লাভ বেশি বলে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি:

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ ঃ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ । যেকোনো উন্মুক্ত জলাশয়ে স্বল্পব্যয়ে ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে মাছ চাষ করে বেশি লাভ করা যায় বলে এ পদ্ধতিতে দ্রুত আগ্রহ বাড়ছে উদ্যোক্তাদের। এরই ধারাবাহিকতায় বাগেরহাটেও শুরু হলো খাঁচায় মাছ চাষ। মূলত মাছ চাষে আগ্রহীদের উৎসাহিত করতেই পরীক্ষামূলকভাবে চারটি উপজেলায় তেলাপিয়া চাষের প্রদর্শনী করছে মত্স্য অধিদপ্তর। ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে মত্স্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্প’-এর আওতায় জেলা সদর, কচুয়া, রামপাল ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় চারটি স্থানে ৪০টি খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা মত্স্য কর্মকর্তা জিয়া হায়দার চৌধুরী জানান, প্রতিটি উপজেলায় ২০ জন চাষীকে একত্র করে প্রথমে একটি দল তৈরি করা হয়। এরপর নিজ নিজ এলাকায় সুবিধামতো স্থানে উন্মুক্ত জলাশয়ে ১০টি খাঁচা তৈরি করে দেয়া হয়। নেট, বাঁশ ও প্লাস্টিকের ব্যারেল দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি প্রতিটি খাঁচার দৈর্ঘ্য ২০ ফুট ও প্রস্থ ১০ ফুট। একটি খাঁচা তৈরিতে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। একবার তৈরি করলে ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। প্রতিটি খাঁচায় ৮০০ থেকে ১ হাজার তেলাপিয়ার পোনা ছাড়া যায়। যথেষ্ট খাবার সরবরাহ করলে তিন মাসেই বিক্রির উপযুক্ত হয়। এভাবে প্রতিটি খাঁচা থেকে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব।

কচুয়া উপজেলার চরকাঠি গ্রামের একটি খালে ১০টি খাঁচার সমন্বয়ে একটি খামার করা হয়েছে। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মাছের পরিচর্যা করছেন কয়েকজন চাষী। মত্স্যচাষী পাইক নজরুল ইসলাম বলেন, বছরখানেক আগে উপজেলা মত্স্য অফিসের সহযোগিতায় আমরা এলাকায় ১০টি খাঁচায় তেলাপিয়া চাষ করি। খাঁচায় চাষ করার কারণে পরিমাণমতো খাবার দেয়া যায়। মাছের কোনো সমস্যা হলে তাত্ক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায়। ফলে লাভও ভালো হয়।

জেলা মত্স্য কর্মকর্তা জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ে চাষ করলে মাছের রোগব্যাধি কম হয় এবং অল্প জায়গায় বেশি মাছ চাষ করা যায়। খাঁচায় মাছ চাষ করে বিনিয়োগের প্রায় ৪০ শতাংশ লাভ করা সম্ভব। তাই দেশে ব্যাপকভাবে মত্স্য চাষে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা জেলার চারটি উপজেলার চারটি জলাশয়ে মোট ৪০টি খাঁচায় পরীক্ষামূলকভাবে তেলাপিয়ার প্রদর্শনী খামার করেছি। আমাদের বিশ্বাস, এসব প্রদর্শনী খামার দেখে অনেক চাষী উন্মুক্ত জলাশয়ে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষে এগিয়ে আসবেন।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রনব কুমার বিশ্বাস জানান, মূলত গত বছরের শুরুর দিকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন তারা। প্রথমে মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় চারটি স্থানে ৪০টি প্রান্তিক চাষীকে একত্রিত করে একটি দল গঠন করেন। তাদের নামে একটি যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করা হয়। মাছ বিক্রির লভ্যাংশও ওই অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পরে সেখান থেকে চাষীরা সমানভাবে ভাগ করে নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *