বেল হতে পারে দেশের সম্ভবনাময় ফল

বেল হতে পারে

বেল হতে পারে
কৃষিবিদ ড. এম এ মজিদ মন্ডল
বেল হতে পারে ঃ “কথায় বলে লোকে গাছে বেল পাকিলে”, “গাছে বেল পাকিলে কাকের কি?” এ রকমের অনেক প্রাচীন প্রবাদ বাক্য থেকে বুঝা যায় যে, বাংলাদেশে বেলের চাষ আদি কাল থেকেই সুপরিচিত। বিশ্বের অনেক দেশে বানিজ্যিক ভাবে বেল চাষ হলেও বাংলাদেশে বানিজ্যিক ভাবে চাষের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। তবে অনেক বাড়িতে ফল ও ওষৌধের জন্য এ গাছ লাগানো হয়। ভারতীয় উপমহাদেশ এর জন্মস্থান হলেও এশিয়ার অনেক দেশে এর চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বেলের জাত প্রকরণ নিয়ে কোন কাজ হয় নাই, তাই এর কোন উন্নত জাত এ দেশে নাই। পৃথিবীর অন্য সব ফলের চেয়ে বেল অউর্বর, অবহেলা, অযতেœ জন্মে এবং দীর্ঘ দিন সাধানর পরিবেশে পুষ্টিমাণ বজায় থাকে। বাংলাদেশে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বন্ধুর (উচু নীচু), পতিত, অউর্বর জমিতে এ ফল বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা যেতে পারে।


পুষ্টিমান ও ব্যবহার ঃ বেলের ব্যবহার হয় ঃ (১) খাদ্য হিসাবে ও (২) ওষধ হিসাবে। এখানে (১) খাদ্য হিসাবে বিবেচনা করলে প্রতি ১০০ গ্রাম শাঁসে শতকরা ৫৬-৭৭ ভাগ পানি, ৩১.৮ ভাগ শর্করা, ২.৬ ভাগ আমিষ, ০.৩৯ ভাগ স্নেহ, ১.৭ ভাগ খনিজ, ৫৫ মিলি গ্রাম ক্যারোটিন, ০.১৩ মিলি গ্রাম থায়ামিন, ১.১৯ মিলি গ্রাম রাইবোফ্লোভিন, ১.১ মিলি গ্রাম নায়াসিন, ৮ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি, ৩৫ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম ও ০.৬ মিলি গ্রাম লৌহ আছে। আবার (২) ওষধ হিসাবে বিবেচনা করলে এ ফল পেটের পীড়া, আমাশয় , কোষ্টকাঠিন্য প্রভৃতি রোগের ব্যবহার সুপ্রাচীন। বেলের ছাল ও পাতা থেকে বিভিন্ন প্রকার ওষধ তৈরী হয়।


মাটি ও জলবায়ু ঃ যে কোন মাটিতেই বেল গাছ জন্মে। অম্লীয় ও ক্ষারীয় মাটিতে এমন কি জলাবদ্বতা ও পাহাড়ের চুড়ায় এ গাছ জন্মাতে অসুবিধা হয় না। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১৫০০ উচ্চতায় এ গাছ সহজে জন্মাতে পারে। যে কোন ধরনের আবহাওয়া অথাৎ -৭ ডিগ্রী সে. থেকে ৪৫ ডিগ্রী পর্যন্ত তাপমাএায়ও এ গাছ ভাল জন্মাতে পারে। সুতারাং বলা যেতে পারে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ভ’মি বন্ধুর (উচু নীচু), পাহাড়-পর্বত যেখানে ভাল ফসল হয় না বা পতিত অবস্থায় থাকে ঐ সব জমিতে বেলের বানিজ্যিক ভাবে চাষ করে দেশে ফলের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। আমাদের বসত বাড়ির আশে পার্শে¦, পথের পার্শ্বে, অউর্বর পতিত জমিতে এ সুস্বাদু ওষধি ফলটি (বেল) চাষ করলে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি ফল বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে।
চাষ পদ্বতি,চারা তৈরী ও রোপণ ঃ বাংলাদেশে বীজ থেকেই বেলের চারা তৈরী করা হয়। গুটি কলম, কুঁড়ি সংযোজন,মুল কলম প্রভৃতি পদ্বতিতে বংশ বিস্তার করা যেতে পারে। বেলের শিকড় থেকে অনেক চারা বের হয় এবং ঐ চারা গুলি মিকড়সহ তুলে কয়েক দিন ছায়ায় রেখে দিয়ে পরে মুল জমিতে লাগাতে হবে। বর্ষার আগে জমি তৈরি করে ১২-১৫ মিটার দুরে নির্দিষ্ট গর্তে ১০-১৫ কেজি জৈব সার দিয়ে ২০-২৫ দিন পরে চারা রোপণ করতে হয়।


পরিচর্যা ঃ বেলের গাছে সার প্রয়োগের প্রচলন না থাকলেও এক বছরের একটি গাছে প্রতি বছর ৪০-৫০ কেজি জৈব সার ও ১০কেজি ইরিয়া, টি এস পি ও এম পি সারের মিশ্রণ বর্ষার পূর্বে গাছের গোড়া থেকে একটু দুরে মাটি আলগা করে প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বাড়ার সাতে সাথে সারের পরিমাণ বৃদ্দি করতে হবে। গাছের গোড়ায় কোন আগাছা জন্মাতে দেয়া যাবে না। ছোট চারা ও ফুল-ফলবর্তী গাছের গোড়ায় পানি দিলে ফলের পরিমান বেশী হয়।


ফল সংগ্রহ ও ফলন ঃ বেল গাছে সাধারনত ৭-৮ বছর বয়সে ফল ধরে তবে অঙ্গজ চারা থেকে ৪-৫ বছরে ফল ধরে। মার্চ-এপ্রিল মাসে গাছে ফুল এলে পরের বছর ফেব্রয়ারি মাসে ফল পাকে। অনেক সময় জুন-জুলাই মাসেও পাকা ফল পাওয়া যায়। তবে সারা বছরই কম-বেশী বেল পাওয়া যায়। ফলের খোসার বর্ণ হরুদ হলে বুঝতে হবে বেল পেকেছে, তখন গাছ থেকে বেল পেড়ে বাজার জাত করতে হবে। পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছ থেকে বছরে প্রায় ২৫০-৩০০ টি বেল পাওয়া যায়।


পোকা ও রোগ দমন ঃ বেলে মারাত্মক কোন পোকা দেখা যায় না। তবে জ্যান্থোমোনাস নামক জীবানুর আক্রমণ মরিচা পড়া রোগ দেখা যায়। কপারজাতীয় ছএাক নাশক দ্বারা এ রোগ দমন করা যায়।

লেখক ঃ ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক প্রধান, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান), রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কেন্দ্র, সিরাজগঞ্জ।

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *