ডা.মোঃমোস্তাফিজুর রহমান
মুরগীর পেটে পানি জমা
মুরগী পালন একটা লাভজনক এবং জনকল্যাণমূলক পেশা।মানুষের আমিষের চাহিদা পুরণ করার একটা অন্যতম মাধ্যম।মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করা অবশ্যই একটা পুন্যময় কাজ। আর এই কাজ যারা করেন তারা সব সময় বিভিন্ন চিন্তার মধ্যে পেরেশান থাকেন।বিশেষত মুরগীর রোগের কারনে তাদের চিন্তার পরিমান বেড়ে যায়।আর বাড়বেই না কেন এর ফলে যে খামারে অনেক মুরগী আক্রান্ত হয়, মারাও যায় অনেক। একটা ব্যপক লোকশানের ভয় করতে থাকেন সবসময়। মুরগীর বিশেষত ব্রয়লার মুরগীর অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে এমন রোগ গুলোর মধ্যে এসসাইটিস বা পেটে পানি জমা একটি অন্যতম রোগ। এই রোগের ফলে মুরগী মারা যায়, দেহের ওজন কমে যায়, সেই রোগে আক্রান্ত মুরগীর চাহিদাও বাজারে কমে যায়। আর শীত কালে তুলনামুলক অতি ঠান্ডার কারণে এই রোগ বেশি দেখা যায়।
তাই আসুন আমরা এই রোগ সম্পর্জকে জেনে নিয়ে খামারে এই রোগ যেন না হয় এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করে নিজেদের পাশাপশি দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ পাবো।
এসসাইটিস বা ওটার বেলি হচ্ছে এমন একটা অবস্থা যা অতিরিক্ত পরিমানে পানি বা তরল পদার্থ জমা হয় মুরগীর শরীরে। এটা কোন সংক্রমক রোগ নয় ,বিভিন্ন পারিপার্শিক কারণে এই রোগের বিস্তার হয় এবং খামারে ক্ষতি সাধিত হয়। শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় অক্সিজেনের ঘাটতি হলেও এই রোগ হতে পারে। ব্রয়লার শিল্পে অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয় এটাকে।মারাত্বক অবস্থায় শতকরা ২৫ টি করে মুরগী মারা যাওয়ারও তথ্য রয়েছে।এটা কেবল মাত্র ব্রয়লার মুরগিতেই বেশি দেখা যায়।
রোগের কারণঃ এই রোগের নানা কারণের সমন্বয়ে হয়ে থাকে-
দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধিঃ বর্তমানে ব্রয়লার মুরগীতে এর প্রভাব বেশি কারণ অল্প সময় খুব বেশি পরিমান বৃদ্ধি সাধিত হয়।দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মাংশপেশিতে প্রচুর পরিমানে অক্সিজেনের সরবরাহ প্রয়োজন।আর এই জন্যই অক্সিজেনের ঘটতি হলে এই রোগ হয়ে থাকে।
যথেষ্ট বায়ুচলাচলের অভাবঃ অতিরিক্ত লাভের আশায় এক স্থানে বেশি পরিমান মুরগি লালন পালন করা হয়।এর ফলে সহজে খামারের গ্যাস বের হয়ে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ বাতাস আসতে পারেনা।ফলে অক্সিজের ঘাটতি দেখা যায়।
ঠান্ডা অবহাওয়াঃ বিশেষত শীতের দিনে পরিবেশ বেশ ঠান্ডা থাকে আর এর ফলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়। কুয়াশার চাদরে ঢাকা শিতের দিনে মুরগীকে রক্ষার জন্য যে প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেয়া হয় তাতে পর্যাপ্ত্বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকেনা।ফলে অক্সিজেনের ঘটতি এই সময়েই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
অতিরিক্ত পুষ্টিকর ফিড খাওয়ানোঃ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাওয়ানো হয়।ফলে তা মেটাবলিজমের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়।
গাদাগাদি করে থাকাঃ গাদাগাদি করে থাকার ফলে বেশি ঘটতি দেখা যায় সব কিছুর।তাই এই রগ হোটে পাড়ে।
ডিমে তা দিতে সমস্যা হলেও এই রোগ হতে পারে।
এমোনিয়া গ্যাস বেশি উৎ্পন্ন হলে-শীতের দিনে শেডের সাথে বাইরের পরিবেশ বেশি বায়ুচলাচল হয় না। যার ফলে মুরগির বিষ্ঠা হতে উৎপন্ন আমোনিয়া নামক ঝাঝালো গ্যাসটা শেড থেকে দূর হয়না।আর এই বিষাক্ত গ্যাস থাকার কারনেও এই পেটে পানি জমা রোগ হয়ে পারে।
সোডিয়ামের বিষক্রিয়া দেখা দিলে
ভিটামিন ই বা সেলেনিয়াম এর ঘাতটি দেখা দিলে।
মাইকোটক্সিকোসিস হলে-বিভিন্ন ধরনের খাবারের বীষক্রিয়া দেখা দিলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
ধকল হলে।
রোগের লক্ষণঃ
১. হঠাত করে মারা যায়.
২. মুরগীর মারা যাওয়ার সময়টা বেশি হয় ২৮ দিনের পর থেকে।আর সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ৩৫-৪২ দিন বয়সের মুরগীর ক্ষেত্রে। তাছাড়া এই রোগ ১৫ দিনের পর থেকেও লক্ষ করা যায়।
৩. আক্রান্ত পাখি সাধারণ পাখির চেয়ে ছোট,বিষণœ এবং পালক ছড়নো ছিটানো দেখা যায়।এর এটা বৃদ্ধি থেমে যাওয়ার কারণেই দেখা যায়।
৪. মাথা দেখতে ফ্যাকাশে এবং টপ কুচকিয়ে যায়।
৫. পাখি নড়াচড়া না করে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
৬. অতিমাত্রায় আক্রান্ত মুরগীর পেট ফুলে থাকতে দেখা যায়।
ময়না তদন্তঃ মুরগির চিকিৎসার ক্ষেত্রে মুরগি কেটে নিশ্চিত হতে হয়।আর এই রোগে আক্রান্ত মুরগী কাটলে নিম্নোক্ত কারণ দেখা যায়-
চামড়া সরানোর পরেই প্রচুর তরল পদার্থ দেখা যায়।
পেটের আশেপাশে/ এবডোমিনাল ক্যাভিটিতে বেশি পরিমানে হলদে তরল পদার্থ দেখা যায়।এমনকি ৩০০ মিলি র ও বেশি তরল পাওয়া যায়।
হার্ট এর সাইজ অনেক বড় হয়ে যায়।
হার্টের আবরণের নিচেও এই ধরনের ফ্লুইড দেখা যায়।
লিভার বা যকৃত ফুলে যায়।
ফুসফুস খুবই সংঙ্কোচিত এবং পানি পুর্ণ হয়ে যায়।
কিছু কিছু মুরগী এই এসসাইটিস বৃদ্ধি পাওয়ার পুর্বেও মারা যায়।
চিকিৎসা: এই রোগের তেমন খুবই কার্যকর চিকিৎসা নেই।শুধু মাত্র অনুসংগিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
এক্ষেত্রে কেবল মাত্র ফ্রুসামাইড(ঋৎঁংধসরফব) গুপের ওষধ দেয়া যায় ,যাতে এর প্রভাব কমে আসে অনেকাংশে।
ভিটামিন সি(ঠরঃধসরহ ঈ) ,ভিটামিন ই(ঠরঃধসরহ ঊ) এবং সেলেনিয়ামের(ঝবষবহরঁস) সরবরাহ বাড়ালে এই মৃত্যুর হার কমানো যায়।
নিয়ন্ত্রনঃ কিছু বিষয় খেয়াল করলে এর প্রভাব কমানো যায়-যথা
খুব বেশি খাবার না দিয়ে পরিমান কত খাবার সরবারহ করা।
পোল্ট্রি শেডে পর্যাপ্ত আলো বাতসের ব্যবস্থা করা।
শিত কালে ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করার মাধ্যমে মুরগীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখা।
শেডে যেন আমোনিয়া গ্যাস বেশি না জমা হয় সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা।
ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়ামের পরিমান ফিডে বৃদ্ধি করা।
এই বিষয়গুলো খেয়াল করে পোল্ট্রি খামার করলে নিজে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখা যাবে বলে আশাকরি।
লেখক পরিচিতিঃ
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক
ডিভিএম, মাস্টার্স ইন পাথোলজি
ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষপ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,দিনাজপুর