বশিরুল ইসলাম-
নতুন ফসল ব্রাসেলস স্প্রাউট ঃ পাশ্চাত্যের ব্রাসেলস স্প্রাউট কপি জাতীয় সবজি এখন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে সফলভাবে চাষ হচ্ছে- যা বাংলাদেশের আবহাওয়ার চাষ হওয়া প্রথম। প্রতিটি পাতার গোড়ায় বাধাকপির ন্যায় একটি করে ছোট কুড়ি হয়। এ কূড়ি বা বাড টি ব্রাসেলস স্প্রাউট, যা খাওয়া হয়। এই অসাধ্যকে সম্ভব করেছেন শেকৃবি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসনাত সোলায়মান। এই সবজির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল অন্যান্য কপিজাতীয় সবজির তুলনায় এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, এ, কে প্রচুর পরিমানে বিদ্যমান । তাছাড়া ক্যন্সার প্রতিরোধী উপাদান – গ্লুকোসিনোলেটস পরিমান সর্বাধিক। তার এই সাফল্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামার উদ্দিন আহাম্মদ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. হাসনাত সোলায়মান বলেন, আমাদের দেশে এ সবজি নতুন হলেও শীতপ্রধান অঞ্চলের জনপ্রিয় সবজি ব্রাসেলস স্প্রাউট। কিন্তু আমাদের দেশে এই সবজি চাষ হচ্ছিল না। এই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন ইংল্যান্ড থেকে বীজ এনে দেয় দিলে গবেষনারত শিক্ষার্থী নওরিন অন্তরা সহযোগিতা এবারই প্রথম এই শীতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা মাঠে ব্রাসেলস স্প্রাউট ভাল ফলন হয়েছে। আশা করছি, এখন থেকে নিয়মিতভাবে এ সবজি চাষ করা যাবে এবং কৃষকরা বাণিজ্যকভাবেও চাষ করতে পারবে।
ব্রাসেলস স্প্রাউটের চাষ প্রণালি সম্পর্কে ড. হাসনাত সোলায়মান বলেন, চাষাবাদ পদ্ধতি অনেকটা বাধাকপির মতো। বীজও দেখতে বাঁধাকপির মতো। বীজ থেকে চারা হয়। এ চারা পরবর্তীতে মুল জমিতে লাগাতে হয়। গাছের উচ্চতা জাতভেদে ২-৪ ফুট বা তারও বেশী হতে পারে। ফসলের জীবনকাল ৯০ থেকে ১৫০ দিন। সাধারনত দু মাস পর থেকে গাছে স্প্রাউট আসা শুরু হয়। একটি গাছে ৪০-৬০ টি স্প্রাউট হয়। গাছে যতগুলো পাতা থাকবে ততগুলো স্প্রাউট হবে। স্প্রাউটগুলো ৭ থেকে ১০ সেমি আকারের এবং ওজন ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম হতে পারে। স্প্রাউট আসার ১৫ থেকে ২০ দিন পর সংগ্রহ করা যায়। সপ্তাহে ১থেকে ২ বার গাছ থেকে স্প্রাউট তোলা যায়।
কপিজাতীয় ফললের তুলনায় ব্রাসেলস স্প্রাউটের জীবনকাল দীর্ঘ হওয়ায় সারের মাত্রা একটু বেশী লাগে। ইউরিয়া সার ৩ থেকে ৪ বারে দিতে হয়। দ্রুত ফলন পেতে চাইলে চারা লাগানোর দু মাস পর গাছে মাথা ভেঙে দিতে হবে। একে টপিং বলে। টপিং এর ফলে স্প্রাউটের সংখ্যা কমে গেলেও স্প্রাউটের আকার ও ওজন বাড়ে। ব্রাসেলস স্প্রাউটের রোগ বালাই অনেকটা বাধাকপির মতো। তাপমাত্রা বাড়লে গাছের বয়ষ্ক পাতায় অল্টারনারিয়া ছত্রাকজনিত দাগ ও ব্লাইট রোগ দেখা দেয়। আবার এক ধরনের লেদাপোকা অনেকসময় স্প্রাউটগুলো বাহির থেকে খেয়ে ফেলে। যথাযথ ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক স্প্রে করে এগুলো সফলভাবে দমন করা যায়।
ড. হাসনাত সোলায়মান আরও বলেন, ব্রাসেলস স্প্রাউটের বানিজ্যিক চাষের আগে আরো কিছু গবেষণা প্রয়োজন রয়েছে। যেমন, চারা লাগানোর সময়কাল নির্বাচন, তাপসহনশীল জাতসমূহ নির্বাচন, স্বল্প জীবনকালের জাত উদ্ভাবন, টপিং এর সময়কাল নির্ধারন, ফলন বাড়াতে বিভিন্ন সারের ব্যাবহার ও মাত্রা নির্ধারন, হরমোন প্রয়োগে আগাম ফলন সম্ভাব্যতা যাচাই, রোগ বালাই নিয়ে গবেষনা, পেস্ট রিস্ক এনালাইসিস করা, উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন, বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সর্বোপরি উৎপাদন খরচের সাথে লাভের সম্ভাব্যতা যাচাই। এই গবেষণাগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্রাসেলস স্প্রাউট চাষের লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন সম্ভব।