আব্দুল মান্নান,হাবিপ্রবিঃ
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকারের নেতৃত্বে একদল গবেষক দ্রত সময়ে ভূট্রা,ধান সহ অন্যান্য ফসল শুকানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন ।
তার এই উদ্ভাবনী নতুন কৌশলটি দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম,কোষাধক্ষ্য, রেজিস্ট্রার সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার পরিচালকগণ দিনাজপুরের উত্তরণ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে যান । সেখানে তারা উদ্ভাবিত যন্ত্রের বিভিন্ন দিক ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং উপস্থিত একটি পরীক্ষণের মাধ্যমে যন্ত্রের গুণাগুন ও কার্যকারিতা দেখেন ।এসময় উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম বলেন, এটি একটি নিড বেসড টেকনোলজি ।বর্তমান সময়ে যেভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে এবং প্রতিবছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে যে হারে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে,তাতে করে আমার কাছে মনে হয়েছে এই টেকনোলজি একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে ।আমি তার এই উদ্ভাবন কে স্বাগত জানাচ্ছি এবং তার পরিকল্পনা ও কাজের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি ।
প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মসলা জাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে টুকিটাকি ফাস্ট স্টেজ ড্রায়িং টেকনিক ছাড়া গ্রেইনের(ভুট্রা,ধান) জন্য আমাদের দেশে টু স্টেজ ড্রায়িং টেকনিক নিয়ে কোথাও কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নেই, আমরাই প্রথম এই টেকনোলজি উদ্ভাবন করেছি ।এটি পরিবেশ বান্ধব ,বিধায় পরিবেশে ও জীব বৈচিত্রের প্রতি এর কোন বিরুপ প্রভাব নেই ।
প্রশ্নঃ কাজটি করতে আপনাদের কতদিন সময় লেগেছে?
আমাদের এটি তিন বছরের প্রকল্প আমরা মাত্র এক বছরে এই পর্যন্ত অগ্রসর হতে পেরেছি। আমাদের এটিকে কমার্শিয়াল পর্যায়ে নিয়ে যেতে এক বছরের মতো সময় লাগবে । বর্তমানে এই পদ্ধতিতে প্রথম স্টেজে ভুট্রা বা ধান ফ্লুডাইজড বেড ড্রায়ার ব্যবহার করে মাত্র ৪ মিনিটে ২৮% আদ্রতা থেকে ২০% আদ্রতায় নিয়ে আসা যায় এবং দ্বিতীয় স্টেজে এলএসইউ/সান ড্রাই পদ্ধতি ব্যবহার করে মাত্র ৩-৪ ঘন্টায় ২০% থেকে ১২% এ নিয়ে আসা যাচ্ছে ।
প্রশ্নঃ আপনি কাজ করতে গিয়ে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?
আসলে যে কোন কাজ করতে গেলে প্রথম দিকে সমস্যার সম্মুখীন তো হতেই হবে ।ম্যাটেরিয়ালস পাওয়া গেলে লোক পাওয়া যায়না আবার লোক পাওয়া গেলে, ম্যাটেরিয়ালস পাওয়া যায় না ।আর টাকা পয়সা আল্লাহর রহমতে তেমন সমস্যা হয়নি । কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর অর্থায়নে প্রকল্পটির কাজ চলতেছে ।এজন্য আমরা কেজিএফ এর প্রতি কৃতজ্ঞ ।
প্রশ্নঃ আপনি কি মনে করেন এটি কৃষক পর্যায়ে সমাদৃত হবে?
আপনারা জানের বাংলাদেশে এখন ভুট্রার আবাদ বেড়ে গেছে ।পোল্ট্রি ফিড,ডেইরি ফিড ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভূট্রার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে ।এজন্য ফিড মিলেরা ব্যপকভাবে ভূট্রা ব্যবহার করছে ,ফলে কৃষকেরাও ভূট্রা আবাদের দিকে ঝুকছে ।কারণ একর প্রতি এর ফলন অনেক বেশি ।কাজেই বর্ষাকালে যে ভূট্রা হারভেস্ট হয় তা শুকানোর জন্য কিন্তু এর চাহিদা অনেক বেশি হবে বলে আমরা আশাবাদী।আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি ।
প্রশ্নঃ এটি নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি ?
কিভাবে কম খরচে এটিকে কৃষক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া চায় সে নিয়ে কাজ করব, যাতে কৃষকদের হাতের নাগালে পৌছে দিতে পারি ।আগামী বছরের মধ্যেই ইনশাআল্লাহ আমরা সেটি পারব ।মাঠ পর্যায়ে ভূট্রা শুকাতে বর্তমান কেজি প্রতি ৫০-১০০ পয়সা লাগে । আমরা চেষ্টা করব একই খরচের মধ্যে রাখতে । তাছাড়া আপনারা জানেন মেকানিক্যাল যেকোন কাজে খরচ একটু বেশিই হয়। আর আমাদের এই মিশিনে ড্রায়িং করলে রং ও পুষ্টি গুনাগুণ ভাল থাকে। এতে কৃষকরাও বাজারে বেশি মূল্য পাবে ।কাজেই একটু খরচ বেশি হলেও তা পুষিয়ে যাবে । আবহাওয়া খারাপ থাকলেও এই পদ্ধতিতে ফসল শুকিয়ে ফসলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে ।ফলে বৈরী আবহাওয়ার কারনে প্রতিবছর যে পরিমাণ ফসল লস হয়, সেটি আর হবে না ।ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেয়ার জন্য ,আপনাকেও ধন্যবাদ।
উল্লেখ্য যে, এই প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবে আছেন প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার ,কো-ইনভেস্টিগেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. মো. মফিজুল ইসলাম ও মো. আব্দুল মোমিন সেখ এবং রিসার্চ ফেলো হিসেবে মোঃ এজাদুল ইসলাম,আক্তারুজ্জামান ও হাসান তারেক ।