও শিরা হলুদ ও বাদামি রঙ হয়। পরে কান্ড ও পাতা ঢলে পড়ে। শিকড় পচে গাছ মরে যায়। আলু বাদামি রঙের হয়।
দমন – সুস্থ আলু বীজ বপন করা। মাটি শুকনা ও ঝুরঝুরে রাখা।
ব্লাক স্কার্ফ রোগ ঃ চারাগাছের ডগায় ও গোড়ায় বাদামি দাগ পড়ে। চারা মারা যায় অথবা গাছ খুব দূর্বল হয় এবং ডগা ঝোপালো হয়।
দমন – বীজ শোধন করে বপন করতে হবে। আলু মাটির অল্প নিচে লাগাতে হয়।
রিঙরট রোগ ঃ মৌসুমের শেষে আক্রান্ত গাছ ঢলে পড়ে। পাতা হলুদ হয় ও মরে যায়। আলু পরিপক্ক হয় না। এই আলু বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না।
দমন – আলু বীজ শোধন করতে হবে। শীতপ্রধান এলাকা থেকে আলুবীজ সংগ্রহ করতে হবে।
শুষ্কপচা রোগ ঃ আক্রান্ত আলু খোসা গাঢ় রঙ হয় এবং চক্রাকারে কুঞ্চন দেখা দেয়। আলুর ভিতরে শুেিকয় যায়। শুকনা অংশ শক্ত মনে হয়।
দমন – আলু ক্ষত করা যাবে না। আলু জমি থেকে সংগ্রহের কয়েকদিন পর খোসা শক্ত হলে হিমাগারে রাখতে হবে। হিমাগারে তাপমাত্রা ৪০-৫০ ডিগ্রি ফা. নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
আলু বীজ শোধন বা নিরোগ করা পদ্ধতি ঃ আলুবীজ ৩২০ ভাগ পানির সঙ্গে ১ ভাগ ফরমালিন মিশিয়ে উহাতে আলু ডুবাতে হয়। এরপর আলু তোলে ভিজা বস্তা দ্বারা দুই ঘন্টা ঢেকে রাখতে হবে।

ঢেঁড়শ ঃ
পোকা ঃ ফল ছেদক পোকা (টমেটো ও বেগুনের ফলছেদক পোকার মত)
রোগ ঃ উইল্ট রোগ ঃ আক্রান্ত গাছ হলদে ও খাটো হয়। পরে পাতা গুটিয়ে গাছ ঢলে পড়ে মারা যায়। দমন – দমন করা যায় না। রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করা যেতে পারে।
হলুদ শিরা রোগ ঃ পাতার শিরা হলদে, ছোট ও খর্বাকৃতি হয়। ফুল, ফল কম এবং শক্ত হয়।
দমন – রোগ প্রতিরোধী জাত বারি ঢেঁড়শ-১ চাষ করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
উক্ত পদ্ধতিে রোগ-বালাই দমন ছাড়াও সকল শাকসবজির জন্য কিছু সাধারণ পদ্ধতি আছে। যেমন-
১। লেডিবার্ড বিটল, মেরিডবাগ, মাকড়সা, বোলতা, টাইগার বিটল, ব্রাকনিড ইত্যাদি পোকা ক্ষেতে পালন করলে ক্ষতিকর পোকা ধবংস করে।
২। জমির ভিতরে ও বাইরে আগাছা পরিস্কার করলে ক্ষতিকর পোকা আশ্রয় না পেয়ে অন্যত্র চলে যায়।
৩। সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ। যেমন – সবজিতে ইউরিয়া সার বেশি দিলে লেডিবার্ড বিটল আক্রমণ কম করে।
৪। সবজি সারিতে ও সঠিক দূরত্বে রোপন করলে বাদামি গাছ ফড়িং আক্রমণ কম করে।
৫। মৌসুমের শুরুতে শাকসবজির বীজ বপন করলে রোগবালাই কম হয়।
৬। গভীরভাবে জমি চাষ করে রোদে শুকালে পোকা ও রোগ কম হয়।
৭। পর্যায়ক্রমে ফসল চাষ করলে পোকা ও রোগ কম হয়।
৮। আলোর ফাঁদ পেতে, জমিতে ডাল/কঞ্চি পুঁতে, হাত জাল দিয়ে, গর্তে পানি বা ধোঁয়া দিয়ে পোকা দমন করা যায়।
৯। সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ঃ প্রজননের সময় হলে স্ত্রী পোকার দেহ থেকে ফেরোমেন নামক রাসায়নিক পদার্থের গন্ধ বের হয়। এই গন্ধে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে স্ত্রী পোকার সাথে প্রজননে অংশ নেয়। বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বের ভিত্তিতে ফেরোমেন রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে কৌটায় ভর্তি করে সবজি ক্ষেতে রাখে। ফেরোমেনের গন্ধে পুরুষ পোকা কৌটার চারপাশে ঘুরে ডিটারজেন্ট পানির মধ্যে পড়ে মারা যায়। এতে প্রজনন ব্যাহত হয়ে পোকার বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
১০। নিম, নিশিন্দা, বিষকাটালী, তামাক ইত্যাদি ভেষজ কীটনাশকের মাধ্যমে পোকামাকড় দমন করা যায়।
সুতরাং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ না করে উক্ত অরাসায়নিক পদ্ধতিতে পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন করে বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করা যায়।

Exit mobile version