যারা নতুন গরুর খামার করতে ইচ্ছুক তাদের জন্যে জানা আবশ্যক

ক্ষুদ্র দুগ্ধ খামারিরাই

নতুন গরুর খামার

রাজিব কায়েস 

নতুন গরুর খামার ঃ যারা মনে মনে ভাবছেন ডেইরি বা মোটাতাজা করণের খামার করবেন, তাদের বলছি, দয়া করে এই খাতে বিনিয়োগ করবেন না। হয়তো বিনিয়োগের ৬০ ভাগ পুঁজি হারিয়ে ফেলবেন। বিস্তারিত বললাম না, তবে ৮/৯টি সমস্যা আপনার সামনে ফারাক্কার বাঁধের মত হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

নানাজন নানান পরামর্শ দিবে, ট্রেনিং দিবে, সহযোগিতাও করবে, কিন্তু আসল সত্য বলবে না। কোনো কোনো বড় ভাই ৩ টাকার সাইলেস আপনার কাছে ১০ টাকায় বিক্রি করবে। আপনি যখন হাঁপিয়ে উঠবেন সেই সুপরামর্শ দাতা বড়ভাই-ই আপনার দামি গরু গুলো পানির দরে কিনতে চাইবে। অথবা মাসিক বেতনে খামার পরিচালনের দায়িত্ব নিতে চাইবে। আমিও স্বপ্ন নিয়ে এসেছি। নতুনরা বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে এই খাতে আসছে , তাদেরকে সত্য তথ্য দেওয়া উচিত।

তবে সবাই ব্যর্থ হয় না, ৮০ ভাগই হয়। বিশেষজ্ঞ ভাইদের কাছে অনুরোধ নতুনদের সত্যটা বলুন, তারা বুঝতে শুনে পা ফেলুক। আমি ২৫ লাখ বিনিয়োগ করে ফেলেছি, পালানোর পথ বন্ধ, তাই সফল হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবো।

দুয়েকটি সমস্যার কথা বলি। যেমন, রাখাল অগ্রিম টাকা নিয়ে পালাবে, বা বেতন পেলেই পালিয়ে যাবে। এবার ভাবুন রাখাল পালিয়ে গেলে দুধ দহন করবেন কাকে দিয়ে??? এরপর নতুন করে রাখাল খুঁজবেন, অন্য রাখাল কাজে আসার জন্যে আপনার থেকে অগ্রিম টাকা নিবে, তার পরেই ফোন বন্ধ করে দিবে। ঐ নিলো আর এলো না দিলোও না।

সামাল দিতে পারবেন তো? সারা বছর স্বপ্ন নিয়ে গরু লালন পালন করে মোটাতাজা করলেন। কিন্তু কোরবানির বাজারে ধস নামতে পারে। তখন সফল খামারিগণ পানির দরে আপনার গরু কিনে নিবে। দুধ বিক্রিতেও হিমালয়তূল্য সমস্যায় পড়তে পাবেন। তবে আল্লাহর রহমতে আমি দুধ বিক্রিতে সমস্যায় পড়িনি। ভালো ডাক্তার পাবেন না। কিছু ডাক্তার হয়রানি মূলক চিকিৎসা করবে। বারবার গরু মরার ভয় দেখাবে। গরু মরার ভয় দেখিয়ে সামান্য রোগে ৩/৪ হাজার টাকা খরচ করাবে। ৫/৭ বার বীজ দিয়েও গাভী পেগনেন্ট হবে না। ভিটাফস, এডিই, জিঙ্ক, দিতে দিতে হয়রান হতে পারেন। আমি কচুরিপানা, খুদের ভাত ও ফিড না দিয়ে, দৈনিক ২০ কেজি কাঁচা ঘাস দিয়েছি তবুও সমস্যায় পড়েছি। লাইমস্টোন, ডিসিপি, লবন, খনিজ-লবন, খাইসোডা, রুমেনই, সয়ামিলসহ ১৩ পদ দিয়ে নিজে দানাদার খাবার তৈরি করছি। এরপরেও স্যালাইন ক্যালসিয়ামের দীর্ঘ তালিকা উদয় হবে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। এর চেয়েও বড়-বিষয় গরু ক্রয়ের ক্ষেত্রে দালালদের খপ্পর এই বিষয়ে কিছুতো বললামই না। অতএব নতুনরা বুঝে শুনে পা ফেলুন।

আমি নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। আমার খামার ঢাকাতে। এই রাক্ষুসী-করনার দূর্দিনেও ৮০ টাকা কেজি দুধ বিক্রি করছি। তবুও গত মাসে ৩ হাজার টাকা লস। আমার ৯টি গাভি আছে, আর ৪/৫টি ক্রয় করলে হয়তো লাভের সাথে দেখা হবে। বাকিটা আল্লাহপাক জানেন।

লেখকঃ নতুন খামারি , দুধেরবাড়ি ডেইরি ফার্ম, মোহাম্মদপুর ঢাকা।

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *