সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার জন্য চাই সমন্বিত উদ্যোগ -শেকৃবি উপাচার্য

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার জন্য


খালেদ মাহমুদ,শেকৃবি প্রতিনিধি

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার জন্য
গত ২রা এপ্রিল থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা (এইচ.এস.সি) এবং পরীক্ষা শেষ হবে ২৭ মে। চলমান এই এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হবে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শ্রেণী প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা পৃথক পৃথক ভাবে অনুষ্ঠিত হয় যা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি তো বটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের টাকা উপার্জনের একটি বাণিজ্যিক খাত ও বলা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আলাদা আলাদা ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার ফলে বছরের এই সময়টাতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের দিশেহারা হয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাগলের মত ছুটে বেড়াতে হয়।

ফলে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয় এই কোমলবতী শিক্ষার্থীদের। আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে কিছু বাড়তি অর্থ উপার্জন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তি নিয়ে ভাবার কারোও কোনো সময় নেই। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়াটির সমস্যার সমাধানে কারোও কোন মাথা ব্যাথা নেই। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় খুব সহজেই মিলে সবন্বিত ভাবে একটি ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে।সবন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বেশ ইতিবাচক দিক আছে। সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হচ্ছে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে পারবে। ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের দেশের এক মাথা থেকে অন্য মাথায় যাতায়াতের খরচ ও কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। একটি মাত্র রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকের যাতায়াত কষ্ট ও ভোগান্তি কমে যাবে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সবন্বিত ভর্তি পরীক্ষা রূপরেখা দেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের মত ভর্তি পরীক্ষার মত সব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একযোগে সবন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা একদিনে হতে পারে। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করা হলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আগামী বছরগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আলাদা আলাদাভাবে দিতে হবে না।

এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানান, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সবন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কিছুটা কমে যাবে। ইতিমধ্যে মাননীয় মহামান্য রাষ্ট্রপতি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একটি সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু সেই অনুরোধ আর বাস্তবায়ন হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগের মত পৃথকভাবে তাদের ভর্তি পরীক্ষা নেয়। উক্ত সভায় বেশ কিছু প্রতাপশালী বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত পদ্ধতির বেশ ইতিবাচক দিক থাকলেও কিছু নীতিবাচক দিকও রয়েছে যেমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আকাঙ্খা অনুযায়ী মেধাবী শিক্ষার্থী পাবে না। এ সমন্বিত পদ্বতিতে পরীক্ষা হলে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একটি মাত্র পরীক্ষা দিবে সেক্ষেত্রে যেকোনো কারনে তার পরীক্ষা খারাপ হতেই পারে ফলে তার জীবন থেকে একটি বছর সময় নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া পরীক্ষার কেন্দ্রে নিরাপত্তা ও প্রশ্নপত্র ফাঁস আলোচনার বিষয় বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নের একটা প্যাটার্ণ থাকে কিন্তু সমন্বিত ভাবে ভর্তি পরীক্ষার হলে সেটা করা সম্ভব হবে না। অবশেষে তিনি বলেন, এই পদ্বতিতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য নীতিমালা প্রয়োজন। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত পদ্ধতিতে নেওয়ার জন্য যেমন জোর পদক্ষেপ দরকার তেমনি চাই সমন্বিত উদ্যোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *