মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :
পুঁইশাক চাষ করে আর্থিক ভাবে লাভবান
নাম মাত্র শ্রমে ও উৎপাদন খরচ কমে, লাভ বেশি হওয়ায় শেরপুরের নকলা উপজেলার উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে বেলে বা বেলে-দোআঁশ মাটিতে পুঁইশাক চাষ করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। খরচের তুলনায় প্রায় ৭ গুণ লাভের এই শাক চাষে নকলার কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন শুধু বাড়ছেই।
কথায় আছে ‘মাছের মধ্যে রুই, শাকের মধ্যে পুঁই’; অর্থাৎ দুটিই আমিষ জাতীয় খাদ্য এবং লোভনীয়। এই শাকের পাতা ও ডাটা বিভিন্ন রোগ নিরাময়েও বেশ কার্যকরী। মসুরের মতো গুণ সমৃদ্ধ বলেই গেল বছরের চেয়ে চলতি বছর উপজেলায় পুঁইশাকের আবাদ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। গেল বছর চাষ হয়েছিলো মাত্র ৪৫ হেক্টর, আর এবছর তা বেড়ে ১৩০ হেক্টরে উন্নিত হয়েছে বলে তথ্য সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার পুঁইশাক রাজধানী ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী জেলা ও উপজেলায় যাচ্ছে।
পূর্বলাভার শাক চাষি শহিদুল জানান, তাই বলাযায়, পুঁইশাক চাষে শুধুই লাভ। এটি খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরা, চাষে বাড়তি সেচ, সার, তেল ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়না। সামান্য জৈব সার ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারেই পোকা মাকড় ধ্বংস হয়েযায়। শাহাদত জানান, প্রতি বিঘাতে ১২ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ করে এক মাসেই অন্তত ৩৫ হাজার থেকে অর্ধলক্ষ টাকা ক্রয়মূল্য পাওয়া যায়। এতে বিঘা প্রতি ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ থাকে। সে হিসাব মতে তিন-চার বিঘা জমিতে পুঁইশাক চাষ করে দেড় মাসেই যেকেউ লাখপতি হতে পারেন বলে স্থানীয় কৃষকরা জানান।
উপজেলার বানেশ্বরদী, উরফা, টালকী, গৌড়দ্বার, পাঠাকাটা, চন্দ্রকোণা, চরঅষ্টধর, নকলা ও গনপদ্দি ইউনিয়নসহ পৌরসভার ধুকুড়িয়া, লাভা, গড়ের গাঁও, জালালপুর ও কায়দা এলাকার জমি অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং মাটি দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ থাকায় সেখানে পুঁইশাক বেশি চাষ হয়। বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ‘ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থা’র ছাইয়েদুল হক, মকুল, আমীর আলী, ইব্রাহীম, ছমেদ আলী, ছাইফুল, জবেদ আলী; পাঠাকাটার ইয়াকুব আলী, ফয়েজ উদ্দিন; চন্দ্রকোণার মোকসেদ আলী, মোক্তার আলী, জাফর আলী; নকলা এলাকার মোশারফ, কব্দুল, লিটন মিয়া; ধুকুড়িয়ার হাফেজ উদ্দিন, হাসেম, নজরুল, ইসলাম, মধ্য লাভার শহিদুল ও পূর্ব লাভার শাহাদত ও আক্তারসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধানসহ অন্য যেকোন ফসল চাষে উৎপাদন খরচের তুলনায় ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় লাভ কম থাকে। কিন্তু পুঁইশাকে খরচের তুলনায় লাভ কয়েকগুণ বেশি হয়। তাই তারা দিন দিন পুইশাক চাষের পরিমাণ বাড়াচ্ছেন। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য এলাকার কৃষকরা এই শাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, পুঁইশাক অধিক লাভজনক চাষ। পুঁইশাক সাধারণত দেড় থেকে দুই মাসের ফসল, তাই একই জমিতে বছরে ৬ থেকে ৮ বার চাষ করা যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর বলেন, উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে বেলে, বেলে-দোআঁশ মাটিতে বিশেষ করে বাড়ির আঙ্গীনায় এই শাক চাষ করা সম্ভব। তাতে গ্রামীন কৃষি পরিবার আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি মিটছে আমিষের চাহিদাও। তিনি আরও বলেন, শাক সবজির আবাদ বাড়াতে কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে কৃষকরা অন্য শাক সবজি ও বিভিন্ন শস্যের আবাদ ছেড়ে বাড়িয়েছেন পুঁইশাকের চাষ। শাক ব্যবসায়ীরা জানান, অন্য যেকোন শাক সবজির চাহিদা কম, মিলেও বাসী; কিন্তু পুঁইশাক সতেজ মিলে, তাই এর চাহিদা ও দাম সারা বছর বেশি থাকে। ফলে উৎপাদনকারী, খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতা এবং শাক সবজি ব্যবসায়ীরা আর্থীকভাবে লাভবান হচ্ছেন; পাশাপাশি বিষমুক্ত ও সতেজ শাক পাচ্ছেন ভুক্তা সাধারণ।