শাহ এমরানঃ
স্বপ্ন ডেইরি এন্ড ফিসারিজ
অফিস শেষ করে সন্ধ্যার সময় ৩ বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতে দিতে আলোচনা করছিলাম একজন নতূন উদ্যোক্তা কি করে একটা ডেইরী ফার্ম শুরু করতে পারে। এত সুন্দর সুন্দর কথা আলোচনা হলো ভাবলাম লিখে ফেললে মন্দ নয়। ওনারা ৩ জনই পাখাল। পাখাল মানে কি বুঝেছেন? মানে যারা পাখী পুষে। এখন তারা রাখাল হবে!!! সব গুলো সুপার টেলেন্টটেড পোলাপান এবং বাংলাদেশের টপ মোস্ট ইন্সটিটিউশনে জব করে। তো শুনেই বুঝে ফেললাম, এগুলো সব শখের জন্যই করা। তবে শখ করতে গিয়ে লোকসানের সম্মুখীন হওয়া এটাও আবার লজ্জাজনক পরিস্থিতি। তাই একটু হিসাব নিকাশ করেই আগানোর পরিকল্পনা সবার। আলোচনা করছিলাম একজন নতূন উদ্যোক্তাকে কি কি বিষয় বিবেচনা করতে হবে ফার্ম শুরু করার আগে ও পরে। এটা যে সহজ কোন ব্যাপার নয় তা কিছুটা হলেও বোধগম্য হবে। আলোচনার কিছু অংশ তুলে ধরলাম।
ফার্ম শুরু করার আগে প্রাথমিক কিছু কাজ আছে যা ভালভাবে জেনে বুঝে তারপর শুরু করা উচিত: যেমন-
১) দুধের দাম কত: দুধ কত করে কেজি বা লিটার বিক্রি হচ্ছে আপনার এরিয়াতে তা জানতে হবে। ৩০-৪০ টাকা দাম হলে ফার্মকে লাভবান করা কস্টকর। যত বেশী দাম পাওয়া যাবে তত লাভ।
২) দুধ বিক্রি করবেন কি করে: আপনার ফার্মের দুধ বিক্রি করবেন কি করে? গোয়ালা এসে কি দুধ দোয়ায়ে নিয়ে যাবে, নাকি আপনাকে বাজারে বা মিস্টির দোকানে গিয়ে বিক্রি করতে হবে? নাকি নিজেই দুধ দিয়ে মিস্টি ঘি বানাবেন?
৩) ঘাস চাষের ব্যবস্থা কি: ঘাস চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত জমি আছে কিনা? যদি থাকে তাহলে কি ঘাসের চাষ করা যাবে, নেপিয়ার নাকি জার্মান? চাষের জায়গা কি উচু না নিচু? বর্ষায় কি পানি জমে থাকে? পানি জমে থাকলে নেপিয়ার ঘাস করা যাবেনা। আবার বছরে ৩-৪ মাস বর্ষায় ডুবে থাকলে জার্মান ও করা যাবেনা। তাহলে উপায় কি ১২ মাস ঘাস পেতে হলে? ডেইরী ফার্ম করে লাভবান হতে হলে ১২ মাস ঘাস পেতে হবে।
৪) সরকারী ডাক্তার বা পশু হাসপাতাল: পশু হাসপাতাল বা ডাক্তার নিকটবর্তী আছে কিনা, যদি না থাকে তাহলে যে ভোগান্তি হবে এর সমাধান কি করে করবেন, আশে পাশে ওষুধের দোকান আছে কিনা, ভাল দক্ষ এ আই কর্মীদের পাওয়া যায় কিনা।
৫) গরুর খাবার সহজলভ্যতা: গো-খাদ্যের পাইকারী দোকান আছে কিনা, কাছে না থাকলে কত দূরে, সেখান থেকে পরিবহন খরচ কেজি প্রতি কত করে পড়বে, খাবারের দাম কেমন এবং কি কি কেমন মানের খাদ্য পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে দাম হিসাব করলে কেজি প্রতি গরুর খাবারের দাম কেমন আসে।
৬) অভিজ্ঞ কর্মচারী সহজলভ্যতা: অভিজ্ঞ কর্মচারী কোথা থেকে জোগাড় করবেন, কত বেতন দিতে হবে, যে বেতন দিবেন তাতে কয়টি গরু কিনে দিলে পোষাবে, যে কয়টা কিনলে ব্রেক ইভেনে থাকবে সেই কয়টা গরু কেনার এবং বাড়তি যে টাকা লাগবে তা হাতে আছে কিনা, দুধ যে দোয়ায় সেই কর্মচারী কাল যদি বলে চাকরী করবোনা তাহলে ফার্ম চালাবেন কি করে।
এখন ধরে নিলাম সব প্রশ্নের উত্তর পজিটিভ পেলেন। এখন আপনি ফার্ম শুরু করবেন সিদ্ধ্যান্ত নিয়েছেন। এরপর দ্বিতীয় পর্যালোচনায় আসা যাক:
৭) গরুর সেড তৈরী: সেড কিভাবে তৈরী করবেন, গরু কি ছেড়ে পালবেন নাকি গলায় দড়ি দিয়ে, ডিজাইন কেমন হবে, আধুনিক ব্যবস্থা কি কি থাকবে, কতটা আধুনিকায়নের মধ্যে আনলে কর্মচারী বেতন খরচ কম হবে, কিভাবে লালন পালন করলে সহজভাবে কম শ্রমিক দিয়ে ফার্ম পরিচালনা করা যাবে। খাবার পাত্র, ইলেক্টিক লাইন, পানির ব্যবস্থা থাকবে কেমন।
৮) ভাল জাতের গরুর জোগাড়: কোথা থেকে ভাল জাতের গরু পাবেন, দাম কেমন হবে, কি করে বুঝবেন যে কোনটা ভাল জাতের গরু এই ফটকা বাজারে, কোন জাতের গরু কেনা ভাল হবে ডেইরী ফার্মের জন্য আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। কেউ তো ভাল গরু বিক্রি করে করেনা তাহলে ভাল গরু পেতে হলে কি করতে হবে? জাত উন্নয়ন করবেন কি করে?
৯) পর্যাপ্ত মূলধন: সর্বপরি সেড এবং গরু কেনার টাকা জোগাড় হবে কি করে, আপনি কি ব্যাংক লোন নিবেন প্রথমেই, নাকি নিজের মূলধনের অর্ধেক এখন বিনিয়োগ করবেন নাকি পার্টানারশীপ করবেন, ভবিষ্যতে যে সব ঝুকির সম্মুখীন হতে হবে তার জন্য পর্যাপ্ত টাকা হাতে আছে কিনা,
১০) সব শেষ এবং অতি গুরুত্তপূর্ন: আপনি শুধু লাভ করার জন্য এই ব্যবসা করতে চান নাকি ভাললাগা আর ভালবাসার আছে, আপনার ধৈর্য আছে কিনা কঠিন সমস্যা মোকাবিলা করে লেগে থাকার মত।
যদি মনে করেন ধৈর্য কম, দ্রুত লাভ চান, রোদ মাঠ গাছ পালা, গোবরের গন্ধ, চাষাভুষা লোকজন ভালো লাগবেনা, মন টানেনা…. তাহলে অবশ্যই এই ব্যবসাতে আসবেন না। যারা বিদেশে আছেন যদি মনে করেন দেশে এসে কর্মচারীদের মত নিজে কাজ করতে পারবেন যেমন বিদেশে গিয়ে কস্ট করেন তাহলে এই ব্যবসাতে লাভ অবশ্যই হবে।
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম