নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
হাওরে ৩ মাসেই বোরো ধান : বাংলাদেশের মোট আয়তনের ছয় ভাগের এক ভাগ হাওরাঞ্চল। ৭টি জেলায় বিস্তীর্ণ হাওরকেন্দ্রীক জীবন নির্বাহ করে প্রায় ২ কোটি মানুষ। বোরো ফসলের ভান্ডার হাওরে বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে আকস্মিক বন্যা বা পাহাড়ি ঢলজনিত বন্যা পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন অনেক আগেই সংঘটিত হচ্ছে। হাওরে সচরাচর এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের প্রথম দিকে বন্যা হলেও বর্তমানে মার্চের শেষ বা এপ্রিলের প্রথম দিকে এমন সময় বন্যা আসছে যখন বোরো ধান কেবল পাকা শুরু হয়।
ফলে ফসল ঘরে তোলার আগে বন্যার পানিতে ডুবে ব্যাপক ফসল হানি হয়। বিস্তৃীর্ণ হাওর অঞ্চলে বোরো ফসল রক্ষায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি’র) কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের এনএটিপি-২ প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় স্বল্প মেয়াদি জাতের ধান, বিভিন্ন উফসি জাতের ধান, লম্বা জাতের ধান, প্রচলিত জাতের ধান, বেশি বয়সে চারা রোপণ, আগাম চারা রোপণসহ সমন্বিত কৌশল অবলম্বন করার পাশাপাশি জমির ধান তিন-চতুর্থাংশ পাকলেই ঘরে তোলার মাধ্যমে সহজেই আগাম বন্যা মোকাবেলা করা যায়।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সম্ভাব্য বন্যার তারিখ ধরে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বল্প মেয়াদি ধান যেমন বিনা ধান-১৪,১০,১৮ কিংবা ব্রি ধান-২৮,৫৮,৮১ রোপণ করতে পারলে সহজেই আকস্মিক বন্যায় ফসল হানি এড়ানো সম্ভব। এছাড়া কান্দার জমিতে দীর্ঘ মেয়াদি জাত যেমন ব্রি ধান-২৯,৮১ রোপন করা, নীচু জমিতে ব্রি ধান-২৮ কিংবা বিনা ধান-১৪ রোপণ করে তিন মাসের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়। কোন কারনে নাবীতে রোপণ করতে হলে একটু বয়ষ্ক ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করেও ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে চলতি বছর জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে জমিতে চারা লাগিয়ে এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে ফসল কাটা সম্ভব হয়েছে। বিনা ধান ১৪ লাগানোর মাধ্যমে ১৩০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছে। এতে হেক্টর প্রতি ৬.২ টন ফলন পাওয়া গিয়েছে। প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মো: আশরাফুল ইসলাম বলেন, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হাওরে বোরো ধান চাষ করলে আগাম বন্যায় ফসলহানীর মাত্রা কমিয়ে আনার পাশাপশি হাওরাঞ্চলে জীবনমানের উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব।