সরিষার ফলনে কৃষকের মুখে রঙিন হাসি

সরিষার ফলনে

সরিষার ফলনে

মো. মোশারফ হোসাইন, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:

সরিষার ফলনে ঃ শেরপুরের নকলা উপজেলার নদীতে জেগে ওঠা চরাঞ্চলসহ যে দিকে দৃষ্টি যায় দিগন্তজুড়ে শুধু সরিষার মাঠ নজরে পড়ে। সরিষা ফুলের হলুদ আভা দেখে কৃষকের লালিত রঙিন স্বপ্ন গুলো বাম্পার ফলনে বাস্তবে রুপ নিয়েছে। তাদের মুখে ফুটে উঠেছে রঙিন হাসি। নামে মাত্র শ্রম, প্রায় বিনা খরচ ও সেচে দ্বিগুণ লাভ পাওয়ায় কৃষকরা দিন দিন সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। গত বছরের অর্জন আর চলতি বছরের লক্ষমাত্রা ছিলো একহাজার ৪৫০ হেক্টর জমি, কিন্তু অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষকের আগ্রহে চলতি মৌসুমে অর্জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে একহাজার ৬৫০ হেক্টরে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৪০০ কৃষককে এক বিঘা করে ৪০০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষের জন্য প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও রাসায়নিক সার দেওয়া হয়।
বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ছোট মোজারের কৃষক নজরুল, আজিজুল, পোলাদেশীর সুরুজ মিয়া, ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ছাইদুল হক, সাধারণ সম্পাদক হেলাল, সদস্য ঈসমাইল ও বেলাল, বাছুর আলগার মোকসেদ আলী মাস্টার, বেলায়েত হোসেন শিপু, চকবড়ইগাছির শফিক মিয়া ও কামরুজ্জামানসহ কয়েকজন জানান, সরিষাতে উৎপাদন ব্যয় কম, কিন্তু রাভ বেশি হয়। তাই আগামীতে আগাম আমন ধান কাটার পরে তাাদের সব জমিতে সরিষার আবাদ করবেন। কৃষকরা জানান, সরিষা উঠিয়ে ওই ক্ষেতে বোরো ধান রোপন করলে, চাষ, সার ও পরিশ্রম কম লাগে, কিন্তু ফলন ভালো হয়।
উপসহকারী কৃষি অফিসার (এসএএও) আনোয়ার হোসেন, আশরাফুল আলম ও মশিউর রহমানসহ অনেকে জানান, নকলা উজেলার মধ্যদিয়ে অন্তত ৫টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে এবং এখানে ১১টি বিল রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদী-বিল গুলো পানিতে টুইটুম্বুর থাকলেও, শুকনা মৌসুমে অধিকাংশ নদী ও বিলগুলো শুকিয়ে যায়। নদী সংস্কার বা খননের অভাবে শীত মৌসুমে পানি না থাকায় উজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র, ভোগাই, বলেশ্বর, মৃগী, সুতি ও দশানি নদীর বুকে বিভিন্ন স্থানে চলছে চাষাবাদ। বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রতিটি নদীর বুকে বোরো ধানের বীজতলা, আলু, সরিষা, কপি, বেগুন, টমেটো, মরিচসহ শীতাকলীন শাক সবজি, কালাই ও বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়ে আসছে। বিশেষ করে এবার নদীতে ভেসে উঠা চরে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি নদীর চরে সরিষার হলুদ হাসি সবার নজর কাড়ছে। তারা জানান, উপজেলায় কর্মরত সব উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিজ নিজ কর্ম এলাকার আগাম আমন ধান চাষীদের সরিষা চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং কৃষকরা কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ফলে এবছর সরিষা আবাদে লক্ষ মাত্রার চেয়ে অর্জন বেড়েছে। আগামীতে সরিষার আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তারা আশা ব্যক্ত করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার (এইও) কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মনি জানান, এবছর নকলা উপজেলায় বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-১০ ও স্থানীয় টরী-৭ জাতের সরিষা চাষ করা হলেও বারি সরিষা-১৪, বিনা সরিষা-৯ ও টরী-৭ জাতের সরিষা বেশি আবাদ হয়েছে। তিনি জানান, উপজেলার চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, টালকী, বানেশ্বরদী, উরফা, গনপদ্দী, নকলা, গৌড়দ্বার, চরঅষ্টধর ইউনিয়নসহ সর্বত্রই সরিষা আবাদ হলেও চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, উরফা ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নে আবাদ বেশি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার (ইউএও) কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, সরিষা চাষের উপযোগী সব জমিকে সরিষা আবাদের আওতায় এনে জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা ও কৃষি পণ্য উৎপাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরিষা বাড়াতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতি হেক্টরে ১.৫ মেট্রিকটন হারে মোট ২ হাজার ১৭৫ মেট্রিকটন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ মাত্রার চেয়ে আবাদ ২০০ হেক্টর জমিতে বেশি হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৫ মেট্রিকটন সরিষা উৎপাদন হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন।

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *