মোঃ মোশারফ হোসেন, শেরপুর:
দুইটি পাতা একটি কুঁড়িরদেশ সিলেট হলে শ্রীমঙ্গল তার রাজধানী। ১৯৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে চা আবাদের গোড়াপত্তন হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম পাহাড়ী টিলার চা বাগান যা ১৮৫৭ সালে বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে আসে। কৃষি সম্ভাবনাময় এদেশে সমতল ভূমিতে চা চাষ করা হচ্ছে। ইতি মধ্যে পঞ্চগড়ের চা আন্তর্জাতিক ভাবে সুনাম অর্জন করেছে। শেরপুরের নকলা উপজেলা টালকী ইউনিয়নের রামেরকান্দি গ্রামের মো. রোকন উদ্দিন সাগরের শখের চা বাগান থেকে চা উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি চা পাতা ২৩০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। অনুকরন করে অনেকেই কাঠ/ফলজ বাগানে চা চাষ করার অগ্রহ প্রকাশ করছে।
যেভাবে সমতল ভূমিতে চা চাষ শুরু হয়
সাগরের সাথে কথা বলে জানা যায়, লালমনির হাটে ভ্রমন কালে কয়েক টি চা গাছ এনে বাড়ির আঙ্গিনায় রোপন করে। চা গাছের বেড়ে উঠা দেখেই বানিজ্যিক ভাবে চাষের নেশা চেপে বসে। ২০১২ সালে ইচ্ছা পূরনের লক্ষ্যে পঞ্চগড় থেকে ৭হাজার চা চারা কিনে এবং চাষের প্রাথমিক ধারনা নিয়ে এসে আড়াই একর জমিতে রোপন করে তিন শ্রমিক নিয়ে সেবা করা শুরু করে। বর্তমানে ৭ জন শ্রমিক রয়েছে। তিনি চা চাষের পাশাপাশি মাছ চাষ ও গরুর খামার শুরু করেছেন।
রোপনের দুই বছর পর তিনি কিছু কচি চা পাতা নিয়ে ঘরোয়া ভাবে চা তৈরি করে পরিবারের সবাই পান করে। সবার কাছে চা ভালমানের চা মনে হওয়ায় বাগানের তদারকী বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে তিনি বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিষাক্ত রং ও ঔষধ ছাড়াই চা উৎপাদন করে সাগর চা নামে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করছেন। সাগর চা এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলা থেকে জেলাতে। সাগর বলেন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জেলার অনেকেই চা চাষ করবে। ফলে কোন এক সময় শেরপুর জেলাতে চা শীল্প গড়ে উঠতে পাড়ে। তাতে পতিত জমি কৃষি আওতায় আসাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে,দেশ হবে অর্থনৈতি ভাবে লাভবান।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জনাযায় ২০০২ সলে ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ির উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদ দেশে চা চাষের সম্ভাবনা যাচায়ের উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ দল ২২-২৪ এপ্রিল ২০০২ তরিখে ঐ এলাকা পরিদর্শন করেন। তাদের প্রতিবেদন অনুুযায়ী জেলার৭হাজার হেক্টর পাহাড়ী জমিতে চা চাষ করা সম্ভব। এর লক্ষ্যে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহনের প্রস্তাব করেন তারা। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে তা ফাইল বন্দি।
যে সব জমি চা চাষের উপযোগী সে সব জমিতে অন্য কোন লাভজনক চাষ করা সম্ভব নয়। তাই এই প্রকল্পটি চালু করতে পারলে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বেকার সমস্যার সমাধান হতো বলে অনেকের ধারনা। এ বিষয়ে নকলা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন সমতল ভূমিতে চা চাষ এক বিরল উদ্যোগ। সাগরের মত সারা দেশের সকল পতিত জমিতে বিশেষ করে ফলজ/কাষ্টল বাগানে চা বাগান গড়ে তুলতে পারলে কৃষি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। ফলে লাখো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
পরিশেষে
বাংলাদেশ সরকারের সফল কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এই বিষয়ে উদ্যোগ নিলে শেরপুরে গড়ে উঠতে পারে চা শিল্প,দুর হতে পারে বেকারত্ব,সৃষ্টি হতে পারে সাগরের মতো হাজারো কর্মসংস্থানের এমনটাই অভিমত দিচ্ছেন শেরপুর খামার বাড়ির উপ পরিচালক আশ্রারফ উদ্দিন ও কৃষিবিদরা।