সরজমিনে ভেজাল সার চেনা কৃষকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

কৃষিবিদ নূরুল হুদা আল মামুন

মাটির স্বাস্থ্য তথা উAdultrated Fartilizer Identificationর্বরতা ও ফসলের উৎপাদনশীলতা ধরে রাখার জন্য সুষম মাত্রায় নির্ভেজাল সার ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী।অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফসল উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হচ্ছে।  কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল সার উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে এক দিকে সাধারণ কৃষককে প্রতারণা করে আসছে, অন্যদিকে জমির উর্বরতা ও ফসলের উৎপাদনশীলতার ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। এমতাবস্থায় মাঠ পর্যায়ে ভেজাল সার সনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। কারণ গবেষণাগারের মাধ্যমে ভেজাল সার সনাক্তকরণ একটি সময়, শ্রম ও ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার, যা সবসময় সম্ভব হয় না। সার ডিলার, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী, এনজিও কর্মী, এমনকি প্রগতিশীল কৃষকও একটু সচেতন হলেই অতি সহজেই ভেজাল সার সনাক্তকরণ করতে পারনে।
ভেজাল সারঃ ভেজাল সার বলতে বোঝায় কোন সারের মধ্যে বিনির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টি উপাদান না থাকা, সারের মধ্যে সারের ন্যায় দেখতে কোন অপদ্রব্য বা অন্য কোন অপদ্রব্যকে সার হিসেবে উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয় করা বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে দোকান বা গুদামঘরে রাখা।
শনাক্তকরণঃ এখানে মাঠ পর্যায়ে কৃষকগণ যে সব সার বেশী ব্যবহার করেন, সেগুলোর ভেজাল সনাক্তকরণের সহজ উপায় বর্ণনা করা হলো-
 ইউরিয়া সারঃ
 এক চা চামচ ইউরিয়া সার দুই চা চামচ পরিমাণ পানির মধ্যে দিলে স্বচ্ছ দ্রবণ তৈরী করবে এবং দ্রবণে হাত দিলে ঠান্ডা অনুভূত হলে তা নির্ভেজাল ইউরিয়া সার।
 ৪-৫ টি ইউরিয়া সারের দানা মোমবাতির শিখায় গরম করলে অথবা এর সাথে সামান্য পরিমাণ খাওয়ার চুন মিশিয়ে গরম করলে ঝাঁঝালো এ্যামোনিয়া গ্যাসের (আগের রাতে ডিম, মাছ, মাংস খেয়ে থাকলে প্রসাবের যে গন্ধ পাওয়া যায়) গন্ধ পাওয়া গেলে তাতে যে নাইট্রোজেন আছে তা নিশ্চিত হলো। অর্থাৎ সঠিক ইউরিয়া সার।
টিএসপি সারঃ
 আসল টিএসপি সার দাঁত দিয়ে ভেঙ্গে দিলে অল্প স্বাদযুক্ত ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যাবে (পেটে গ্যাস হলে মাঝে মাঝে টক যে স্বাদ পাওয়া যায়)
 এক চা চামচ টিএসপি সার আধা গ্লাস ঠান্ডা পানিতে মিশালে সার সম্পূর্ন দ্রবীভূত হয়ে ডাবের পানির মত পরিস্কার দ্রবন তৈরি করবে, ভেজাল হলে ঘোলা দ্রবন তৈরি হবে, অধিক ভেজাল হলে পড়বে।
ডিএপি সারঃ
 ১-২ চা চামচ ডিএপি সার একটি চামচের উপর খোলা অবস্থায় ১-২ ঘন্টা রাখলে যদি তা ভিজে না উঠে তবে ধরে নিতে হবে যে নমুনাটি ভেজাল ডিএপি সার।
 হাতের তালুতে সামান্য ডিএপি সার নিয়ে তার মধ্যে সামান্য খাওয়ার চুন মিশিয়ে আঙ্গুল দিয়ে নাড়াচাড়া করলে অ্যামোনিয়া গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাবে।
 আধা চামচ ডিএপি সার জলন্ত মোমবাতির শিখায় গরম করতে থাকলে প্রথমে চটচট শব্দ হবে, এরপর বুদবুদ করে ফুটতে থাকবে এবং অবশেষে চামচে সামান্য সাদা আবরণ দেখা যাবে। বুদবুদ উঠার সময় ঘ্রাণ নিলে অ্যামোনিয়া গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাবে।
এমওপি সারঃ
 এমওপি সারের রং লাল হলেও হাতে নিয়ে ঘষলে এ রং হাতে লাগাবে না কিন্ত ভেজাল হলে হাতে রং লাগবে।
 আধা চা চামচ এমওপি সার আধা গ্লাস পানিতে মেশালে সঠিক এমওপি সার দ্রবীভূত হয়ে পরিস্কার দ্রবণ তৈরী করবে।
 কিন্তু ভেজাল হলে দ্রবণের রং লাল বা অন্য কোন রংয়ের হতে পারে। বালি কাঁচের গুড়া, মিহি সাদা পাথর, ইটের গুড়া মেশালে তা তলানী আকারে গ্লাসের তলায় জমা হবে।
 হাতের তালুতে সামান্য এমওপি সার নিয়ে তার মধ্যে সামান্য পানি দিলে অনেক ঠান্ডা অনুভূত হলে বোঝা যাবে আসল এমওপি সার।এসওপি সারঃ
 ১-২ চামচ এসওপি সার একটি কাঁচের পাত্রে রেখে কয়েক ফোটা পাতলা (১০%) হাইড্রোক্লোরিক এসিড মিশালে যদি বুদবুদ উঠে তবে ধরে নেওয়া যাবে যে, নমুনাটিতে চুনজাতীয় পদার্থ ভেজাল হিসেবে মিশ্রিত করা হয়েছে অর্থাৎ নমুনাটি ভেজাল।
জিপসামঃ
 জিপসাম সার, দেখতে সাদাটে পাউডারের মত।
 বাতাসের আদ্রতায় বা অল্প পানি মিশালে এর নমুনার গায়ে ভেজা তুলা তুলা ভাব দেখা যায়। যদি এরকম না হয় তাহলে বুঝতে হবে পানি মেশানো হয়েছে অথবা ভেজাল সার। এসওপি সারের পরীক্ষার ন্যায়।বোরন সারঃ
 বোরণ সার দেখতে হালকা মিহি পাউডারের মত।
 আধা গ্লাস পানিতে এক চামচ বরিক এসিড বা সলুবর মিশালে সার সম্পুর্ন গলে যাবে এবং কোন তলানী পড়বে না।
 সলুবর ওজনে হালকা বিধায় একই ওজনের বরিক এসিড বা বোরাক্সের তুলনায় এর প্যাকেট দ্বিগুন বড় হয়।
জিঙ্ক বা দস্তা সারঃ
 যে কোন ধরনের আসল দস্তা সার হাতের তালুতে নিয়ে সামান্য পানি মিশিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকলে সার গলতে থাকবে এবং আস্তে আস্তে গরম অনুভূত হতে থাকবে।
 পানি যত বেশি গরম হবে বুঝতে হবে ঐ সারের নমুনায় তত বেশি দস্তা আছে অর্থাৎ সারটি তত বেশি সঠিক।
 মনোহাইড্রেট জিংক সালফেট দেখতে দানাদার কিন্ত হেপ্টাহাইড্রেট জিংক সালফেট স্ফটিকাকার বা চিনির দানার ন্যায়।
 হেপ্টাহাইড্রেট জিংক পানিতে সম্পূর্নভাবে গলে যায়, কোন তলানী পড়ে না কিন্তু মনোহাইড্রেট জিংক সার পানিতে সম্পূর্ন গলে না এবং দ্রবণ ঘোলাটে হয়।
মিশ্র সারঃ
 এনপিকেএস মিশ্র সারের ভেজালের মাত্রা ও প্রকৃতি বিচিত্র ধরনের হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে এ সার সনাক্তকরণ সহজ নয়।
 তবে মাটি বা ডলোমাইট দিয়ে তৈরি কালো রংয়ের প্রলেপ দিয়ে এ মিশ্র সার তৈরি করা হলে, আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে সহজেই গুড়া হয়ে যাবে।
 এছাড়া দানার ভিতর ও বাহিরের প্রলেপের রং ভিন্ন হবে।এভাবে মাটি দিয়ে তৈরি ঘচকঝ মিশ্র সার সহজে সনাক্ত করা যায়।সীমাবদ্ধতাঃ এ পরীক্ষার মাধ্যমে সারের পুষ্টি উপাদান আদৌ আছে কি না তার ধারণা পাওয়া যাবে, কিন্তু পুষ্টি মানের পরিমাণ বোঝা যাবে না। সারের পুষ্টিমানের সঠিক পরিমাণ জানতে হলে অবশ্যই সরকার বিনির্দিষ্ট গবেষণাগারে প্রেরণ করতে হবে।

লেখকঃ মৃত্তিকা বিজ্ঞানী, পিএইচডি গবেষক,মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *