কৃষিবিদ ড. এম এ মজিদ
আমাদের দেশে মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবস্যা। আধুনিক প্রযুক্তি ও যথাযত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাছ চাষ বাড়ানো সম্ভব । কিন্তু বাংলাদেশে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতি পূুণ্র্ এলাকা হওয়ায় মানুষের জন্য দানাদার খাদ্য শস্যের চাহিদা মেটাতে যেয়ে ব্যাপক আকারে মাছ চাষ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।তাই খাল, বিল, নদী, পুকুর, ডোবা প্রভৃতি জলাশয়ের সাথে ধান ক্ষেতে মাছ চাষ করতে পারলে দেশে পুষ্টির চাহিদা পুরণ হবে এবং অপর দিকে ধান চাষিও লাভবান হবে । আমাদের দেশে বছরে অধিকাংশ সময় পানি থাকে বা সেচ সুবিধা আছে এমন নিচু ধানী জমিতে মাছ চাষ করা যেতে পারে । এতে ধানের কোন ক্ষতি হয় না বরং কৃষক বেশী লাভবান হয়। ধান ক্ষেতে মাটি, পানি, সার, গোবর প্রভৃতির সংমিশ্রণে প্রাকৃতিক ভাবে যে খাবার তৈরী হয় তা মৎস্য উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী ।
ধানক্ষেতে মাছ চাষের সুবিধা ঃ(১)একই জমি থেকে একই সময়ে ধান ও মাছ দুটি ফসল পাওয়া যায়। (২) মাছের চলা চলে ধান ক্ষেতে আগাছা ও পোকামাকড় কম হয়।(৩) মাছের বিষ্টা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। (৪) কর্ম সংস্থান বৃদ্ধি পায়। (৫) মাছকে সম্পূরক খাদ্য দিতে হয় না। (৬) মাছের নড়াচড়াতে ধানের ফলন বৃদ্ধি পায়।
ধানক্ষেতে মাছ চাসের ধাপ গুলি নিন্মে দেয়া হল ঃ
(১) বাঁধ নির্মান ঃ ধান ক্ষেতের চার পার্শ্বে উচু পাড় নির্মান করতে হবে যেন বর্ষা কালে পানি ক্ষেতের বাহিরে বা ভিতরে চলাচল করতে না পারে। (২) গর্ত খনন ঃ ক্ষেতের পানি কমে গেলে কিংবা পানি গরম হলে মাছ গুলি ঠান্ডা পানিতে থাকতে পারে তাই প্রতি শতকরা দুই থেকে তিন ভাগ জমিতে দুই তিন ফুট গভীর গর্ত করতে হবে। জমিতে পোকার আক্রমন বেশী হলে কীটনাশক প্রয়োগের সময় এ গর্ত ব্যবহার হতে পারে। (৩) পানি নির্গমন নালা তৈরী ঃ এমন ভাবে নালা তৈরী করতে হবে যেন বর্ষা কালে জমিতে পানি বেশী হলে অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়া যায়। (৪) জাল বা বানা ব্যবস্থা ঃ অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হলে জাল বা বানা দিতে হবে যাতে মাছ চলে না যায়। (৫) জমি চাষ ও চারা রোপন ঃ স্বাভাবিক ভাবে জমিতে চাষ ও মই দিয়ে এবং প্রয়োজনমত সার দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে ২০-২৫ সেঃমিঃ দুরে সারি করে ১৫-২০ সেঃমিঃ ফাঁকে চারা রোপন করতে হবে।
(আ) পোনা মজুদ ঃ
ধান রোপন করার ১৫-২০ দিন পর যখন কুঁশি বের হওয়া শুরু হয় তখন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ যেমন – তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, মিরর কার্প, রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, চিংড়ি ইত্যাদি পোনা মজুদ করা যেতে পারে। তবে যে মাছ দ্রুত বড় হয় সেগুলি উপযোগী। সকাল বা পড়ন্ত বিকেলে পোনার পাত্র কিছুক্ষণ আধা ডুবন্ত অবস্থায় ক্ষেতের পানিতে রেখে কিছু পানি পোনার পাএের ভেতর ঢোকাতে হবে এবং পোনার পাত্র কাত করলে আস্তে আস্তে ধান ক্ষেতের মধ্যে চলে যাবে।
মাছের প্রজাতি নির্বাচন ও পোনা মজুদহার:
মাছের জাত ও আকারের উপর পোনা মজুদহার নির্ভর করে। ধান ক্ষেতে একর প্রতি পোনা মজুদ হারের একটি তালিকা মোটামুটি নিম্নরূপ হওয়া উচিত ।
(ক) কমন কার্প ,মিরর কার্প ,সিলভার কার্প প্রতি একরে (মিশ্র/একক ভাবে)১৩০০-১৬০০ টি মাছ ।
(খ) রুই,কাতলা,মৃগেল,কালবাউস প্রতি একরে ১০০০-১২০০ টি মাছ।
(গ)তেলাপিয়া,নাইলোটিকা,সরপুটি, প্রতি একরে ২০০০-৩০০০ টি মাছ।
(ঘ)চিংড়ি(প্রতি একরে)্৫৫০০-৭৫০০ টি মাছ।
(ঙ) চিংড়ি ও মিশ্র-১৬০০-২০০০ চিংড়ি+৬০০-৮০০ টি সরপুটি +১৫০-২০০ টি রুই/কাতলা।
মজুদ পরবর্তী পরিচর্য়া
এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে ধানের পোকা মাকড় মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়।কিন্তু মাছের দ্রুত বৃদ্ধি চাইলে মাছের ওজনের (মোটামুটি)শতকরা ৫ ভাগ পরিমাণ চালের কুড়া,গমের ভুষি,খৈল প্রভৃতি দেয়া যেতে পারে।
মাছ আহরণ:-
মাছ ছাড়ার কিছু দিন পর মাছ বড় হলে অথবা জুলাই- আগষ্ট মাসে ক্ষেতের পানি কমে গেলে বা পরিবেশের পরিস্তিতি অনুসারে বেড় জাল দিয়ে সব মাছ আহরণ করা উচিত। সঠিক ভাবে মাছ চাষ করলে প্রতি একরে (১০০ শতাংশ) ৩০০-৪০০ কেজি মাছ পাওয়া যেতে পারে।
——————-
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম