কৃষিসংবাদ
বিশ্বের অন্যতম মৎস্যসম্পদ কাঁকড়ার প্রধান প্রজননক্ষেত্র হলো ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। অন্যদিকে বিশ্বের প্রধানতম ম্যানগ্রোভ এলাকা হলো সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা। এখান থেকে সংগৃহীত কাঁকড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে থাকে। এসব কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দুই মাস। প্রজনন মৌসুমে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের লোনা পানিতে এরা ডিম ছাড়ে। মাঘ মাসের প্রথম অমাবস্যায় সবচেয়ে বেশি ডিম দিয়ে থাকে স্ত্রী কাঁকড়া।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ দু’মাসজুড়ে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং, চীনসহ বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এসব উৎসবের খাদ্য তালিকায় ডিমওয়ালা কাঁকড়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া আš-র্জাতিক বাজারে ডিমওয়ালা কাঁকড়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি এবং এ সময় দামও থাকে সর্বোচ্চ। তাই বেশি দামের আশায় এবং সুন্দরবন ছাড়া অন্য ম্যানগ্রোভ এলাকায় প্রজননকালীন কাঁকড়া শিকার বন্ধের সরকারি উদ্যোগ না থাকার ফলে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকারে চলে মহোৎসব।
শত শত শিকারি ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার করছে। এক কাঁকড়া শিকারি জানান, প্রতিদিন ৫-৭ কেজি কাঁকড়া পান। ২-৩টি কাঁকড়ায় এক কেজি হয় এবং প্রতি কেজি ছয়-সাতশ’ টাকায় বিক্রি করেন। এখন কাঁকড়া বেশি ধরা পড়ছে এবং দামের দিক দিয়েও ভালো। সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণকারী জেলে আজিজুর রহমান, স্বপন মণ্ডল ও মহসীন আলম জানান, বর্তমানে সরকারিভাবে কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ থাকার কারণে তারা মাছ ধরার পাস নিয়ে বনে ঢুকে কাঁকড়া শিকার করছেন। আড়তদাররা জানান, এখন ডিমওয়ালা কাঁকড়া পাওয়া যায় বলে ঢাকার আড়তে এসব কাঁকড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে এবং দামের দিক দিয়েও ভালো। অন্য সময় ডিমওয়ালা কাঁকড়া পাওয়া যায় না বলে তেমন চাহিদা থাকে না। মংলাসহ আশপাশ এলাকার অর্ধশতাধিক আড়তদার প্রতিদিন কয়েকশ’ মণ ডিমওয়ালা কাঁকড়া ঢাকায় পাঠান বলেও জানান।
এ ব্যাপারে মংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ অঞ্চল কাঁকড়ার প্রজনন ক্ষেত্র হলেও শুধু সুন্দরবন এলাকায় প্রজননকালীন শিকার নিষিদ্ধে আইন রয়েছে। এ ছাড়া কাঁকড়া শিকার বন্ধে তেমন কোনো নির্দেশনা না থাকায় মৎস্য বিভাগ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। এদিকে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণের পাস-পারমিট বন্ধ রয়েছে। তবে চোরাই পথে কাঁকড়া আহরণের প্রবণতা বন্ধে বন বিভাগের টহল ও নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। সমকাল।।