যাদুভোগ আমের যাদুতে লাখপতি ভোলাহাটের আমচাষী আব্দুস সালাম

যাদুভোগ আমের যাদুতে লাখপতি

যাদুভোগ আমের যাদুতে লাখপতি

 

মো. মোশারফ হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি:

যাদুভোগ আমের যাদুতে লাখপতি

চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার সন্দ্রাবাড়ি গ্রামের আমচাষী আব্দুস সালাম নাবী জাতের যাদুভোগ আমের যাদুতে লাখপতি হয়েছেন। তার সংসারে সুদিন ফিরে এসেছে। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই এই নাবী জাতের আম বাগানে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

১৪ কি ১৫ বছর আগে প্রথমে সালাম একটি যাদুভোগ আমের চারা রোপন করেন। রোপনের ৩/৪ বছর পর থেকেই তিনি ওই আম গাছ থেকে ফলন পেয়ে আসছেন। ফলনের ধরন, ফলের আকার, রং, স্বাদ, গন্ধ, মিষ্টতা, সংরক্ষণ গুণ ও দাম বিবেচনায় এই আমে লাভ বেশি পাওয়ায় তিনি এই জাতের আমের বাগান বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহন করেন। পরে ওই গাছ থেকেই কলম করে বর্তমানে ১৮ বিঘা জমিতে রোপন করা পাঁচশতাধিক যাদুভোগ আম গাছের মালিক। এই বাগান থেকে উপার্জিত আয়ে তার সংসার ও ছেলে মেয়ের পড়া-লেখার খরচ বাদে বছরে লক্ষাধিক টাকা সঞ্চয় থাকে।

ফলের আকার, রং, স্বাদ, গন্ধ, মিষ্টতা, সংরক্ষণ গুণ বেশি; এছাড়াও এর মিষ্টতা (টিএসএস) ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশের অন্যান্য সুস্বাদু আমের চেয়ে এই আমের ভক্ষণযোগ্য অংশ বেশি, শতকরা ৮০ থেকে ৮২ শতাংশ। কেউ কেউ বলেন যাদুভোগ আম চাষে কৃষকরা যাদুর মত লাভবান হচ্ছেন। এইসব বিবেচনায় অনেকেই এই আমের বাগানের দিকে ঝুঁকছেন।

আব্দুস সালাম জানান, যাদুভোগ আম মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগষ্ট পর্যন্ত সময়ে পাকে। এসময় অন্যান্য আম শেষ হয়ে যাওয়ায় দাম বেশি পাওয়া যায়। সে আরও জানায়, প্রতিবছর তিনি সিলেটে মণ প্রতি ৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা করে নাবী জাতের এই যাদুভোগ আম পাইকারী বিক্রি করে থাকেন। এতে অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হচ্ছেন তিনি। এবছর দুই লক্ষাধিক টাকার যাদুভোগ আম বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি ধারনা করছেন।

১৭ জুলাই মঙ্গলবার উপজেলার সন্দ্রাবাড়ি গ্রামের আমচাষী আব্দুস সালামের বাড়ীতে নাবী জাতের এই যাদুভোগ আমের পরিচিতি করন সভা অনুষ্ঠিত হয়। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এবং কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের সার্বিক সহযোগিতায় ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ পুলের অন্যতম সদস্য এম. এনামূল হক, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক (ডিডি) ড. মো. সাইফুর রহমান, জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার ড. কে. জে. এম. আব্দুল আওয়াল, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শরিফুল ইসলাম, উদ্যানতত্ববিদ মো. মাহমুদুল হাসান, জার্মপ্লাজম অফিসার মো. জহুরুল ইসলামসহ স্থানীয় কৃষক-কৃষানী, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাংবাদিকগন উপস্থিত ছিলেন। পরে গাছ থেকে সরাসরি আম পেড়ে খাওয়ার পরে মূল্যায়ন পর্বে উপস্থিত সবাই যাদুভোগ আমের প্রশংসা করেন এবং চাষীদের এই জাতের আম বাগান করার পরামর্শ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *