দেশীয় মলা মাছ হতে পারে পুষ্টি ও আয়ের অন্যতম বড় উৎস

দেশীয় মলা মাছ

কৃষি সংবাদ ডেস্কঃমলা মাছ

দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে খালবিলের অতি পরিচিত একটি মাছ মলা। প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় বসতবাড়ির পুকুরে এই মাছ চাষ করে কৃষিনির্ভর পরিবারের পুষ্টির অভাব পূরণ সম্ভব। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এই মাছ চাষ পারিবারিক আয়ের একটি বড় উৎস হতে পারে। সব মিলিয়ে মলা মাছ চাষ হতে পারে টেকসই উন্নয়নের হাতিয়ার।

সমপ্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের কিছু এলাকা নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে। ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এই মাছটি মানব দেহের নানা রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষিনির্ভর ২ কোটিরও বেশি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ভিটামিন এ, আয়রন এবং জিঙ্কের অভাবে ভুগছে। যাদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। ফলে শিশুদের শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের গঠন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

দেশটির নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর কাছে সাশ্রয়ী মূল্যের প্রধানতম খাদ্য ভাত। তবে এই ভাত পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণে সমর্থ নয়। এ অবস্থায় গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির পুকুরে অন্যান্য মাছের সঙ্গে মলা চাষ পুষ্টি এবং পরিবারের আয়ের একটি ভালো উৎস হতে পারে। একই সঙ্গে গ্রাম্য অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

যশোরে মলা মাছ চাষের উপর একটি প্রকল্প পরিচালনা করেছে ‘সেন্ট্রাল সিস্টেম ইনিশিয়েটিভ অব সাউথ এশিয়া ইন বাংলাদেশ’ নামের একটি সংস্থা। এই সংস্থার অর্থায়নে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদে পরিচালিত প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল, গ্রামাঞ্চলের কৃষিনির্ভর পরিবারের পুষ্টির অভাব পূরণের মাধ্যমে খাদ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপশি পারিবারিক আয়ের ভালো উৎস নিশ্চিত করা।

এই প্রকল্পের সহায়তায় নিজ বাড়ির পুকুরে অন্যান্য কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে মলা মাছ চাষ করছেন যশোরের জগাহাটি গ্রামের তাছবিনা বেগম। তিনি বলেন, এই প্রকল্প গ্রহণের আগে আমরা সপ্তাহে একবার মাত্র মাছ খেতে পারতাম। কারণ পরিবারের অন্যান্য আবশ্যিক চাহিদা মিটিয়ে পর্যাপ্ত মাছ কিনে খাওয়া অনেকটা অসম্ভব ছিল। এখন আমরা শিখেছি কিভাবে অন্যান্য মাছের সঙ্গে মলা চাষ করতে হয়। এই নারী আরও জানান, এখন আমরা খাওয়ার পাশাপাশি মাছ বাজারে বিক্রিও করতে পারছি। সপ্তাহে দুবার মাছ ধরা হয়। প্রথম বছর শেষে মাছ বিক্রি করে ২১ হাজার টাকা আয় হয়েছে বলেও তিনি জানান ।

প্রসঙ্গত, মলা অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ মাছ। এই মাছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন রয়েছে। মলা মাছ বিল হাওর-বাওড়, নদী, ধানক্ষেত, পুকুর ও ডোবায় পাওয়া যায়। প্রান্তিক মৎস্য চাষীরা পুকুর-ডোবা ও অন্যান্য জলাশয়ে সাধারণত রুই জাতীয় মাছ চাষ করে থাকেন। তারা মলা জাতীয় ছোট মাছকে অবাঞ্চিত মাছ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। অথচ এখন পর্যন্ত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই প্রাণিজ আমিষের জন্য নির্ভর করে থাকেন মলাসহ অন্যান্য ছোট মাছের উপর।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *