কৃষকের বাজার
কৃষি সংবাদ ডেস্কঃ
কৃষকের বাজার : নিরাপদ শাক-সবজি নিয়ে রাজধানীতে চালু হলো ‘কৃষকের বাজার’। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ’র সেচ ভবন প্রাঙ্গণে কৃষকের বাজার উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এখন থেকে প্রতি শুক্র ও শনিবার দুদিন সকাল ৭টা থেকে বসবে এ বাজার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সরাসরি ব্যবস্থাপনায় নিজের ক্ষেতের ফসল বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। নিরাপদ উপায়ে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এ বাজার স্থাপন করা হয়।
‘কৃষকের বাজার’ উদ্বোধনকালে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষকের বাজারে যে কৃষকরা অংগ্রহণ করেছেন তাদের আমরা গত এক বছর ধরে প্রস্তুত করেছি। সম্পূর্ণরূপে কীটনাশকমুক্ত সবজি এখানে নিয়ে আসছেন তারা। আজকের এ বাজারকে একটা ছোট্ট মডেল হিসেবে উপস্থাপন করছি। এটি একটি পাইলট প্রজেক্ট। যদি সফল হয় আস্তে আস্তে আগামী বছরে দেখবেন অনেক চাষিরা এরকম নিরাপদ খাদ্য তৈরি করবে এবং তারা বাজারজাতও করতে পারবে। আজকের এ বাজারের সফলতার উপর ভিত্তি করে আগামীতে আরো বড় করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এরকম বাজারের আয়োজন করা হবে এবং সারা বছর যেন এ বাজার চালু থাকে, তার সুব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছি যে মানুষকে আমরা নিরাপদ ও পুষ্টিজাতীয় খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করবো। সে লক্ষ্যে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিজাতীয় খাদ্য কিভাবে উৎপাদন করা যায়, সেটি দেখানোর জন্য আজকে আমরা ‘কৃষকের বাজার’ খুলেছি। ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি মানুষ এ ছোট্ট বাজার থেকে তো আর সবার চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। আমাদের চাষীরা আমাদের তত্ববধানে নিরাপদ শাক-সবজি উৎপাদন করেছে। তারা সবাাই বলছে আমরা ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করেছি, আমরা কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করি নাই। পোকামাকড় দমনের জন্য কোন ওষুধ ব্যবহার করি নাই। এ ম্যাসেজটা আজকের ‘কৃষক বাজারে’র মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে দিতে চাচ্ছি। এরকম বাজার প্রতিটা উপজেলায় ও ইউনিয়নে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে দেয়া হবে।
সবজির দামের বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শীতকালীন সবজির বাজার কেবল শুরু হয়েছে আস্তে আস্তে দাম কমে যাবে। আর এখন সবজির দামও বেশি। বর্তমানে শ্রমিকদের মজুরিও অনেক বেশি, সে প্রেক্ষিতে কিছুটা দাম বাড়ছে। এ চাষীতো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদ্রে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তাদের ঘাম-রক্তকে ফসলে রুপান্তরিত করে। আমাদেরকেও চিন্তা করতে হবে যে, যারা কোন ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল ব্যবহার না করে, নিরাপদ শাক-সবজি উৎপাদন করছে তার দাম তো একটু বেশিই হবে। আর এমনিতেই বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই আগাম শস্যের দাম একটু বেশি থাকে। তবে আজকের এ বাজার মূল্য দেশের অন্য বাজার মূল্যের চাইতে খুব একটা বেশি নয়। সবজির দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে এরকম বাজার করতে কৃষকদের সহযোগীতা দেয়া হবে। আর এজন্য আমাদেরকে আগে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চালের বাজার বর্তমানে নিয়ন্ত্রন করার কোন দরকার নাই। দেশে পর্যাপ্ত পরিমান চাল রয়েছে এবং চাল নিয়ে কারো উদ্বেগ প্রকাশ করার কোন কারন নাই। বাংলাদেশের এখন ৫০ ভাগ মানুষের জীবিকা আসে কৃষি থেকে। আর এজন্য তাদেরকে নায্যমূল্য দিতে হবে।
পেঁয়াজের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পেয়াজ সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায় যে, নতুন পেয়াজ এখনও পরিপক্ক হয় নাই। নির্দিষ্ট সময়ের আগে উত্তোলন করলে তাতে পচন ধরে যাবে। পেঁয়াজ নিয়ে বানিজ্য মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা করছে। আমরা ভেবেছিলাম ভারত থেকে পেয়াজ আসবে, কিন্তু পেয়াজ আরো আমদানি করতে হয়েছে। ভারত পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় এই পেয়াজ বিপর্যয় হয়েছে। বর্তমানে আমরা অনেক উদ্যোগ নিয়েছি পেয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এখনও ৬০-৭০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। তাদের মূল জীবিকা কৃষি। সে কৃষির যদি উন্নয়ন না হয় তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে ন। দানা জাতীয় খাদ্যেও ক্ষেত্রে আমরা এখন উদ্বৃত্ত অবস্থায় আছি। ২০০৯-১০ সালেও ৪০-৫০ মিলিয়ন ডলারের শাক-সবজি খাদ্য রপ্তানি হতো। এ বছরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলারের শাক-সবজি খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানী হয়েছে। আমাদের রপ্তানীর প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০-১১ ভাগ। কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রে রপ্তানীর প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত অর্থবছরে ৩৪ ভাগ। আজকের এ কৃষিক্ষেত্রে সফলতার পেছনে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, জনদরদীর কারনে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ‘কৃষকের বাজার’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ড. সিম্পসন প্রমুখ।