Site icon

মিষ্টি লাউ চাষে সফলতা এসেছে আবু রায়হানের

মিষ্টি লাউ চাষে

মিষ্টি লাউ চাষে

মো. মোশারফ হোসাইন, শেরপুর প্রতিনিধি:

মিষ্টি লাউ চাষে ঃ রাজধানী ঢাকার মতো স্থানে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর পরিচিতি পাওয়ার পরেও কৃষি কাজ করাতো দূরের কথা, কৃষি মাঠে যাওয়ার কথা নয়; অথচ শেরপুরের নকলা উপজেলাধীন চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বাছুরআলগা গ্রামের আবু রায়হান শামীম তাঁর বাবার ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় স্বনামধন্য নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্যের উপর রেখে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। যে জমিতে কয়েক বছর আগেও কোন ফসল উৎপাদন সম্ভব এমন চিন্তাও কেউ করেনি। শামীম এমন পতিত জমিতে ফলাচ্ছেন সোনার ফসল।
২০১৭ সালে উপজেলার রামপুর এলাকায় বছরে প্রতি একর পতিত জমি ৩০ হাজার টাকা করে, ৪ একর জমি এক লাখ ২০ হাজার টাকায় চুক্তি নিয়ে শামীম কৃষি কাজের যাত্রা শুরু করেন। এ ৪ একর জমি তিনি ১০ বছরের জন্য লিখিত চুক্তি করে নেন। সম্পূর্ণ পতিত জমিতে কৃষি কাজ শুরু করায় প্র্রথম দিকে এলাকার অনেকে তার কৃষি কাজ করা নিয়ে হাসাহাসি করতেন। কেউ কেউ বলতেন- এলাকায় টাকা ওয়ালা হয়েছেনতো, তাই জনগনকে দেখাতে শহর ছেড়ে গ্রামে আসছে কৃষি কাজ করতে! কিছুদিন পরে আবার ঢাকাতেই ফিরে যেতে হবে বলে অনেকে মন্তব্য করতেন। কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে তারাই এখন সফলতা দেখে শামীমের মতো পতিত জমিতে বিভিন্ন শস্য ও শাক সবজি আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
শামীম মিয়া জানান, তিনি মূলত সীডলেস লেবুর বাগান করার জন্য ১০ বছরের জন্য ৪ একর জমি চুক্তি নিয়েছেন। তবে লেবু গাছ গুলো এখনও ফলন দেওয়া শুরু না করায় এবং বড় না হওয়ায়, লেবু গাছের ফাঁকে ফাঁকে মিষ্টি লাউ, করলা ও বিভিন্ন জাতের মৌসুমী শাক-সবজি চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। এতে করে বছরের নির্ধারিত জমি লিজ নেওয়ার টাকা উঠে আসছে বাড়তি এসব আবাদের আয়েই।
তার দেওয়া তথ্য মতে, প্রতি বছর তার লেবু বাগানে করা সাথী ফসল থেকে অন্তত লাখ টাকা বাড়তি আয় করছেন। তাছাড়া নিজের পরিবার ও স্বজনদের শাক সবজির চাহিদাও মিটছে তার এ বাগান থেকেই। প্রধান আবাদ লেবু এখনও বাজার জাত করা শুরু না হলেও, লোকসান হচ্ছেনা। যদিও জমি লিজ বাবদ খরচ বাদেও প্রথম বছর (২০১৭ সাল) জমি তৈরী, বেড়া দেওয়া, শ্রমিক খরচসহ বিভিন্ন ভাবে খরচ বেশি হওয়ায় বেশ লোকসান গুনতে হয়েছিলো তার। তবে পরের বছর থেকে লাভ না হলেও, আপাতত তাকে লোকসান গুনতে হচ্ছেনা।
তিনি জানান, চলতি শীত মৌসুমে তার লেবু বাগানের দেড় একর জমিতে মিষ্টি লাউ, ৫০ শতাংশ জমিতে করলা, ৪০ শতাংশ জমিতে লাল শাক চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছেন। এখন চলছে লাউ ও করলা বিক্রির ধুম। তিনি প্রতিটি মিষ্টি লাউ ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করছেন। আর খুচর হিসেবে ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা করে বিক্রি করছেন। তাছাড়া প্রতি মৌসুমে ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ জমিতে বছরে ৪ থেকে ৬ বার শাক চাষ করেন, এতে প্রায় অর্ধলাখ টাকা লাভ হয়। প্রতিদিন কোন না কোন এলাকার পাইকার তার মাঠ থেকে শাক-সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য স্থানীয় চন্দ্রকোনা, রামপুর ও রৌহা বাজার, শেরপুর সদর বাজার, নালিতাবাড়ী, নকলা, ময়মনসিংহের পিয়ারপুর ও নুরুন্দী বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন। এতে করে শামীমকে তার উৎপাদিত ফসল বাজার জাত করার জন্য বাড়তি চিন্তা করতে হচ্ছেনা, পাশাপাশি তার ক্ষেতের শাক সবজি বিক্রি করে, তা থেকে লাভের টাকায় সংসার চলছে অন্তত ১৫ ব্যবসায়ীর। তার ক্ষেতে শ্রম বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন স্থানীয় ৫-৭ টি দরিদ্র পরিবার।
তার বাগানে লেবু উৎপাদন শুরু হলে খরচ বাদে শুধু লেবু থেকেই বছরে ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন। তাছাড়া পরিকল্পনা মোতাবেক সাথী ফসল চাষ করলে তা থেকে বছরে অন্তত লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে তিনি জানান। তার বাগানের চারপাশে দেশীয় জাতের পেঁপে রোপন করেছেন। এখানে উৎপাদিত পেঁপে বিক্রি করা সম্ভব না হলেও, নিজের পরিবার ও স্বজনদের চাহিদা মিটানো সম্ভব হচ্ছে।
এবিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, শামীম একজন আদর্শ কৃষক। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকে পতিত জমিকে কাজে লাগাতে বিভিন্ন শস্য ও ফসলের আবাদ শুরু করে লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, এ এলাকার মাটি দোআঁশ হওয়ায় লেবু, লাউ ও বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদের জন্য উপযোগী। তাই যেকেউ চাইলে পতিত জমিতে লেবু, লাউ ও বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এতে বাড়বে স্বাবলম্বীর সংখ্যা, কমবে বেকারত্ব, বাড়বে আত্মনির্ভরশীলতা।

Exit mobile version