সবজি সম্ভাবনাময় সেক্টর
কৃষি সংবাদ ডেস্কঃ
কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সবজি আমাদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় সেক্টর ও অর্থনীতির একটা বিশেষ দিক। এর মাধ্যমে আমরা রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে পারবো। কৃষিকে বহুমুখীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। শুধু গার্মেন্টসের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আমরা কৃষিসহ অন্যান্য সেক্টরকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি।
আজ শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটরিয়ামে জাতীয় সবজি মেলার সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন; কি করছেন আপনারা ? এর সাথে জড়িত সবাই বসেন কর্মসূচি নেনে এবং আমি বাস্তবায়ন দেখতে চাই। মাশরুম দেশের পাঁচ তারাকা হোটেলসহ বিদেশে বেশ চাহিদা রয়েছে,এর উৎপাদন বাড়াতে হবে কি করে এর বাজার সৃষ্টি করতে হবে তা বেড় করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে হবে। আমি ফলাফল দেখতে চাই। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ২১ অঙ্গিকারের মধ্যে ২টি কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। কন্ট্রাক গোরয়ারস বৃদ্ধি করতে হবে। আলু ও সবজি সংরক্ষণাগার নেই কেন?
আলু ও সবজি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আলুতে আমাদের ৩০ থেকে ৪০ লাখ টন উদ্বৃত্ত। এ পরিস্থিতিতে আমাদের কৃষিকে যদি লাভজনক করতে হয়, এটাকে বহুমুখীকরণ করতে হবে। অন্যান্য অপ্রচলিত ফসলগুলো উৎপাদন করতে হবে। আলু আমাদের নটিফাইড ক্রপস ছিলো। এটকে আমরা তুলে দিয়েছি। আমাদের যারা আলু উৎপাদন ও রপ্তানি করে থাকে, তারা বিদেশ থেকে ভালো জাত নিয়ে আসতেছে । বিএডিসিও ভালো জাত আনতেছে। আগামী বছরই ভালো জাত এনে আমরা বিদেশে মানসম্পন্ন আলু রপ্তানি করতে পারবো। সবজিতে একটু খরচ বেশি। কৃষক যদি লাভ না করতে পারে, তাহলে তারা চাষ করবে কেন? ধান করেও তারা লাভবান হচ্ছে না। সবজি এ মুহূর্তে একটু দাম বেশি হলেও কিছুদিন পরে এ আলু বা টমেটো কৃষক বিক্রি করতে পারবে না।
সবজি নিরাপদ কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিজ্ঞানীরা এবং যারা সবজি নিয়ে কাজ করে, তারা মেলায় অনেকগুলো প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। একটু সময় লাগবে আস্তে আস্তে মানুষ সচেতন হচ্ছে। যারা উৎপাদন করছে তারা এটাকে লাভজনক করার জন্য ফেরোমন, নিমসহ অন্যান্য জৈব উপাদান ব্যবহার করছে। যা মানুষের শরীরের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। সবজি উৎপাদনের প্রযুক্তি আমাদের হাতে আছে, এটা যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি, শুধু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের চাহিদা নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তনি করতে পারবো।
পেঁয়াজ সম্পর্কে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষির একটা বড় সমস্যা, এটা প্রকৃতি নির্ভর। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমাদের পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত হবে। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি পেঁয়াজের মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি না করেতে। আমাদের নজরদারি করতে হবে, তবে নিয়ন্ত্রণ বাজার করা যাবে না।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, অর্থনীতির মেরুদন্ড হচ্ছে কৃষি। এখন খাদ্য উৎপাদনই প্রধান এ দিন এখন শেষ। এখন নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের দিন।
কৃষি সচিব মো: নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান। ‘পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ সবজি চাষ’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ড. শাহাবুদ্দীন আহমদ। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মুঈদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার।
কৃষিমন্ত্রী এর আগে কেআইবি চত্বরের তিন দিনের জাতীয় সবজি মেলা ২০২০ এর উদ্বেধন করেন। তিনি এ সময় বিশেষ অতিথি ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মেলার বিভিন্ন স্টল ও প্যাভেলিয়ন ঘুরে দেখেন। মেলা উপলক্ষ্যে বিকাল ৩:০০ টায় মানব উদ্দীপন বন্ধন অনুষ্ঠিত হয় বিএআরসি চত্বর হতে বিজয় সরণি মোড় পর্যন্ত। মানব উদ্দীপন বন্ধনে সবজির বিভিন্ন ধরনের প্লেকার্ড ও ব্যানার নিয়ে অংশ নেয় কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ সংস্থাগুলো।
মেলায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৬৫ টি স্টল ও ৩টি প্যাভেলিয়ন অংশ নিচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকছে। মেলা চলবে ০৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ‘পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ সবজি’ প্রতিপাদ্যে পঞ্চমবারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।