মোঃমোশারফ হোসেন, স্পেশাল করেস্পন্ডেন্ট :
শেরপুরের প্রান্তিক চাষিরা হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তার অংশ হিসেবে জেলার নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, বানেশ্বর্দী, গণপদ্দী ও উরফা ইউনিয়নের অনেক চাষি হলুদ চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। অনুর্বর জমিতে কম পুঁজিতে ও নামে মাত্র শ্রমে অধিক মুনাফা পাওয়ায় উপজেলায় হলুদ চাষির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার হলুদ সরবরাহ করা হয় পার্শ্ববর্তী জেলা গুলোতে সরে জমিনে জানা যায় উপজেলায় শতবছর পূর্বহতেই কৃষকরা হলুদ চাষ করে আসছেন। অনুর্বর জমিতে, অল্প পুঁজিতে সল্প ব্যয়ে অধিক মুনাফা পাওয়ায় উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন গুলোতেও হলুদ চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় এবছর উপজেলায় ৫শ একর জমিতে বানিজ্যক ভাবে হলুদ চাষ করা হয়েছে। তাছাড়া বিচ্ছিন্ন ভাবে বাড়ির অঙ্গীনায় নিজেদের ব্যবহারের জন্য আরও কমপক্ষে ৮০-৯০ একর জমিতে হলুদ চাষ করেছে কৃষকরা। আশানুরুপ দাম পাওয়ায় আগামীতে হলুদ চাষির সংখ্যা ও পরিমান দ্বিগুন হতে পারে বলে জানালেন অনেক প্রান্তিক চাষি। চাষিরা বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে উন্নত জাতের ডিমলা ও সুন্দরী হলুদ চাষ করা হলেও দেশীয় জাতের হলুদই বেশি চাষ করা হয়।
সাধারণত বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে হলুদ রোপন করা হয়। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে হলুদ তোলা হয়। রোপনের আগে আরাআরি ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে রোপন করতে হয়। লাঙল দিয়ে ৩/৪ সে.মি গভীর করে লাইন টেনে ৬-৮ ইঞ্চি অন্তর চোখসহ হলুদের ধানা রোপন করে মাটি চাপা দিতে হয়। গজানো গাছ মাটির ৬-৮ ইঞ্চি উপরে উঠে আসলে কোদাল দিয়ে অনেকটা আলু ক্ষেতের মতো মাটি দিতে হয়। তাছাড়া ৬মাসের এই মসলা জাতীয় ফসলে সর্বোচ্চ ২বার নিড়ানী দিতে হয়।
জমি তৈরি, রোপন, নিড়ানী ও তোলা ছাড়া আর কোন খরচ নেই। জমি তৈরি থেকে তোলা পর্যন্ত প্রতি কাঠা (৫ শতাংশ) তে খরচ হয় সর্বোচ্চ ১হাজার টাকা। বানেশ্বর্দীর নাজিমউদ্দিন, রইছ উদ্দিন, ফিরোজ মিয়া, চরকৈয়ার গুঞ্জুর, বকুল, ঝাডু ও রহুল সহ অনেক হলুদ চাষি বলেন, প্রতিকাঠাতে বীজ হলুদ লাগে ২০ থেকে ২২ কেজি এবং উৎপাদন হয় ৮ থেকে ১২ মন। বর্তমান বাজার মূল্য শুকনা প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং কাঁচা হলুদ প্রতিমন ৪৮০ টাকা থেকে ৫২০ টাকা। ফলে বর্তমান দাম অনুযায়ী প্রতি কাঠাতে লাভ থাকে ৪হাজার থেকে ৫হাজার টাকা। যা অন্যকোন কৃষিপণ্যে সম্ভব নয়। কেল্লির মোড় এলাকার নাজিমউদ্দিন বলেন, তার ১একর জমিতে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আশা করছেন ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকার হলুদ পাবেন তিনি। তিনি বলেন, আগামীতে কমপক্ষে আরও ২একর জমিতে হলুদ চাষ বাড়াবেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম ও ইসমাতুন মাছুমা জাহান পলাশী বলেন, উপজেলার চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর ও বানেশ্বর্দী ইউনিয়নেই হলুদের চাষ বেশি হয়েছে। তাছাড়া ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষি পণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার ২৫ জন সদস্য সবাই হলুদ চাষ করেছেন। লাভ বেশি পাওয়ায় ওই সংস্থার চাষিরা দিন দিন ওই মসলা জাতীয় ফসলের চাষ বাড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুল বলেন, এ বছর উপজেলাতে বানিজ্যিক ভাবে ৫০০ একর এবং নিজের ব্যবহারের জন্য কমপক্ষে ৮০ একর জমিতে হলুদ চাষ করেছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির জানান অনুর্বর জমিতে হলুদ চাষ হওয়ায় জমির যেমন সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে পাশাপাশি লাভবান হচ্ছেন চাষিরাও। হলুদ চাষ বৃদ্ধির করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়াসহ আনুসাঙ্গিক সেবা দেওয়া হচ্ছে নকলা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে।