Site icon

এক জমিতে বছরে কয়েকবার শাক সবজি চাষে বাড়তি আয়

শাক সবজি চাষে বাড়তি আয়

মো. মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:

শাক সবজি চাষে বাড়তি আয় :শেরপুরের নকলা উপজেলাধীন বানেশ্বরদী গ্রামের ষাটোর্ধ বয়সী মো. ইসমাইল হোসেন পতিত জমিতে বছরে কমপক্ষে ৭ বার শাক সবজি চাষ করে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ব্যতিক্রমি এই মিশ্র ও স্বল্প কালীন শাক-সবজি চাষি ৫০ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন শাক, সবজি, মসলা ও কলার আবাদ করে লাভবান হয়ে তিনি এখন এলাকায় আদর্শ চাষি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। শাক সবজি বিক্রির টাকায় চলে তার সংসারের খরচ। তার দেখা দেখি এলাকার অনেকেই এখন মিশ্র শাক-সবজি আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে স্বল্প কালীন শাক সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ আকাশচুম্বী।
সরেজমিনে উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের উত্তর বানেশ্বরদী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে গত দুই বছর আগেও যে জমি পতিত ছিল, সেই পতিত থাকা ৫০ শতক জমি বর্গা নিয়ে সেখানে লাল শাক, সরিষা শাক, পালং শাক, লাউ শাকসহ বিভিন্ন শাক ও মুলা, গাজর, আলু, টমেটো, পাতা কফি, ফুল কফি, বেগুন, করলা, সিমসহ বিভিন্ন সবজি এবং ধনিয়া, জিরা, কালোজিরা, দেশীয় সজ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন মসলা জাতীয় ফসল চাষ করার পাশাপাশি ওই জমির আইলে ও অন্যান্য ফসলের ফাঁকে সবরি কলার গাছ লাগিয়েছেন। তার ওই ৫০ শতক জমি যেন লাল সবুজের সমরোহে পরিণত হয়েছে।

সফল চাষি ইসমাইল হোসেন জানান, একই জমিতে স্বল্প কালীন শাক সবজি বছরে অন্তত ৭ কি ৮ বার চাষ করা সম্ভব। এতে অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি পাওয়া যায়। তিনি কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০১৬ সালে তার নিজের ২০ শতক জমিতে ও আইলে সবরী কলা লাগিয়ে কলা গাছের ফাঁকে স্বল্প কালীন বিভিন্ন শাক সবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ করে বাড়তি আয় করায় তার আগ্রহ বাড়ে। পরে ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে এলাকায় আরও ৫০ শতক জমি বর্গা নিয়ে সেই জমিতে ও আইলে কলা এবং কলা গাছের ফাঁকে স্বল্প কালীন শাক সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল চাষ শুরু করেন। কলা গাছের ফাঁকে বছরে কমপক্ষে ৭ বার চাষ করা শুধু শাক সবজি থেকেই তিনি অন্তত অর্ধলক্ষাধিক টাকা আয় করেন। এই শাক সবজি বিক্রির টাকায় চলে তার সংসারের খরচ। প্রথম দিকে এলাকার অনেকে তাকে নিরুৎসাহী করলেও, পরে ইসমাইলের সফলতা দেখে তারাও মিশ্র চাষে আগ্রহী হন এবং অনেকে এমন আবাদ করে সফল হয়েছেন। তিনি আরও জানান, প্রথম অবস্থায় ওই পতিত জমিকে আবাদের উপযোগী করা, সার-বীজ ও শ্রমিক বাবদ তার প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম দেড়মাসে (৪৫ দিনে) কলা গাছের ফাঁকে চাষ করা শাক বিক্রি করে তিনি ১২ হাজার আয় করেন। এর পরে জমি তৈরী বাবদ খরচ না হওয়ায় শাক সবজি বিক্রি থেকে লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তিনি ওই জমিতে চলতি বছর এ পর্যন্ত ৬ বার স্বল্প কালীন শাক-সবজি চাষ করেছেন। তাছাড়া এবছর আরও একবার শাক সবজি তুলতে পারবেন, যা সরজমিনে দেখা গেছে। ৬ আবাদে তিনি প্রায় ৩৫ হাজার টাকার বিভিন্ন শাক ও সবজি বিক্রি করেছেন এবং ক্ষেতে থাকা শীত কালীন বিভিন্ন শাক সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবে বলে তিনি আশা করছেন। আর সবরি কলা বিক্রি শুরু হলে তাতে অন্তত আরও ২ লাখ টাকা আয় হবে বলে তিনি জানান।

আশার বিষয় হল, ইসমাইল হোসেনের আবাদে তিনি কোনো রাসায়নিক কিটনাশক ব্যবহার করেন না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পোকা ও রোগ বালাই দমন করেন। ফলে তার উৎপাদিত শাক সবজি ও ফল সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই তার উৎপাদিত শাক সবজি ও ফলের চাহিদা ও দাম একটু বেশি বলে জানান অনেকে। অল্প ব্যায়ে ও নাম মাত্র শ্রমে এই মিশ্র আবাদে সফলতা পেয়ে স্বল্প কালীন শাক সবজি চাষ করা তার নেশাতে পরিনত হয়েছে। তিনি সারা দিন ফসলের সেবা দানে ওই মাঠেই কাটান।

একই জমিতে শাক সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল চাষে সাফল্যে দেখে এলাকার কৃষকরা প্রতিনিয়ত তার কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। বানেশ্বরদী ব্লকে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ও আশরাফুল ইসলাম জানান, বানেশ্বরদীর ইসমাইল হোসেনসহ অন্যান্য কৃষককে নিয়মিত পরামর্শ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তারা বলেন, শাক সবজি চাষিদের যেকোন সমস্যায় দ্রুত সমাধান দিতে কৃষি বিভাগ সদা তৎপর রয়েছে এবং আমরা নিয়মিত কৃষকরে বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শন করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এক হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে শাক সবজি চাষের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাড়ির আঙ্গীনায় চাষ করা শাক সবজি সহ হিসেব করলে এর পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, কৃষকদের পরামর্শ প্রদানে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠে কাজ করেন। তাছাড়া কৃষকদের মাঝে সচেনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কৃষি আবাদের উপর মাঠ দিবস, কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন ও কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। দীর্ঘ মেয়াদী ফল ও ফসলের ক্ষেতে গাছের ফাঁকে শাক সবজি চাষ করে বাড়তি আয়ের মাধ্যমে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তাগন।

 

Exit mobile version