শীতকালে কবুতর খামারীদের ঃ সামনে আসছে শীতকাল। এ সময়ে কবুতরের খামারীদের নানা বিষয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক শীতকালে কবুতরের নানা যত্নআত্মির খবর।
১) কবুতর কে সপ্তাহে/১৫ দিনে/মাসে অন্তত ১ দিন কিছু সময়ের জন্য উপবাস রাখা। এতে কবুতরের কর্প এ জমে থাকা সঞ্চিত খাদ্য হজম হয় ফলে বিভিন্ন রোগ থেকে বেচে থাকে। এইদিন সকালে অল্প করে খাবার দিবার আগে আপনি যদি কালজিরা+মেথি+মউরি+জাউন এই উপাদানের (৪০%+৩০%+১৫%+১৫%) অনুপাতে মিক্স করে খেতে দেন, আপনার কবুতর কে তাহলে দেখবেন আপনার খামারে অনেক অনাখাঙ্কিত রোগ থেকে মুক্ত থাকবে।
২) ৪৫ দিন পর পর কৃমির ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। তবে অসুস্থ ও বাচ্চা যেগুলোর আছে সেগুলো কে বাদে বা যেগুলো ১-২ দিনের মধ্যে ডিম দিতে পারে এমন বা যে সমস্থ কবুতরের ৭ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটবে বা অসুস্থ থেকে কেবল ভাল হয়েছে এমন কবুতর কে অনুগ্রহ করে দিবেন না।
৩) আপনার খামার পরিস্কার পরিছন্ন রাখারা চেষ্টা করবেন, আর এই লক্ষে আপনার খামারকে প্রতিদিন বা একদিন পরপর অন্তত ২-৩ দিন পর পর তাদের বিষ্ঠা বা মল পরিস্কার করা উচিৎ। কারন কবুতরের রোগের অন্যতম আরেকটি উপাদান হল এই মল। এগুলো শুকিয়ে ধুলাই পরিনত হয় আর ফলে না ধরনের রোগ জীবাণু ছড়ায়। আর পরিস্কার করার পাশাপাশি জীবাণু মুক্ত ঔষধ ছিটান উচিৎ। যেমন- VIROCID, FARM30, VIRCON S, HALAMID,OMNICIDE, TEMSEN ETC ১ লীটার পানিতে ১ গ্রাম মীক্স করে স্প্রে করা ভালো।
৪) খাবারে ফাঙ্গাস এর কারনে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পাতলা পায়খানা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে আগে আপনাকে খাবার হালকা ভাবে গরম করে নিতে হবে।
৫) অনেক সময় ভিটামিন প্রয়োগের ফলে পাতলা হলুদ ধরনের পায়খানা দেখা দিতে পারে, তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনি যে ভিটামিন টি প্রয়োগ করছেন সেটা নষ্ট হয়ে গেছে, আর এ ক্ষেত্রে আপনাকে সেই ভিটামিন তা পরিবত্তন করতে হবে।
৬) প্রতি সপ্তাহে গোসল দিবার ব্যাবস্থা করতে হবে।
৭) ফুটান পানি, ফিল্টার পানি বা গভির নলকূপের পানি ব্যাবহার করতে হবে। পানির ও খাবারের পাত্র নিয়মিত পরিস্কার রাখতে হবে।
৮) শীতের মৌসুম মানেই রোগ বালাই বেশি এই ভুল ধারনা থেকে মুক্ত হতে হবে। আর কবুতর ঝিম ধরে বসে থাকা মানেই রোগ হয়েছে এই চিন্তা করবেন না। শীতের সময় বেশি রোগ বালাই হবার কারন খামার ব্যাবস্থাপনা, এই সময়ে দরজা জানালা এমন ভাবে বন্ধ করে রাখা হয় ফলে গ্যাস জমে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ হয়। তাই বাতাস চলাচলের ব্যাবস্থা রাখতে হবে।
শীতের মাসিক ছকঃ
১লা-৪তম দিনঃ সাল্মনেল্লা কোর্স- ২ টেবিল চামচ শাফি+ ২ টেবিল চামচ ফেবনিল+মারবেলাস ১ চামচ= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে ৪-৫ দিন সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (একটানা)। অথবা (হোমিও ব্যাপ্তেসিয়া ৩০, ১ সিসি =১ লিটার পানিতে মিক্স করেও ৫ দিন আপনি এই কোর্স করাতে পারবেন।
(বিঃদ্রঃ এই কোর্স চলাকালীন কবুতর সবুজ পায়খানা করতে পারে, আর এই অবস্থাই ঔষধ বন্ধ করা যাবে না, এটা ভিতরের জীবাণু তাকে বের করে সাহায্য করে। একটানা করাতে হবে ও ধরে খাওয়ান যাবে না ও অসুস্থ কবুতর কে খাওয়ান যাবে না, তাতে বমি করতে পারে বা সরাসরি খাওয়ান যাবে না। বাচ্চা থেক্লে বাবা-মা কে খাওয়াতে পারবেন। কারন এ সময় তারা সরাসরি কোন খাবার দেয় না। কর্প মিল্ক খাওয়ায়।তবে অসুস্থ কবুতর দের কে দিবেন না বা ধরে খাওয়াবেন না।)
৫তম দিনঃ স্যালাইন(ভেট এর) বা লেবুর রস ও লবন যোগ করে দিতে পারেন ২ চা চামচ লবন ও ১ টি লেবু ১ লিটার পানিতে।
৬ম দিনঃ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ১ মিলি/সিসি/গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিক্স করে। যারা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার সংগ্রহ করতে পারেন না তারা সাধারন ভিনেগার বা সিরকা ব্যাবহার করতে পারেন।
৭ম দিনঃ প্রবায়টিক প্রয়োগ করতে পারেন ১ মিলি/সিসি/গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিক্স করে। প্রবায়টিক হিসাবে hamdard এর এলাকুলি ব্যাবহার করতে পারেন ১ চামস ১ লিটার পানিতে বা করিয়ার গারডিজেন-এম নামে একটা পাওয়া যায় সেটাও ব্যাবহার করতে পারেন।
৮তম-১২তম দিনঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স হিসাবে (toxynil, biovit, Rena B+C) ১ সিসি/গ্রাম= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (একটানা)। ( এর সাথে যদি মনে করেন রেনা কে ভিটামিন তাও মিক্স করে ব্যাবহার করতে পারেন। ১০(দশ) লিটার পানিতে ১ গ্রাম রেনা কে এই অনুপাতে প্রয়োগ করতে চেষ্টা করবেন।) আপনি ২ দিন (toxynil) ও ২ দিন (biovit, Rena B+C)দিতে পারেন।
১৩তম দিনঃ হোমিও Belodona 30, ১ সিসি= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (মাসে ১ বার)।
(বিঃ দ্রঃ প্যারামক্সি বা এই ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। যারা মুরগির ভ্যাকসিন দিবার জন্য পারাপারি করেন তাদের জন্য এটি ভাল কাজ করবে।)
১৪তম-১৭তম দিনঃক্যালসিয়াম (Calcium Forte or Calfast etc ) এইধরনের ভাল মানের ক্যলসিয়াম প্রয়োগ করতে পারেন, ১ সিসি/গ্রাম= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে ৩-৪ দিন সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (একটানা)।
১৮তম দিনঃ এই কোর্স টি অবশ্যই পালন করার চেষ্টা করবেন। রসুন বাঁটা +মধু+লেবুর রস।(১ লিটার পানিতে ২ চা চামচ রসুন বাটা,২ চা চামচ মধু আর ১ চামচ লেবুর রস মিক্স করে দিলে ভাল।তবে পানি অবশ্য ছেকে নিতে হবে। আর লেবু চিপার সময় গ্লভস বা লেমন ইস্কুইজার ব্যাবহার করবেন।
১৯তম দিনঃ আলভিরা উপরের সবুজ খোশা বা আব্রন ছারিয়ে ভিতরের জেল ব্লেণ্ডারে জুস করে ১ লিটার পানিতে ১ টা পাতা পরিমান মত তাল মিশ্রীর সাথে মিক্স করে সাধারন খাবার পানি বা সরবত হিসাবে পরিবেশন করবেন।
২০তম দিনঃ Hiprachock প্রয়োগ করতে পারেন ১ দিন যদি আপনি মনে করেন এতে আপনার কবুতরের পড় father ভাল থাকবে ও Immune system কার্যকরী থাকতে সাহায্য করবে। ১ সিসি/গ্রাম= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে ৩-৪ দিন সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন.
২১তম দিনঃ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার দিন।( এক্ষেত্রে আমিরিকার তৈরি অ্যাপেল সিডার দিয়া উত্তম। তবে অপরিশোধিত টা পেলে ভালো এটা সাল্মনিল্লা প্রতিরোধে সাহায্য করবে। ১ লিটারে ১ সিসি বা তার কম, বেশি প্রয়োগ করবেন না তাতে বিপরিত ফল হতে পারে।)
২২তম দিনঃ লিকার চা বা গ্রীন টি দিতে পারেন ।( এটা কাঙ্কার প্রতিরোধ ও ভাল ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনে সাহায্য করবে।) এটি প্রবায়টিক হিসাবেও ভাল কাজ করবে।
২৩তম দিনঃ প্রবায়টিক প্রয়োগ করতে পারেন ১ মিলি/সিসি/গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিক্স করে।
২৪ তম থেকে ২৬তম দিনঃ লিভার টনিক দিন।( অধিকাংশ কবুতর লিভার জনিত সমস্যায় বেশি ভুগে থাকে। তাই লিভার এর ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখা জরুরি।১-২ চামচ ১ লিটার পানিতে এক্ষেত্রে Hamdard এর Cinkara, Icturn, Karminaইত্যাদি যে কোন ১টি ব্যাবহার করা যেতে পারে।)
২৭তম দিনঃ হোমিও Kali Curb 30, ১ সিসি ১ লিটার পানিতে মিক্স করে সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন। এটি শীতে আপনার কবুতরের সাধারন ঠাণ্ডা জনিয় সমস্যা থেকে নিরাপদ থাকবে।
২৮তম দিনঃ লিকার বা লাল চা বা গ্রিন টি(চা) দিয়া ভাল।( এটা কাঙ্কার প্রতিরোধ ও ভাল ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনে সাহায্য করবে।)
২৯তম দিনঃ Max Grower দিন ১ সিসি ১ লিটার পানিতে মিক্স করে সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন।
৩০তম থেকে ৩১তম দিনঃ মাল্টি ভিটামিন দিয়া ভাল।( এক্ষেত্রে Vietnam or Korea টা দিয়া যেতে পারে। সকল ভিটামিন ও মিনারেলস এর অভাব পুরন করবে।)
অনেকেই ভিটামিন ও ঔষধ এর মধ্যে পার্থক্য জানেন না। কবুতর সেক্টরের অনেক জ্ঞানীজন ভাবেন ভিটামিন একটি ঔষধ (Medicine or Drug) তাদের জন্য বলছি ভিটামিন কোন প্রকার ঔষধ নয়। এটি একটি খাদ্যসার বা খাদ্য সম্পূরক যাকে food supplement বলা হয়। যায় হোক আপনি যদি মনে করেন বা আপনার যদি পছন্দ না হয় ভিটামিন মিনারেলস দিতে তাহলে আপনাকে ধন্যবাদ। যারা এটা অনুসরণ করার ইচ্ছে রাখেন তাদের জন্য বলি যে, এই ছক যে আপনাকে অনুসরন করতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নাই, এটা আপনার পছন্দ অনুযায়ী পরিবর্তন করে নিতে পারেন বা কাট ছাট করেও তৈরি করে নিতে পারেন। সৌজন্যে ঃ কাজী কবুতর খামার