লাভজনক সূর্যমূখীর চাষ করার আধুনিক কৌশল

সূর্যমুখীর চাষ

লাভজনক সূর্যমূখীর চাষ

ড. এম. মনজুরুল আলম মন্ডল*

লাভজনক সূর্যমূখীর চাষ ঃ সূর্যমুখী দেখতে শুধু রুপময় নয় গুণেও অনন্য। সূর্যমুখী বীজের তেল স্বাস্থ্যেও জন্য অসাধারণ। পুষ্টিগুণে অন্যসব তেলবীজ থেকে শ্রেষ্ঠ। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান (কোরেস্টেরল, গ্লুকোসিনোলিক এসিড, ইউরোসিক এসিড) থাকে সূর্যমুখীতে তা নেই। বরং আরও উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক পুষ্টিবিদদের দেয়া তথ্যমতে সূর্যমুখী তেলে আছে প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগ উপকারী ফ্যাট। আরও আছে মানব দেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৬, ওমেগা ৯, আছে অলিক এসিড। আছে ভিটামিন ই, ভিটামিন কে এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, আছে মিনারেল। চমৎকার এনার্জিও উৎসও সূর্যমুখী তেল। সরিষা, সয়াবিনের চেয়ে সূর্যমুখী তেলে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ কম। সয়াবিন তেল বেশীদিন সেবনে ক্যানসার, ডায়াবটিস ও হ্রদরোগের ঝুকি বাড়ায়। ভারত সহ উন্নত দেশগুলোতে সূর্যমুখীর তেল খুবই জনপ্রিয়। আমরা বিদেশ থেকে সয়াবিন ও পামওয়েল তেল আমদানি করি, দেশে সরিষা চাষ করি তাতে আছে ঝুকিপূর্ণ উপাদান। অথচ আমরা যদি দেশীয়ভাবে সূর্যমুখীর বীজকে প্রাধান্য দিয়ে রিফাইন্ড না করেও শুধু ঘানিতে বীজ থেকে তেল সংগ্রহ করি তা সরিষা, সয়াবিন তেল থেকেও বেশী পুষ্টিকর ও সুস্বাস্থ্যকর। আমাদের তেল সংক্রান্ত জটিল সব অসুখের হাত থেকে মুক্তি পেতে, তেলের ব্যবহার বাদ দিতে হয় খাবারে, তেলের ও দরকার আছে খাবারে। সেই অর্থে সূর্যমুখীর তেল হতে পারে আমাদের জন্য আশীর্বাদ।
সূর্যমুখী বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ। এতে মানবদেহের জন্য উপকারী লিনোলেনিক এসিড (৬৮%) রয়েছে। এ তেলে ক্ষতিকারক ইরুসিক এসিড নেই, যা সরিষার তেলে অনেক বেশী পরিমাণে আছে।
সূর্যমুখী তেল হৃদরোগের জন্য খুব উপকারী। এ ছাড়া সূর্যমুখী তেল মানুষের রক্তের কোলেস্টোরল ও উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রচুর পরিমাণ প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী বীজের তেল আমাদের শরীরের দুর্বলতা কাটাতে অত্যন্ত কার্যকর। এক গবেষণায় দেখা গেছে রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চাইতে সূর্যমুখী বীজ থেকে পাওয়া তেল দশগুণ বেশী পুষ্টিমাণ সমৃদ্ধ।
স্বাস্থ্য সচেতনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইদানিং ভোজ্য তেল হিসেবে সূর্যমুখী ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশে। মূলত আমদানির মাধ্যমেই দেশে এর চহিদা পূরণ হচ্ছে। প্রথমে উচ্চবিত্তরা এর ভোক্তা হলেও বর্তমানে স্বাস্থ্য-সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মধ্যবিত্তরাও এ তেল কিনছেন। বাজারে সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ কম থাকায় অন্যান্য তেল বেশী ব্যবহার করছে। বাজারে সরবরাহ থাকলে এ তেলও সচেতন মানুষ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করত।
লাভজনক সূর্যমূখীর চাষ : সূর্যমুখী মাঝারী লবনাক্ত মাটিতে চাষ করা সম্ভব। বাজারে দাম ভাল পাওয়া যায় এবং চাহিদা আছে। পরিবারের দৈনন্দিন ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানো যায়। উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম। আমন পরবর্তী পতিত জমিতে সহজেই সূর্যমুখী উৎপাদন করা যায়। বিঘাপ্রতি বছরে অতিরিক্ত ১০,০০০ টাকা আয় করা সম্ভব। সূর্যমুখীর তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। সূর্যমুখীর খৈল মাছ এবং গবাদী পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখীর কান্ড জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা যায়। মাত্র ১টা সেচেই সূর্যমুখী চাষ করা সম্ভব। মধ্যম মাত্রার লবণাক্ততা সহিষ্ণু হওয়ায় যেখানে অন্য ফসল যেমনঃ সরিষা ও মুগডাল হয় না সেখানেও সূর্যমুখী চাষ সম্ভব। সয়াবিন চাষে যেখানে ১৩০ দিন লাগে, সেখানে সূর্যমুখী চাষে লাগে মাত্র ১০০ দিন। তাছাড়া, সরিষার চেয়ে ফলন বেশী এবং সয়াবিনের চেয়ে ফলন সামান্য কম হলেও সূর্যমুখীতে তেলের পরিমাণ সয়াবিনের চেয়ে দ্বিগুণ।
আয়-ব্যয়ঃ বর্তমানে সূর্যমুখী তেলবীজের মণ প্রতি স্বাভাবিক বাজার মূল্য ১৪০০-১৬০০ টাকা। নিজে তেল ভাঙ্গালে শতাংশ প্রতি উৎপাদিত ১২ কেজি বীজ (৩ টন/হেক্টর) থেকে ৪ লিটার তেল ও ৮ কেজি খৈল পাওয়া যায়। ক্স তেল সর্বনিম্ম ১৪০ টাকা লিটার ও খৈল ৩০ টাকা কেজি হিসাবে যার বাজার মূল্য ৮০০ টাকা। শতাংশ প্রতি ২৩০ টাকা উৎপাদন খরচ ও ১২০ টাকা তেল ভাঙ্গানো খরচ বাদ দিলে নীট লাভের পরিমাণ বিঘায় ১০ হাজার টাকারও বেশী হবে। ক্স সূর্যমুখীর খৈল গবাদি পশু, হাঁস মুরগি বা মাছের খাদ্য হিসেবে অত্যন্ত পুষ্টিকর। ক্স ফসল কর্তনের পর সূর্যমুখীর কান্ড ও পুষ্পস্তবক জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ক্স এছাড়া ইচ্ছা করলে সূর্যমুখীর মধ্যে লালশাক, পালংশাক, ধনেপাতা প্রভৃতি স্বল্পমেয়াদী শাক-সবজি আন্তঃফসল ফসল হিসেবে চাষ করে অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব।

সূর্যমুখী চাষে প্রচলিত জাতসমূহঃ
বারি সূর্যমুখী-৩ঃ এ জাতটি বামন আকৃতির, উচ্চতা ৮০ সে.মি.। বীজে তেলের পরিমাণ ৪০%। জীবনকাল ৯০-১০৫ দিন। এ জাতটি রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে চাষ করা যায়। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ২.৩-২.৫০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ১.৮-২.০ টন।
বারি সূর্যমুখী-২ঃ এ জাতের গাছের উচ্চতা ১২৫-১৪০ সেমি । বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪২-৪৪ ভাগ। জীবনকাল রবি মৌসুমে ৯৫-১০০দিন এবং খরিফ মৌসুমে ৮৫-৯০দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ২.০-২.৩০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ১.৫-১.৮ টন।
প্যাসিফিক হাইসান-৩৩ঃ বাংলাদেশে প্রচলিত একটি হাইব্রিড জাত। হাইসান-৩৩ তুলনামূলক খাটো (১২০-১৩০ সে.মি.), জীবনকাল কিছুটা বেশী (১১০-১২০ দিন), পুষ্পস্তবক আকারে বড় (ব্যাস ২০-৩০ সে.মি.), প্রতিটি গাছে পুষ্ট বীজের সংখ্যা প্রায় ১২০০-১৩০০ টি। হাইসান-৩৩ জাতে ফলনও বেশি, বিঘায় ৭-৮ মণ।

জমি তৈরি: জমি সম্পূর্ণ চাষ করে, ফালি বা স্ট্রিপ এ আংশিক চাষ করে বা বিনা চাষে অর্থাৎ ডিবলিং পদ্ধতিতে সূর্যমুখী চাষ করা যায়। সূর্যমুখীর জমি গভীরভাবে চাষ হওয়া প্রয়োজন। জমি ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। বৃষ্টি বা সেচের পানি আটকে থাকে এমন জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা উচিৎ নয়।
বপনের সময়: সূর্যমুখী সারা বছর চাষ করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য নভে¤¦র থেকে মধ্য ডিসে¤¦র) চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। খরিফ-১ মৌসুমে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ (মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে) মাসেও এর চাষ করা যায়। জানুয়ারীর পর লাগালে এপ্রিল-মে মাসে দমকা ঝড় শিলা বৃষ্টি, টর্নেডো, এমনকি হঠাৎ সাইক্লোন এর প্রভাবে ফসল নষ্ট হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

বপন পদ্ধতি ও বীজের হার: সূর্যসুখীর বীজ সারিতে বুনতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেমি এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি রাখতে হয়। হাইব্রিড জাতের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারি ৭৫ সে.মি. (৩০ ইঞ্চি) এবং গাছ থেকে গাছ ৪৫ সে.মি. (১৮ ইঞ্চি) দূরত্বে। এভাবে বীজ বপন করলে হেক্টরপ্রতি ১২-১৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

সারের পরিমাণ (প্রতি বিঘায়)ঃ ইউরিয়া ২৫-২৭ কেজি, টিএসপি ২৩-২৫ কেজি, এমপি ২০-২৫ কেজি, জিপসাম ২০-২৫ কেজি, জিংক সালফেট ১.৩৫ কেজি এবং পোবর ১.২ টন।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি: ইউরিয়া সারের অর্ধেক এবং বাকি সব সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ২ ভাগ করে প্রথম ভাগ চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং দ্বিতীয় ভাগ ৪০-৪৫ দিন পর ফুল ফোটার পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ শোধন: মাটি ও বীজ থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য বীজ শোধন একান্ত প্রয়োজন। বীজ শোধনের ফলে প্রধানত বীজ বাহিত রোগ দমন হয়। ফলে জমিতে আশানুরূপ গাছের সংখ্যা পাওয়া যায় এবং ফলন ভাল হয়। ভিটাভেক্স-২০০ ছত্রাক নিবারক দ্বারা বীজ শোধন করা হয়। প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজের জন্য মাত্র ৩ (তিন) গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ প্রয়োজন। একটি বড় প্লাস্টিকের ঢাকনাযুক্ত পাত্রে সূর্যমুখীর বীজ নিয়ে পরিমাণমতো ঔষধ মিশিয়ে পাত্রের মুখ বদ্ধ করে ভালভাবে ঝাঁকিয়ে ১ দিন রেখে দেবার পর বীজ জমিতে বপন করতে হবে।
গাছ পাতলাকরণ: অতিরিক্ত গাছ থাকলে চারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর প্রতি হিলে/গোছায় ১টি করে সুস্থ্যসবল গাছ রেখে বাকি গাছগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে।
আগাছা দমন: চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর প্রথম এবং চারা গাজানোর ৪৫-৫০ দিন পর দ্বিতীয় বার নিড়ানী দিতে হয়।
সেচ প্রয়োগ: সূর্যমুখীতে ২ টি সেচ দিলে খুব ভাল হয় তবে ১ টি সেচেও চাষ করা সম্ভব। তবে সূর্যমুখী ফসলের ফলন বেশি পেতে হলে কয়েকবার পানি সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচ বীজ বপনের ৩০ দিন পর (গাছে ফুল আসার আগে), দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৫০ দিন পর (পুষ্পস্তবক তৈরির সময়) এবং তৃতীয় সেচ বীজ বপনের ৭০ দিন পরে (বীজ পুষ্ট হবার আগে) দিতে হবে। ডিবলিং পদ্ধতিতে প্রথম সেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর সাথে সার প্রয়োগ ও গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া জড়িত। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে বৃষ্টি হওয়ার পর জমিতে পানি না জমে।

সূর্যমুখীর পাতা ঝলসানো রোগ দমনঃ আমাদের দেশে সূর্যমুখীর রোগের মধ্যে পাতা ঝলসানো রোগটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অলটারনেরিয়া হেলিয়ান্থি নামক ছত্রাকের আμমণে সূর্যমুখীর এ রোগটি হয়ে থাকে। প্রথমে পাতায় ধূসর বা গাঢ় বাদামী বর্ণের অসম আকৃতির দাগ পড়ে। পরে দাগ মিশে গিয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। অবশেষে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়।
প্রতিকারঃ রোগ সহনশীল বারি সূর্যমুখী-২ জাত চাষ করতে হবে। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোভরাল-৫০ ডাব্লিউপি (২% হারে) পানির সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার পাতায় প্রয়োগ করলে রোগের প্রকোপ কমে যায়। ফসল কাটার পর গাছের পরিতাক্ত অংশ নষ্ট করলে বা পুড়িয়ে ফেললে এ রোগের উৎস নষ্ট হয়ে যায়।
সূর্যমুখীর শিকড় পচা রোগ দমনঃ সূর্যমুখীর সাধারণত স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। আμান্ত গাছের গোড়া সাদা তুলার মত ছত্রাকের মাইসেলিয়াম এবং গোলাকার সরিষার দানারমতো স্কে‹লেরোশিয়াম দেখা যায়। প্রথমে গাছ কিছুটা নেতিয়ে পড়ে। কয়েক দিনের মধ্যে সমস্তÍ গাছ ঢলে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়।
প্রতিকারঃ প্রোভেক্স-২০০ এর সাহায্যে বীজ শোধনের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তারর রোধ করা যায়। জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে কারণ ভেজা স্যাত স্যাতে জমিতে রোগের প্রকোপ বেশি হয়। পর্যায়μমিকভাবে ফসলের চাষ করলে উপযুক্ত পোষক গাছের অভাবে পূর্ববর্তী আμমণকারী রোগের বিস্তার রোধ করা যায়।

সূর্যমুখীর বিছাপোকাঃ লালচে কমলা রঙের বিছাপোকার ছোট ছোট কীড়াগুলি একত্রে দলবদ্ধভাবে সূর্যমুখীর নিচের সবুজ অংশ খেয়ে জালিকা সৃষ্টি করে। পরে বয়স্ক‹ কীড়া পাতা, ফুল ও নরম কা- পেটুকের মতো খেয়ে ক্ষতি করে। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল ও ফল ধারণ বাধাগস্তÍ হয় এবং ফলন কমে যায়। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে গাছের অংগজ বৃদ্ধিও সময় থেকে অর্ধ পরিপক্ক অবস্থা পর্যন্ত এদের আμমণ হয়ে থাকে।
ব্যবস্থাপনাঃ দমন পদ্ধতি তিলের বিছাপোকার অনুরূপ। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথমে ২/১টি পাতায় বিছাপোকার দলবদ্ধ অবস্থান দেখা মাত্রই হাত দ্বারা পাতাসহ কীড়া সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। আμমণ খুব বেশি হলে নাইটেধা (সাইপারমেথিধন+ক্লোরোপাইরিপাস) ৫০ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত ক্ষেতে ১০ দিন অন্তর ২ বার ছিটায়ে পোকা দমন করা যায়।
সূর্যমূখীর পাতা ও মাথা (পুষ্পস্তবক) ছিদ্রকারী পোকা দমনঃ সবুজ বা সাদা রঙের ছোট ছোট কীড়াগুলি গাছের বাড়ন্ত ও ফুল ধারন অবস্থায় আμমণ করে থাকে। গাছের বাড়ন্ত অবস্থায় পাতা খায় এবং পাতায় গর্তের সৃষ্টি করে। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। যখন ছোট কীড়াগুলি ফুলের মধ্যে আμমণ করে তখন কীড়াগুলি ফুলটি খায়। ফলে ফুলের মধ্যে পুষ্ট বীজের সংখ্যা কমে যায়।

পাখির আক্রমন ও করনীয়ঃ বীজ পুষ্ট বা শক্ত হয়ে আসার সময় পাখির উপদ্রব দেখা যায় বিশেষ করে টিয়া ও কাকের আμমণ। খুব ভোরে এবং সন্ধ্যার পূর্বে পাখির আক্রমণ বেশি হয়। এদের হাত থেকে ফসল রক্ষায় কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করা যায়, রঙিন ফিতা টাঙ্গিয়ে বাতাসে ওড়ার ব্যবস্থা করা যায় এ ছাড়া জাল/নেট টানিয়ে ও রক্ষা করা যায়। বাঁশ বা টিনের তৈরী যন্ত্র উঁচু করে বেঁধে রশির সাহায্যে দূর থেকে টেনে শব্দ করে পাখি তাড়ানো যায়। তাছাড়া ব্লক আকারে চাষ করলে এদের আμমণ অনেকটাই কমে যায়।
ফসল কাটা ও শুকানো: সূর্যমুখী বপনের ৬৫-৭০ দিন পরে ফুলের বীজ পুষ্ট হওয়া শুরু হয়। সূর্যমুখী কাটার সময় হলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে আসে এবং পুষ্পস্তবক (মাথা) সহ গাছগুলো নুয়ে পড়ে। বীজগুলো কালো রং এবং দানাগুলো পুষ্ট ও শক্ত হয়। মৌসুম অনুসারে ফসল পরিপক্ক হতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে।

বীজ সংরক্ষণ বা ̧দামজাতকরণ: সূর্যমুখী বীজ পরের মৌসুমে লাগানোর জন্য গুদামজাত করা প্রয়োজন হয়। বীজ সংরক্ষণের পূর্বে অপরিপক্ক এবং ভাঙ্গা বীজ বেছে ফেলতে হবে। মোটা পলিথিন ব্যাগ বা কেরোসিন টিন বা টিনের ড্রামে বীজ সংরক্ষণ করা উত্তম। ভেতরে পলিথিন দিয়ে চটের বস্তায় ভালভাবে শুকানো বীজ প্রতি ৩০ কেজির জন্য ২৫০ গ্রাম ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডসহ সংরক্ষণ করলে ৭-৮ মাস পরেও বীজের শতকরা ৮০ ভাগ অঙ্কুুরোদগম ক্ষমতা বজায় থাকে। বর্ষাকালে এক থেকে দু’বার বীজ পুণরায় রোদে শুকিয়ে নেয়া ভালো।

কৃষক পর্যায়ে তেল নিষ্কাশন, সংরক্ষণ ও ব্যবহারঃ সরিষার তেল ভাঙ্গানো মেশিনেই সূর্যমুখী তেল ভাঙ্গানো যায়। সাধারণত এই মেশিনে ৩২-৩৫ ভাগ পর্যন্ত তেল পাওয়া যায়। ক্স তেল ভাঙার পর পর তেলের পাত্রটি নাড়াচাড়া না করে প্রতি লিটার তেলের জন্য ১-২ চিমটি লবণ দিয়ে ৩-৪ দিন রেখে দিলে নিচে গাদ বা তলানী জমবে। ক্স উপর থেকে ভাল তেল ছেকে নিয়ে ২-৩ দিন কড়া রোদ দিতে হবে। অথবা একটি পাত্রে তেল নিয়ে হালকা গরম করে তুলে ফেলতে হবে। কোনভাবেই তেল ফুটানো যাবে না। ক্স তেল ঠান্ডা করে একটি পরিষ্কার ও শুকনো পাত্রে ঠান্ডা ও অন্ধকারাচ্ছন জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। কাঁচের পাত্র হলে সবচেয়ে ভাল হয়। ক্স মাঝে মাঝে রোদে দিলে এক বছরে তেল নষ্ট হবে না এবং কোন বাজে গন্ধও হবে না। তবে দুই মাসের বেশী সংরক্ষণ না করাই উত্তম।

চীপ সায়েন্টিফিক অফিসার, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *