মেয়াদউত্তীর্ণ কমিটিতেই চলছে
বাকৃবি প্রতিনিধি:
মেয়াদউত্তীর্ণ কমিটিতেই চলছে : আজ রবিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের ৩ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর ১ বছরের জন্য শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন মো. সবুজ কাজী ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মিয়া মোহাম্মদ রুবেল, সহসভাপতি হিসেবে আনোয়ারুল হক ও এসএম আনিসুজ্জামান জনি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নুর এ আলম তপন ও মামুন আল মনসুর এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ফয়সাল আহমেদ সোহান ও শেখ মাহমুদুর রহমান কে নিয়ে আংশিক কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
এক বছর পর ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের ২১১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ওই কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে ৩৮ জন, যুগ্ম সম্পাদক পদে ৯ জন, সাংগাঠনিক সম্পাদক পদে ৯ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর বিভিন্ন দফায় দফায় হল কমিটির অনুমোদন দেয় বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগ। ২৬ জুলাই ২০১৮ সালে ছেলেদেও ৯টির মধ্যে ৫টি হলে (শাহজালাল, ফজলুল হক, ঈশা খাঁ, শহীদ নাজমুল আহসান ও আশরাফুল হক) হলের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৬ জুন পূর্ণাঙ্গ হল কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই হল কমিটিতে ঈশা খাঁ হলে ৭৪ জন, শহীদ জামাল হোসেন হলে ৬২জন, শাহজালাল হলে ৬৯জন, নাজমুল আহসান ৬২ জন, শহীদ শামছুল হক হলে ৭৮ জন, আশরাফুল হক হলে ৮২ জন, হোসেন শহীদ সোহারাওয়ার্দী হলে ৭৩ জন, ফজলুল হক হলে ৮০ জন, সুলনানা রাজিয়া হলে ৬ জনসহ সব হলে মিলিয়ে প্রায় ৭শ জনকে হল কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রায় ৯ শতাধিক পদধারী নেতা রয়েছে।
এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ২ বছর আগে। দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসায় বর্তমান কমিটির অধিকাংশ নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও কোন্দল দেখা দিয়েছে। নতুন কমিটিতে পদ পাবার আশায় গ্রুপিং রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই। এ নিয়ে প্রায়ই ঘটছে হাতাহাতি ও মারামারি।
বিশাল কমিটিতে শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে চলতি বছরের ৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জামাল হোসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি দীপক হালদারকে সালাম না দেয়ায় গভীর রাত পর্যন্ত হলের কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করে মাকসুদুল হক ইমু নামের এক শিক্ষার্থীকে। ইমু বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিশ শাফি, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শাওন এবং পাঠাগার সম্পাদক মো. রাহাত হোসেন রাত ১টার দিকে ওই শিক্ষার্থীকে হলের পূর্ব ব্লকের ৫ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। পরে তারা হল সভাপতিকে সালাম না দেয়ার কারণ জানতে চান এবং তাকে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটান।
গত সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ও শহীদ শামসুল হক হলে ছাত্রলীগের বর্তমান পদধারী ছাত্র নেতাদের সাথে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর আগে এ বছরের মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কে.আর মার্কেটে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন আহত হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের গেস্টরুমে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রলীগ কর্মী প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। এতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা গেস্টরুমে যেতে অপারগতা জানান। নেতৃত্ব না মানায় দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্ষিপ্ত হন। ওই সময় হলের ব্লকে উভয়পক্ষের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
গত বছরের ২৪ শে মার্চ শনিবার বাকৃবির কে.আর. মার্কেটে দুপুরে টায় বাকৃবি ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর নেতৃত্বে বাকৃবির ছাত্রলীগের নেতৃত্ব প্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তায়েফুর রহমান রিয়াদ ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম তপন ও উপ- সম্পদক ইশতিয়াক ঈসানসহ প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। এছাড়াও মাদক, সিট বাণিজ্য, র্যাগিং, গেস্টরুম-শোডাউন কালচারসহ বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি শাখা ও ইউনিটের মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়েছে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি। খুব শিগগির সম্মেলন করে নতুন কমিটির ঘোষণার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।