বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে ক্ষেত খামারে করণীয় (১৪-২০ এপ্রিল)

বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে ক্ষেত খামারে


নাহিদ বিন রফিক

আজ পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরের প্রথম দিন। শুভ নববর্ষ। পেছনের সব গ্লানি মুছে যাক। প্রসারিত হোক অনাবিল সুখ। সবার প্রতি এ কামনা। এবার আসি কৃষি সমাচারের কথায়। এখন মাঠফসল, উদ্যানফসল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সবখানেই ব্যস্ততা। তাই জেনে নেই কৃষিভুবনের সেসব কাজগুলো।

বোরো ধান: যেসব স্থানে একটু দেরিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে, সেখানকার জমিতে গাছের বয়স ৫০-৫৫ দিন হলে ইউরিয়ার শেষ কিস্তির উপরিপ্রয়োগ করা দরকার। ফুল আসলে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হয়। আর দানা শক্ত হলে পানি বের করে দিতে হবে। ক্ষতিকর পোকা হতে বোরো ধান রক্ষা করার জন্য প্রতিদিন জমি পরিদর্শন করা দরকার। পোকার উপস্থিতি দেখা দিলে দমনের ব্যবস্থা নেয়া বাঞ্ছনীয়। যারা জমিতে ডাল পুঁতে দিয়েছেন। সেখানে পোকাখেকো পাখি এসে অনিষ্টকারী পোকগুলো খেয়ে ফেলবে। জাল দিয়ে এবং আলোক ফাঁদ পেতেও পোকা মারা যায়। এসব উপায়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ না হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার জরুরি। ধানের রোগ দেখা গেলে সঠিক বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

গম: গম সংগ্রহের পর মাড়াই, ঝাড়াই শেষে রোদে ভালোভাবে শুকাতে হয়। এরপর ঠান্ডা করে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

ভুট্টা: জমিতে রসের অভাব দেখা দিলে ভুট্টার ক্ষেতে হালকা সেচ দিতে হবে। চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে ইউরিয়ার উপরিপ্রয়োগ করা দরকার। এর আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে।

পাট: পাট বপনের উপযুক্ত সময় এখন। যে জাতের বীজ ব্যবহার করা হোক না কেনো বপনের পূর্বে অবশ্যই শোধন করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিকেজি বীজে ৪ গ্রাম হারে ভিটাভেক্স ব্যবহার করতে হয়। বিকল্প হিসেবে ১৫০ গ্রাম রসুন পিষে বীজের সাথে ভালোভাবে মেশানোর পর তা শুকিয়ে জমিতে বপন করতে হবে। উপকূলীয় এলাকা লবণসহিষ্ণু জাত বিজেআরআই দেশী পাট-৮ বোনা যাবে। এর ফলনও বেশ ভালো।

শাকসবজি: গ্রীষ্মকালীন সবজি যেমন: ডাঁটা, পুঁইশাক, কলমিশাক, ঢেঁড়শ, পটল, বেগুন, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, শসা, করলা, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়ার বীজ বপন করা যেতে পারে। টমেটোর ক্ষেত্রে বারি টমেটো-৫, বারি টমেটো-৬, বারি টমেটো-১০, বারি টমেটো- ১১, বিনা টমেটো-১, বিনা টমেটো -২ চাষ করা যাবে।

ফল: আমে ফলছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হতে পারে। প্রতিরোধ হিসেবে বাগান পরিষ্কার করতে হবে। মরা ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। পোকার আক্রমণ হলে সুমিথিয়ন ৫০ ইসি বা ফেনথিয়ন ৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। এখন নারকেলের চারা লাগানো যেতে পারে। গাছ হতে গাছের দূরত্ব হবে ৪০-৪৫ ফুট। গর্তের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা হবে ১ ফুট করে। চারা লাগানোর ১০-১২ দিন পূর্বে গর্তপ্রতি ১৫ কেজি জৈব সার, ৭৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫৫০ গ্রাম এমওপি এবং ৫০০ গ্রাম জিপসাম মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এসময় খাটো জাতের নারকেল লাগানো যাবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্ন এবং সার ব্যবস্থাপনা।

মৎস্য: মাছের পোনা ছাড়ার জন্য অবশ্যই পুকুর প্রস্তুতি করে নিতে হবে। এজন্য শতাংশপ্রতি ১ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। পুকুর শুকনো থাকলে এর তলদেশে গুঁড়া করা চুন ছিটিয়ে নিতে হবে। তবে পানি থাকলে চুন রাতে ভিজিয়ে সকালে গুলে সমস্ত পুকুরে ছিটাতে হয়।

প্রাণিসম্পদ: হাঁস-মুরগির ও গবাদিপশুর রোগ প্রতিরোধে টিকা দিতে হবে। ওদের জন্য প্রয়োজন আরামদায়ক বাসস্থানের ব্যবস্থা, সে সাথে দরকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ।

প্রিয় পাঠক, এবার বিদায়ের পালা। আগামী সপ্তাহে আবারও ফিরে আসবো কৃষির কথামালা নিয়ে। সে পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকুন। ভালো থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *