Site icon

হাতের মুঠোয় কৃষিসেবা: ১৬১২৩’র যাদুতে বাড়ছে কৃষি উৎপাদন

16123-b-pic
মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) : তথ্য প্রযুক্তির এযুগে কৃষিসেবা এখন যেন হাতের মুঠোয়। যে কোন অপারেটর থেকে ১৬১২৩ নাম্বারে ফোনদিয়ে কৃষিসেবা নিয়ে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদের যেকোন সমস্যার সমাধানে গ্রাম বাংলার কৃষকরা কৃষি কলসেন্টারের দিকে ঝুঁকছেন। ওই কলসেন্টারের যাদুতে পাল্টে যাচ্ছে সারা দেশের ন্যায় শেরপুরের নকলা উপজেলার কৃষিচিত্র। কৃষকরা ১৬১২৩ এর সেবা নেওয়ায় কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ কমেছে, পক্ষান্তরে বেড়েছে উৎপাদন আয়।
কৃষি অধিদপ্তরের এক তথ্য অনুযায়ী ১৬১২৩ এর সেবা নেওয়ার আগের চেয়ে এখন কৃষি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। কৃষিতথ্য সার্ভিসের এক উদ্যোক্তার ভাষ্য অনুযায়ী নকলা উপজেলায় সপ্তাহে আনুমানিক এক-দেড়শ কৃষক ওই কল সেন্টারের সেবা নেন। তাতে সারা দেশে সপ্তাহে অর্ধ লক্ষ কৃষক কৃষিকল সেন্টারের সেবা নিচ্ছেন। শীত কালে শাক সবজির চাষ বেশি হওয়ায় কল সেবার চাহিদা বাড়ে। কৃষি সেবাটি বাংলার প্রতিটি কৃষক পরিবারে পৌঁছে দিতে কৃষি অধিদপ্তর ও কৃষিতথ্য সার্ভিসের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে কৃষি , মৎস্য ও প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা এবং তথ্য উদ্যোক্তাদের নিয়ে নিয়মিত কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিলি করা হচ্ছে বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত পোস্টার, হ্যা›ডবিল।
তার অংশ হিসেবে সম্প্রতি উপজেলার মোজার বাজারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কৃষি কলসেন্টারের এক উদ্বুদ্ধ করণ সভা। ওই সভায় বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মিজানুর রহমানের সাথে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা গোলাম মাওলা, মেরপুর খামার বাড়ির উপ-পরিচারক আশরাপ উদ্দিন, নকলা উপজেলা কৃসি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর সহ উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা জানান যে, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদের যে কোন সমস্যার সমাধানে তথ্য সেবা সহ কারিগরি পরামর্শ পেতে যে কোন অপারেটর থেকে ১৬১২৩ নাম্বারে কল করে যেকেউ সেবা নিতে পারেন। কৃষি তথ্য সার্ভিসের সদর দপ্তরে স্থাপিত দেশের একমাত্র সরকারি কৃষি কল সেন্টারের এই সেবা পেতে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ব্যাতিত খরচ হয় মাত্র ২৫ পয়সা/মিনিট। তবে শুক্র বার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯ টা হতে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া হয়্
ওই উদ্বুদ্ধ করন সভার পর হতে কৃসি সমস্যায় ১৬১২৩ নাম্বারে করতে নকলার কৃষকরা হুমড়ী খেয়ে পড়ছে। বিশেষ করে মোজারের অগ্নিবীণা ক্ষুদ্র কৃষক আইপিএম ক্লাব ও ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থা কতৃক বিনা মূল্যের কৃষি কল সেন্টারের সুবিধা ভোগ করছেন হাজারো কৃষক। অগ্নিবীণা ক্ষুদ্র কৃষক আইপিএম ক্লাবের উদ্যোক্তা মোঃ জাকির হোসেন সজিব বলেন, আগে প্রতিদিন ২/৩ জন কৃষক সেবা নিতে আসতো, কিন্তু এখন দিনে ৮ থেকে ১২ জনকে ওই কল সেবা দিতে হয়। শীত মৌসুমে তা বেড়ে কয়েক গুণ হয়। সুবিধা ভোগি কৃষকরা বলছেন, ১৬১২৩ নাম্বারটি তাদের জীবন মানকে বদলে দিয়েছে। আগে কৃষি সমস্যায় নানা জনের নানান কথা অনুযায়ি ক্ষতিকর ঔষধ প্রয়োগ করায় উপকারের চেয়ে অপকার হতো বেশি। কিন্তু এখন ফসলের ক্ষেতে বসেই ওই নাম্বারে কল দিয়ে তাৎক্ষনিক সেবা পাচ্ছেন তারা। তাতে আগের চেয়ে উৎপাদণ অনেক বেড়েছে। পক্ষান্তরে কমেছে ব্যয়, বাড়ছে আয়, বাঁচছে সময়।
কৃষিঅফিস সূত্রে জানাগেছে, নকলা উপজেলায় মোট ফসলী জমি আছে ৭৬ হাজার ৯শ’ একর, আর নীট ফসলী জমি ৩৬ হাজার ২৫০ একর। মোট জমির ৮২.৯ ভাগ ব্যবহার হচ্ছে। সেচ যোগ্য ৩৬ হাজার ২৫০ একর জমি থাকলেও নার্সারী আছে মাত্র ৩২ টি। তাছাড়া অনাবাদী ও পতিত জমি আছে ১ হাজার ৭৫০ একর এবং বনভুমি আছে ১ হাজার ৯৫০ একর। উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে ৫ টি নদী, এখানে আছে ১১ টি বিল, ৪ হাজার ৪৮৩ টি পুকুর। তথ্যানুযায়ী ওই উপজেলায় ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ৮৪২ টি পশু-পাখি রয়েছে। এসব কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদের সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাসহ কৃষি তথ্য সেবার ১৬১২৩ নাম্বারটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে বলে মত দিচ্ছেন কৃষি গবেষক সহ সুধীজনরা।

Exit mobile version