নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান, ১৮/৯/১৬ তারিখঃ আজ বান্দরবানের রামেরিপাড়া, ম্রলংপাড়া ও পর্যটন চাকমা পাড়ায় কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সি আর পি হিল এগ্রিকালচার এর উদ্যোগে পৃথক পৃথক তিনটি মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সাস্টেইনেবল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, কম্পোনেন্ট-২ কর্তৃক আয়োজিত ‘রাসয়নিক সার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতি বছর একই পাহাড়ে জুমচাষ গবেষণা শীর্ষক’ মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ও দেশের খ্যাতিমান মৃত্তিকা বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মোঃ জহির উদ্দীন।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, দিন দিন পাহাড়ে জনসংখ্যা বাড়ছে, আর আবাদযোগ্য পাহাড়ি জমি কমে যাচ্ছে। এই বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে একই পাহাড়ে কম বিরতি দিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে, যদিও আগে ১০-১৫ বছর পর পর একই পাহাড়ে জুম চাষ করা হত। এতে পাহাড়ে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলনও হচ্ছে কম। তিনি আরো বলেন, রাসয়নিক সার প্রয়োগের মাধ্যমে পাহাড়ে চাষাবাদ এখন আবশ্যক হয়ে পড়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত যে, পাহাড়ে যদি পরিমিত মাত্রায় রাসয়নিক সার ব্যবহার করা হয় তবে একই পাহাড়ে প্রতি বছর চাষাবাদ করা সম্ভব। আর ফলন ও পাওয়া যায় অধিক। তিনি জুম চাষিদের রাসয়নিক সার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতি বছর জুম চাষ করার আহবান জানান।
মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বান্দরবানের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আলতাফ হোসেন। জনাব আলতাফ হোসেন বলেন, পাহাড়িদের আদি পেশা জুম চাষ। জুম চাষ পাহাড়ি জনসাধারণের জীবন-জীবিকা ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে,আর বাড়তি জনসংখ্যার চাপে জুম চাষ হারিয়ে যেতে বসেছে। আর ফলনও কমে যাচ্ছে,এ অবস্থায় কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন থেকে জুম চাষিদের যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে তাকে আমি স্বাগত জানাই। তিনি পাহাড়িদের জুম চাষের পাশাপাশি মাটি সংরক্ষণের প্রতি আন্তরিক হবার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাস্টেইনেবল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, কম্পোনেন্ট-২ এর টিম লিডার ও বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. এ. জে. এম. সিরাজুল করিম। তিনি তার বক্তব্যে ।সাস্টেইনেবল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পাহাড়ে জুম চাষের কারনে মাটির উর্বরতা যেমন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে তেমনি মাটির অস্বাভাবিক হারে মাটির ক্ষয় হচ্ছে। এটা রোধ করে জুম চাষ কে সার্থক ও লাভবান করার লক্ষ্যে আমরা জুম চাষিদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দিয়ে রাসয়নিক সার ও কীট নাশক ব্যবহার করে একই পাহাড়ে প্রতি বছর জুম চাষ করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করে যাচ্ছি। উপস্থিত জুম চাষিদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আপনারা স্বাক্ষী রাসয়নিক সার দিলে একই পাহাড়ে প্রতি বছর জুম চাষ করা সম্ভব আর ফলনো ভালো হয়। তিনি সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও সি আর পি হিল এগ্রিকালচার এর প্রিন্সিপ্যাল ইনভেষ্টিগেটর ড.অলক কুমার পাল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর সাবেক পরিচালক (তৈল বীজ) ড. শওকত আলী মল্লিক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর ঊর্ধবতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও সি আর পি হিল এগ্রিকালচার এর প্রিন্সিপ্যাল ইনভেষ্টিগেটর কৃষিবিদ মোস্তাক আহাম্মেদ, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট বান্দরবানের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মাহাবুবুল ইসলাম ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পিএইচডি গবেষক কৃষিবিদ মোঃ নূরুল হুদা আল মামুন প্রমূখ। অনুষ্ঠানে শতাধিক জুম চাষি ছাড়াও বান্দরবানের বিভিন্ন কৃষি অফিসের গন্য মান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
পরে জুমচাষে স্থানীয় ‘ককরো’ জাতের ধানে সারের চাহিদা নিরুপনের উপর পিএইচডি গবেষণা প্লট পরিদর্শন করেন উপস্থিত জুমচাষি,আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ ও সাংবাদিক বৃন্দ। পিএইচডি গবেষক কৃষিবিদ নূরুল হুদা আল মামুন জানান, স্থানীয় জনপ্রিয় ‘ককরো’ জাতের ধানে জুম চাষিরা সাধারনত কোন সার ব্যবহার করেন না। সেক্ষেত্রে কোন সার ব্যবহার না করে (কন্ট্রোল), ১০০ ভাগ অনুমোদিত মাত্রায় সার, ১২৫% মাত্রায় সার ও ১৫০% মাত্রায় সার ব্যবহার করলে ফলনের তারতম্য পর্যবেক্ষণ করা এবং তা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কিনা তা যাচাই করার উদ্দেশ্যে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায় সার ব্যবহার না করা (কন্ট্রোল) প্লটের চেয়ে সার ব্যবহার করা প্লটে ফলন হয়েছে অন্ততঃ ৩০-৪০ % বেশি।
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম