-কৃষিবিদ মোঃ সিরাজুল ইসলাম
১। অরুচিতে ঃ সাধারণতঃ কিছু দিন রোগে ভোগার এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে পুদিনার শরবত (পুদিনার রস) ২ চা-চামচ, সামান্য লবণ মরিচ চূর্ণ এক টিপ, কাগজী লেবুর রস ৮-১০ ফোঁটা ও হালকা গরম পানি ২৫০ গ্রাম একত্রে মিশিয়ে সকালে একবার ও বিকালে একবার; এই ভাবে ৫-৭ দিন খেলে অরুচি চলে যাবে। এছাড়া পুদিনা পাতা বেটে পানিতে গুলেও শরবত করা যায়। সে ক্ষেত্রে কাঁচা পাতা ৮-১০ গ্রাম নিতে হবে। পুদিনা পাতার চাটনি একাধারে ৮-১০ দিন খেলেও অরুচি কমে যাবে।
২। পেট ফাঁপায় ঃ এক্ষেত্রে পুদিনার শরবত উপরোক্ত পদ্ধতিতে সারাদিনে ২-৩ বার করে কয়েক দিন খেলে পেটে বায়ু জমা বন্ধ হবে এবং খাদ্য রুচিও ফিরে আসবে এবং হজম শক্তিও বৃদ্ধি পাবে।
৩। বমিতে ঃ পিত্ত, শ্লেষ্মাজ্বর , অম্লপিত্ত, আমাশয়, অজীর্ণ, উদরশূল প্রভৃতিতে বমি হতে পরে, আবার রোদে ঘোরাফেরা করে ঠান্ডা পানি খেলে এবং খালি পেটে থেকে পরিশ্রম করলে বমি হবার সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষেত্রে পুদিনার শরবত (পুদিনার পাতা ৮-১০ গ্রাম বেটে তাতে পুরাতন তেঁতুল ১ চা-চামচ, সামান্য একটু চিনি ও লবণ এবং পানি ২৫০ গ্রাম একত্রে মিশিয়ে) দিনে ২-৩ বার করে কয়েকদিন খেলে বমি সেরে যাবে।
৪। মূত্রাল্পতায় ঃ যেক্ষেত্রে গরমের ফলে অল্প অল্প করে প্রস্রাব হতে থাকে, কোন কোন সময় সে সঙ্গে জ্বালাও থাকে, সেক্ষেত্রে পুদিনার পাতা ৮-১০ গ্রাম ভালভাবে বেটে তাতে সামান্য লবন ও কাগজী লেবুর রস এবং পোয়াখানিক ঠান্ডা পানি মিশিয়ে শরবতের মতো করে দিনে ২-৩ বার খেতে হবে। এর ফলে পস্রাব সরল হবে। তারপর এ সমস্যার জন্য মাঝে মাঝে খেলেও প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকবে।
৫। মুখের বিস্বাদে ঃ টাটকা পুদিনা পাতা, শুকনো খেজুর (ছুহারা), গোল-মরিচ, লবণ, হিং, জিরা ও কালো আঙ্গুর পরিমাণ মতো মিশিয়ে একসাথে পিষে চাটনি তৈরী করুন। এতে পাতিলেবুর টাটকা রস মিশান। এই চাটনি খেলে মুখে রুচি আসবে, মুখের বিস্বাদ দূর হয়ে খাওয়ার ইচ্ছা হবে, বায়ুজনিত অস্বস্তি দূর হবে, হজম শক্তি বাড়বে, শরীরের নিস্তেজ ভাব দূর হবে।
৬। পেটের বায়ু দূর করতে ঃ পুদিনা পাতা , তুলসীপাতা, গোলমরিচ ও আদা পরিমান মতো একসঙ্গে মিশিয়ে পিষে নিয়ে জলে সেদ্ধ করে, একটা ঘন ক্বাথ তৈরী করুন। এই ক্বাথ চামচে নিয়ে অল্প একটু জিহ্বা দিয়ে চেটে অন্তত: ৪ বার করে ৩ দিন খেলে পেটের বায়ু দূর হবে ও খুব ক্ষিদে পাবে।
৭। সাইনাসে ঃ টাটকা পুদিনা পাতা পিষে বা থেঁতো করে রস বের করে নিন। অন্যথায় পুদিনার আরক করে নিন। এই রস কফ, সর্দি, কপালে সাইনাসের কারণে জমে যাওয়া ঘন সর্দিও বের করে আনবে। প্রতিদিন ১ চামচ করে ২ বার এবং প্রায় ১৫-২০ দিন খাবেন।
৮। পুরাতন সবিরাম জ্বরে ঃ টাটকা পুদিনাপাতা ও তুলসীপাতা একসঙ্গে পিষে জলে মিশিয়ে পাত্র ঢাকা দিয়ে , ঘন ঝোল বা ক্বাথ তেরি করুন। প্রতিদিন যে জ্বর কোনও একটা বিশেষ সময়ে একটানা বহু দিন ধরে আসে এই ক্বাথ প্রতিদিন ২-৩ বার করে অন্তত: সপ্তাহখানেক খেলে জ্বর সারবে।
৯। টাইফয়েড সারতে ঃ পুদিনাপাতা, সবুজ তুলসী ও তুলসীর রস এক সঙ্গে মিশিয়ে থেঁতো করে নিন। এতে স্বল্প চিনি মিশিয়ে অল্প করে দিনে ৪ বার খাবেন। কিছুদিন খেলেই জ্বর চলে যাবে।
১০।নিউমোনিয়াতে ঃ পুদিনাপাতা, টাটকারস অল্প মধুর সঙ্গে মিশিয়ে , প্রতি দু’ঘন্টা পরপর ১ চা চামচ করে খাওয়ালে ত্রিদোষজ্বর অর্থাৎ নিউমোনিয়া রোগীর অনেক বিকার দূর হবে এবং জ্বরও তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
১১। অন্ত্রের দুবর্লতায় ঃ পুদিনা পাতায় টাটকারস মধু মিশিয়ে খাওয়ালে অন্ত্রের দুবর্লতা ও পেটের অসুখ সারে। যারা বহুদিন ধরে আন্ত্রিক গোলযোগে ভুগছেন তাদের পক্ষে টাটকা পুদিনা পাতার রস খাওয়া অমৃতের মতো উপকারী।
১২।সংক্রমন প্রতিরোধে ঃ যখন কলেরা ও আন্ত্রিক রোগ প্রবলভাবে ছড়িয়ে মহামারীর রূপ নেয় , তখন টাটকা পুদিনা পাতার রসে মধু ও পাতিলেবুর রস মিশিয়ে শরবত তৈরী করে খেলে সংক্রনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
১৩। তীব্র পেটের ব্যথায় ঃ পুদিনা পাতার রস ১ চা চামচ ও আদার রস ১ চা চামচ একসাথে মিশিয়ে তাতে অল্প লবণ দিয়ে এই রস দিনে ২-৩ বার খেলে তীব্র পেটের ব্যথা (উদরশূল) সেরে যাবে।
১৪। পুদিনা পাতার আরও ব্যবহার ঃ
ক.দাদের উপর বার বার পুদিনাপাতার রস লাগালে উপকার পাওয়া যাবে।
খ.নাকের ভেতর পুদিনা পাতার রসের ১-২ টি ফোঁটা ফেললে সর্দি সারে।
গ.পুদিনা পাতা চিবিয়ে বিছার কামড়ের জায়গায় লাগালে কামড়ের কষ্ট বা ব্যথা দূর হবে।
ঘ.পুদিনা পাতা পুড়িয়ে সেই ছাই দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়।
ঙ.মধুর সঙ্গে পুদিনা পাতার রস মিশিয়ে খেলে শরীরের জমে হ্যা কা ক্লেদ ঘা হয়ে বেরিয়ে যায়।
চ.মধুও লবণ মিশিয়ে পুদিনা বাটা খেলে (খালি পেটে) কৃমি সারে।
ছ.কফ সর্দিজ্বর ও কুষ্ঠ রোগের বিপক্ষে পুদিনা পাতা উপকারী।
জ.পুদিনা পাতা কচলে নিয়ে শুঁকিয়ে দিলে মুর্চ্ছা রোগে উপকার হয় ।
ঝ.পুদিনাপাতা সেদ্ধ করে বেটে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে পায়ের গোদের উপকার হয়।
ঞ.বৈজ্ঞানিক গবেষণা মতে ঃ পুদিনা পাতায় ভিটামিন-এ বেশি পরিমাণে আছে। ভিটামিনের গুণের
দিক থেকে দেখলে পুদিনাকে পৃধিবীর সমস্ত রোগ থেকে রক্ষাকারী একটি ঔষধি বা জড়ি-বুটির মতো উপকারী উদ্ভিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। পুদিনাতে ক্ষিদে বাড়াবার শক্তি আছে খুব বেশি পরিমাণে। রূচি বৃদ্ধিতে এর তুলনা বিরল। পুদিনা খেলে সম্ভোগ শক্তিও বাড়ে। পুদিনার আরক বা নির্যাসে জোয়ানের আরকের প্রায় সব গুণই আছে।
হাকিমি বা ইউনানি মতে ঃ পুদিনা বমি ও হেঁচকি ওঠা বন্ধ করে। পাকস্থলী, বুকে ও কিডনির যাবতীয় গ্লানি ও ক্লেদ দূর করে।
আয়ুর্বেদ মতে ঃ পুদিনা স্বাদ ও খাওয়ার রুচি বাড়ায়, খিদে বাড়ায়,বল বৃদ্ধি করে, হার্ঢের পক্ষে ভাল, মনে ও শরীরে সুখের আমেজ আনে, অত্যধিক মলত্যাগ ও মূত্রাবেগ থামায়, কফ ও বাত হরণ করে। কাশি, উম্মত্ততা, অখিদে,হজীর্ণ বা বদহজম, পেটের অসুখ, একটানা পুরানো পেটের অসুখ, পুরনোজ্বর ও আন্ত্রিক রোগ সারায়। কৃমিও অরুচিনাশ করে, বমি থামিয়ে দেয়। পুদিনার চাটনি যেমন খেতে মুখরোচক তেমনি হজমেও সাহায্য করে। পুদিনা পাতা খেলে মেয়েদের ঋতু পরিস্কার হয়।
পুদিনা চা ঃ পুদিনার পাতা, দুধ,চিনি, গোলমরিচ ও মৌরি গরম পানিতে দিয়ে এই চা তৈরি করতে হবে। এই চা খেতে সুস্বাদু এবং খেলে তৃপ্তি হয়। শরীরের পক্ষে পুষ্টিকর ও হিতকর পানীয়। খিদে ও পরি পাক শক্তি বাড়ায়। স্বাস্থের পক্ষে ভাল এবং সব দিক থেকে উপকারী। পুদিনা পাতার বহুবিদ গুণের কারণে একে অজীর্ণহর, শোক শোভন, সুগন্ধিপত্র ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।
শোক শোভন, সুগন্ধিপত্র ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম