Site icon

বেশি লাভের কারনে বিনা চীনাবাদাম-৪ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

বিনা চীনাবাদাম-৪ চাষে কৃষকদের আগ্রহ

মোঃ মোশারফ হোসেন (শেরপুর):

বিনা চীনাবাদাম-৪ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। চাষের অনুকূল অবস্থা থাকা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশে খুব অল্প পরিমাণ জমিতেই চীনাবাদাম চাষ করা হয়। যদিও খাদ্য-পুষ্টি, তেল, পশুখাদ্য, খইল, সার, শিল্পের কাঁচামাল প্রভৃতি বিবিধ উদ্দেশ্যে চীনাবাদাম ব্যবহৃত হয়। নদীর তীরবর্তী অনুর্বর পতিত জমিতে অন্যকোন ফসল ভালো না হলেও, বাদামের ফলন ও লাভ বেশি হওয়ায় এ তৈলজ ফসল চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। অনাবাদি জমিতে, কম পরিশ্রমে, বেশি উৎপাদন হওয়ায় ও চাহিদা অনুযায়ী দাম পাওয়া স্বত্ত্বেও কৃষকরা চীনাবাদাম চাষ কম করতেন।

তবে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিউিট (বিনা) কর্তৃক উদ্ভাবিত এবং জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত বিনা চীনাবাদাম-৪ পরীক্ষা মূলক ভাবে চাষে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এই বাদাম চাষে ঝুঁকছেন। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী বিনা উপকেন্দ্রের আওতায় নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে বাদাম চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা। তার অংশ হিসেবে এবছর বিনা চীনাবাদাম-৪ চাষে কৃষকদের আগ্রহ লক্ষণীয়।

নকলা উপজেলার চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা, চন্দ্রকোণা, টালকী ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের এবং নালিতাবাড়ীর কলসপার ইউনিয়নসহ বিভিন্ন নদীর তীরবর্তী এলাকার কৃষক বাদাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য এলাকার কৃষকরাও চীনাবাদাম চাষে তিনগুণ হারে ঝুঁকছেন। তবে বিনা চীনাবাদাম-৪ চাষে কম খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ায়, অন্যজাতের পরিবর্তে বিনা চীনাবাদাম-৪ জাতের বাদাম চাষে তাদের আগ্রহ বেশি।

ডিএই এবং বিনা উপকেন্দ্র অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নকলা উপজেলায় ১৩০ থেকে ১৩৭ একর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে; যা গেল বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আর নালিতাবাড়ীতে বাদাম চাষের পরিমাণ এবছর খুব কম হলেও, আশার বিষয় হলো আগামীতে ওই উপজেলায় তিন-চারগুণ বেশি আবাদ হতে পারে বলে তারা আশা করছেন। এরমধ্যে নালিতাবাড়ীর বিনা উপকেন্দ্রের আওতায় নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় প্রথম বারের মতো ৩ একর জমিতে ৯ টি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ফসল কর্তন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ফসল কর্তন মাঠ দিবসে গিয়ে দেখা যায় একর প্রতি ফলন হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ মন। বর্তমান বাজার খুচরা প্রতিমন ৪ হাজার ২০০ টাকা থেতে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। সে হিসাব মতে, প্রতি একরে এক লাখ ৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ২৪ হাজার ৮০০ টাকার চীনাবাদাম পাচ্ছেন কৃষকরা। আর পাইকারী বিক্রি কিছু কম হলেও, অন্যকোন আবাদে ওই পরিমান আয় করা অসম্ভব।

নকলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের চরভাবনা ব্লকের রেহাই অষ্টধর গ্রামের বাদাম চাষী তাফাজ্জল হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম এবং নালিতাবাড়ীর কলসপার ইউনিয়নের উত্তর নকশী ব্লকের চাষী মুন্সী আব্দুল করিমসহ অনেক বাদাম চাষী জানান, বাদাম ক্ষেতে প্রতি একরে ইউরিয়া ৩০ থেকে ৪০ কেজি, টিএসপি ৮০ থেকে ৮৫ কেজি, এমপি ৩৫ থেকে ৪৫ কেজি, জিপসাম ৪৫ থেকে ৫৫ কেজি প্রয়োগ করা উত্তম। ক্ষেতে জমিতে ঘাস হলে জমির জো বুঝে দুই একটি নিড়ানি ও ২-৩টি সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এই এলাকায় দেশি বিদেশী বিভিন্ন জাতের বাদাম চাষ হলেও মাইচচর বাদাম (ঢাকা-১), বাসন্তী বাদাম (ডিজি-২), ঝিংগাবাদাম (এসসি-১২), বারিবাদাম-৮, ডিএম-১ জাতের বাদাম বেশি চাষ করা হত। এবছর (২০১৮ সাল) থেকে বিনা চীনাবাদাম-৪ চাষ করবেন বলে জানান কৃষকরা।

বিনা উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ সামিউল হক জানান, বিনা চীনাবাদাম-৪ জাতটি বছরের রবি এবং খরিপ দুই মৌসুমে আবাদ করা যায়। রবি মৌসুমের জীবন কাল ১৪০ দিন থেকে ১৫০ দিন এবং খরিপ মৌসুমের জীবন কাল ১০০ দিন থেকে ১২০ দিন। বিনা উপকেন্দ্র, শেরপুরের ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসরীন আখতার জানান, বিনা চীনাবাদাম-৪ জাতটি ২০০৮ সালে ঢাকা-১ (মাইচচর) জাতের বীজে গামারশ্মি প্রয়োগ করে উদ্ভাবন করার পরে, জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এ জাতের বাদামে দানার শতকরা হার ৭৬% থেকে ১০০% এবং মাতৃ জাতের তুলনায় ১৫% থেকে ৩০% ফলন বেশি হয়। বীজ উৎপাদনের হার প্রতি হেক্টরে ১২৫ কেজি থেকে ১৩০ কেজি এবং গড় ফলন রবি মৌসুমে ২.৬ টন ও খরিপ মৌসুমে ২.৪৭ টন। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক আগ্রহী হয়েছেন বলে তিনি জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর বলেন, এটি তৈলবীজ হিসেবে সুপরিচিত হলেও এর যথেষ্ট ঔষধি গুন রয়েছে। বাদাম চাষ বাড়াতে পারলে এটি কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। সে লক্ষে নদীর তীরবর্তী ও অনাবাদি জমিতে বাদাম চাষ করতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Exit mobile version