বশিরুল ইসলাম
আধুনিক কৃষি শিক্ষার মাধ্যমে এদেশের কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৩৮ সনে প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউটের রূপান্তর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেই ১৯৩৮ থেকে পথচলা এ প্রতিষ্ঠানটি অদ্যাবদি নিরবচ্ছিন্ন গতিতে সৃষ্টি করে চলছে একের পর এক অমর কাব্য। বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত এটি সেই বিরলতম প্রতিষ্ঠনটি, যা একটি জাতির দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের অন্নদান, কৃষিশিক্ষা পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে।
তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তথা অবকাঠামোগত ভাবে উন্নত, একাডেমিক ভাবে আধুনিক ও গবেষণা বান্ধব করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একজন দক্ষ, সৎ একাডেমিশিয়ান ও সর্বোপরি নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক উপাচার্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ একজন উপাচার্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণপুরুষ যার সুদক্ষ নেতৃত্বে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়ে চলে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তেমনি এক উপাচার্য হলেন অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। যার কোনো উপমা চলে না।
শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোসহ সকল বিষয়ে সেন্টার অব এক্সিলেন্স করে গড়ে তুলতে দক্ষ হাতে পরিচালনা করে চলছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। তিনি বিশ্বাস করেন ‘শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবে উন্নত আধুনিকতম বিশ^বিদ্যালয়, এ প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ’। উপাচার্য হিসেবে ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের কাজ করে চলছেন।
ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ একাধারে প্রথিতযশা গবেষক, শিক্ষাব্যক্তিত্ব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও কলাম লেখক। তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রিকালচারাল বোটানী বিভাগের অধ্যাপক। বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট বর্তমান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৭৯ সালে বি.এসসি.এজি (অনার্স) ও ১৯৮২ সালে এম.এসসি.এজি, যুক্তরাজ্য থেকে ১৯৮৭ সালে এম.ফিল এবং পরবর্তীতে ২০০৭ সালে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ ভুট্টা, গম, ধান, ডাল ও তৈল ফসলের উপর বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ইউরোপিয়ান কমিশন, ইউএস এইড, বাংলাদেশ সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ০৭টি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছেন। আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর ৪০ টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন সাময়িকিতে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর অপ্রকাশিত বহু গবেষণা কর্ম রয়েছে। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ এর কার্যনির্বাহী সদস্যসহ প্রায় ১৬ টি পেশাজীবী সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ সততা বলতে আর্থিকভাবে শতভাগ সৎ থেকে নিজের সমগ্র প্রজ্ঞা, মেধা, যোগ্যতা, সামর্থ্য ও যোগাযোগের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যের শতভাগ পালন করার চেষ্টা করাকেই বোঝেন। ছাত্রজীবন থেকে আজ অবধি তিনি তার পরিচিত জনের মাঝে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি বিশ্বাস করেন কাজে। অফুরন্ত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ শক্তিমান এ মানুষটির আজন্ম ইচ্ছা এ দেশটিকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা রূপে গড়ে তোলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ২০৪১ সালের একটি উন্নত ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন উপাচার্য। সে স্বপ্নের বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যোগদান করার পরই ফিশারিজ এন্ড একোয়াকালচার অনুষদ এবং এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদ থেকে কৃষি অর্থনীতি ডিগ্রি চালু করেন।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নে একনেকে ৩৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পটি শেষ হলে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে এ বিশ্ববিদ্যালয়। আধুনিক ‘ ড. ওয়াজেদ মিয়া কেন্দ্রীয় গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রায় শ’খানেক আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষণা চলছে। প্রতি বছরই বিদেশি ছাত্র সংখ্যা বাড়ছে। পুরো ক্যাম্পাস ওয়াই-ফাইয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। অত্যাধুনিক ই-লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়েছে। ই-বুক সিস্টেমে চলে যাচ্ছে পুরো গ্রন্থাগার। এখন সবাই বই বা গবেষণা পত্রিকা পড়ার জন্য খুব সহজেই ওই সব অনলাইনে প্রবেশ ও ডাউনলোড করতে পারে। লাইব্রেরিটি ই-লাইব্রেরিতে পরিণত হওয়ায় যুগের চাহিদাও পূরণ হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় গবেষণার প্রজননক্ষেত্র। গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টি, উদ্ভাবনী চিন্তাচেতনার বিকাশ প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনা মানকে বিশ্ব পযার্য় নেওয়া জন্য কাজ করে চলছেন অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। তার নেতৃত্বে অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মানসম্মত গবেষণা হচ্ছে এখন। শিক্ষকরা দেশের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপদ খাদ্য চাষের উপায় নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। ঢাকা শহরকে সবুজে আচ্ছাদিত করার জন্য ছাদ বাগান নিয়ে চলছে ব্যাপক গবেষণা। সুন্দরবনের সকল ধরনের প্রাণীর জেনেটিক বার কোড নির্ণয় ও বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ আন্তর্জাতিক মানের মৌলিক ও ফলিত গবেষণা করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এমএস এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীরা গবেষণা করছে এবং শিক্ষকরা তাদের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছে। শিক্ষকদের ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই গবেষণা কর্মকান্ডের কয়েকটি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকিগুলো সমাপ্তির পথে রয়েছে। পাইপলাইনে আরো কতকগুলো গবেষণা কর্মপরিচালনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শিক্ষকদের বাইরে যাচ্ছেন এবং ডিগ্রি নিয়ে ফিরে আসছেন, ফলে একাডেমিক পরিবেশ ক্রমান্বয়ে উন্নত হচ্ছে।
অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ সবসময় ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। শিক্ষার্থীরা অন্যায় কাজে না জড়িয়ে যাতে সৃজনশীল কর্মকান্ডের সঙ্গে সবসময় নিয়োজিত থাকে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চারও আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা চলছেন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মহান ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, মুজিব নগর দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে নানা অনুষ্ঠানে আয়োজন হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক।
শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের দুর্বলতা ও ত্রুটিগুলো শনাক্ত করা জন্য প্রায় ৩৬টি কর্মশালার মাধ্যমে তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ফলে ধীরে ধীরে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ বেশ কিছু বিদেশি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ গবেষণা প্রকল্পও শুরু হয়েছে। কথাবার্তা চলছে আরও কিছু নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে।
উপাচার্যের অফিস, বাংলো সব জায়গায় যেন সরকারি অর্থ কম খরচ হয়, সেদিকে তিনি সর্বদা সচেষ্ট। এভাবে দিনের পর দিন আর্থিক, একাডেমিক ও অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনয়নের পাশাপাশি উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও নতুনত্ব নিয়ে এসেছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, উন্নত সাংস্কৃতিক পরিচয় ছাড়া কোনো জাতির স্বকীয়তা অর্জন সম্ভব হয় না।
লেখকঃ জনসংযোগ কর্মকর্তা ( দায়িত্বপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতর,শেকৃবি