Site icon

লকডাউনে ঘরে বসেই মোজারেলাচিজ তৈরির কৌশল

মোজারেলাচিজ তৈরি

মোজারেলাচিজ তৈরি

প্রফেসর ড. আব্দুল গাফ্ফার মিয়া

মোজারেলাচিজ তৈরি : করোনার আগ্রাসন থেকে নিরাপদে থাকতে ঘরে থাকুন, আর ঘরে থেকেই গরু বা মহিষের দুধের সুস্বাদু মোজারেলা চিজ তৈরি করে ফেলুন। চিজ বা পনির এক ধরনের অতি সুস্বাদু দুগ্ধজাত খাবার যাতে রয়েছে উন্নত মানের আমিষ (কেজিন), শর্করা, সহজপাচ্য স্নেহ পদার্থ, খনিজ উপাদান, ইত্যাদি। গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার দুধ থেকে এটি তৈরি করা হয়। এটি দুধের প্রধান প্রোটিন কেজিন থেকে তঞ্চন বা জমাট বাঁধার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় দুধে এনজাইম (রেনেট) যোগ করার ফলে দুধের কেজিন জটবদ্ধ হয়ে ছানায় পরিণত হয়। 
ছানাগুলোকে আলাদা করে ছেঁকে নিয়ে একত্রিত করে চূড়ান্ত চিজের রূপ দেয়া হয়। যদিও অনেক চিজের ভিতরে অথবা পুরো চিজেই মন্ড (নরম) থাকে। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের চিজ দেখা যায়, এবং তা প্রায় শতাধিক প্রকারের হতে পারে। এদের বিভিন্ন রকমের গঠনশৈলী, রঙ, স্বাদ, গন্ধ রয়েছে যা নির্ভর করে রন্ধনকৌশল, দুধের উৎস, এমনকি যে প্রাণীর দুধ তার খাদ্যাভাসের উপরেও নির্ভর করে। অনেক সময় পাস্তুরিত করা, চর্বির পরিমাণ, রেনেটের ধরন, ব্যবহৃত ব্যাকটেরিয়া এগুলোর উপরও চিজের ধরন নির্ভর করে। অনেকে ভিন্ন স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য এতে বিভিন্ন ভেষজ পাতা, মসলা এবং কাঠের ধোঁয়া দিয়ে থাকে।
অনেক ধরণের চিজের মধ্যে আমাদের দেশে মোজারেলা চিজ অতি পরিচিত যা স্বাদে গন্ধে বেশ আকর্ষণীয়। পিজ্জা, চিজ বল, পাস্তা, কুনাফা, বার্গার ইত্যাদি তৈরিতে মোজারেলা চিজ ছাড়াতো চলেই না। চাইলে ঘরে বসে আপনিও খামারের অতিরিক্ত দুধ দিয়ে বাড়িতেই মোজারেলা চীজ তৈরী করে তা কিছুদিন সংরক্ষণ করতে পারেন। যেভাবে বানাবেন এই চিজ জেনে নিন তার প্রস্তুত প্রনালী।     

উপকরণঃ

ক) গরুর দুধ ৮-১০ লিটার 
খ) ব্যাক্টেরিয়াল কালচার (বা ১/২ কাপ পানিতে ৩ চা চামচ সাইট্রিক এসিডের মিশ্রণ)
গ) ১ টি  রেনেট ট্যাবলেট (১/২ কাপ পানিতে মিশিয়ে নিতে  হবে) 
ঘ) ২ চা চামচ মিহিগুঁড়ো ক্যালসিয়াম লবণ (CaCl2)
ঙ) কিচেন থার্মোমিটার । 

প্রস্তুত প্রণালীঃ

ক) বড় স্টীলের পাত্রে দুধ ঢেলে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন। দুধ নাড়তে নাড়তে কিছুক্ষন পড়ে তাপমাত্রা 65°C হলে 30 মিনিট পর্যন্ত জ্বাল দিয়ে আস্তে আস্ত আবার 43-44°C নিয়ে এসে দুধে ব্যাক্টেরিয়াল কালচার বা সাইট্রিক এসিড মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। 

খ) ৩৮-৪০°সে. তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট পর ক্যালসিয়াম  লবন যোগ করে নাড়তে থাকুন।

গ) একই তাপমাত্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর রেনেট যোগ করে নাড়তে থাকুন, ৫ মিনিট পর প্রায় পুরো দুধই ছানা হয়ে যাবে। এ সময়ে খুব ধীরে ধীরে নাড়তে হবে। তা না হলে চিজ ঠিকমত জমবে না।

ঘ) জমে যাওয়া চিজ লম্ভা চাকু দিয়ে ছোট ছোট টুকরা করে পানি ঝরানোর জন্য চালনিতে রাখুন। 

ঙ) অতপর ভালভাবে পানি নিংড়ানোর ৩ ঘন্টা পর স্ট্রেসিং ও শেপিং করে ৮ ঘন্টা ডীপফ্রীজে রেখে দিন।

চ) তারপর চিজকে লবন পানিতে দেড় ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।

ছ) লবন পানি থেকে উঠিয়ে পরিস্কার সুতি কাপড় দ্বারা ভালভাবে মুছে প্যাকিং করে ডীপফ্রীজে সংরক্ষণ করতে হবে।

কৃতজ্ঞতাঃ মোঃ ইমরুল আহসান প্লাবন, রিসার্চ ফেলো, হাবিপ্রব,  দিনাজপুর এবং Mr. Hubertus van Pel, Dairy Expert, PUM Netherlands কে সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।


লেখকঃ প্রফেসর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর। 

Exit mobile version