হাবিপ্রবির ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের দেশ ভ্রমণ

হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফর

 

হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফর
মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানঃ

ক্যাম্পাসে ভর্তি হওয়ার পরেই জানতে পারলাম দেশভ্রমণ আছে ক্যম্পাসের খরচে। দেশের অদেখা দর্শনীয় স্থান সমুহের পরিদর্শনের সুযোগ এটা। শেষ বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের আনন্দ বিনোদন দেয়ার জন্যই এই আয়োজন। সেই কাংখিত সময়ের অপেক্ষায় সবাই। মনের মানষপটে জমা আছে “দারুচিনি দ্বীপ” ছবির স্মৃতিগুলো। তেমনি হবে আমাদের আনন্দ কবে আসবে সেই সময় ব্যস্ততাকে দূরে রেখে বন্ধুদের সঙ্গে হারাবো আনন্দের ভুবনে, পাহাড়ে উঠবো, বনে বেড়াবো আর সাগরে ভাসব আনন্দের জোয়ারে। শিক্ষা জীবনে এমন একটা সময়ের অপেক্ষায় কেটে গেল তিনটি বছরে। সময় এলো এবার ভ্রমণে যাবার। নিজের প্রস্তুতি শেষ করে শুরু হল ভ্রমণ বাঘ দিবসে(১৪ ফেব্রুয়ারী) সুন্দর বনের উদ্দেশে। ট্রেনের এক লম্বা ভ্রমণের মধ্যে দিয়েই এই আনন্দের ভুবনে প্রবেশ করলো সবাই। ট্রেন ভ্রমণ মানেই মজায় মজা। পুরো কামরা আমাদের কমতি নেই কিছুরই, সুখ আজ ছুটবে মোদেরই পিছু। গান গাওয়া, গল্প করা, আড্ডা দিতে দিতে গেলাম খুলনায়। ট্রলারে করে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে নদীতে আমরা। সেখানে খুশিতে সবাই ছবি তোলা, নদীর পানি ছুয়ে দেখার চেষ্টা করা, পানির ঢেউয়ে নিজেতে হারিয়ে যাওয়া, সিন্দাবাদ মনে করা ইত্যাদি। প্রচন্ড রোদে ঘর্মাক্ত হলেও কারো কোন অভিযোগ নেই। বিশ্ব ঐতিহ্যের এই সুন্দরবনকে দেখায় আশায় ব্যস্ত সবাই।

কুমিরের ও হরিনের প্রজনন কেন্দ্র, বাঘের নখ ও চামড়া এবং বানরের দল দেখে আনন্দিত সবাই। কারনও আছে আমরা ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদের ছাত্রছাত্রী, এদের চিকিৎসা আমাদেরই করা লাগবে , তাই এই সব প্রাণি দেখে নিজেদের বড় মনে হচ্ছিল সবার। পুকুরে রোমিও জুলিয়েটের তো কোন ছুড়িই নেই। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো পানির অভাবে দেখা দেয়ায়, যাদের কাছে খাবার পানি আছে তাদের পানি কাড়াকাড়ি করে খাওয়ার মধ্যেও বন্ধুত্বের আসল পরিচয় মেলে।
মংলাবন্দরের বড় বড় জাহাজে আমাদের সবারই মন কেড়েছিল; নদীর মাঝ খানে নৌকায় থাকা কালীন সবাই মনের সুখে গান ধরেছিল, ওরে ওরে নীল দরীয়াআমায় ছাড়িয়া।

সুন্দরবনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম সবাই ষাট গম্বুজ মসজিদ ও খান জাহান আলীর মাযারে। দুই ধারে সুপারির গাছে থোকায় থোকায় সুপারির রুপে মুগ্ধ হলাম সবাই। খুলনায় ২ দিনের সফর শেষে যাবার সিডিউল সিলেটে, বাসের দীর্ঘ ১৮ ঘন্ঠা ভ্রমণের পরে সিলেট। দুইটি পাতা একটি কুড়ির দেশ সিলেট। সিলেটে গিয়ে সবাই প্রথমে হযরত শাহজালাল (র) এর মাযারে। সেখান থেকে মাধুবকুন্ড। উচু নিচু সড়কের দুইধারে চায়ের বাগান, সত্যি যেন স্বর্গপুরী। উচু উচু টিলায় সুবজে সুবজে চায়ের বাগান। মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে গিয়ে সবাই গোসল করার চেষ্টা করলেও পানি কম থাকায় তা সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ টাওয়ারে উঠে এলাকার স্যটেলাইট ভিউ দেখার চেষ্টা করেছে।

জাফলং এর উদ্দেশ্যে খুব ভোরে রওনা দিয়ে, প্রথমে বিছানাকান্দি। মাটির নিচে আছে পাথরেও খনি। কাছ থেকে ভারতের পাহাড় দেখার অভিজ্ঞতা হলো সবার। পানির স্রোত কম, তাই এখানেও গোসল করার ইচ্ছা পুরণ হলোনা কারোই। জাফলং গিয়ে পৌছতেই বিকাল ৫ টা, হাতে ২ ঘন্ঠা সময়। শীতল আর স্বচ্ছ পানির প্রবাহে সবাই জীবনে উপভোগ করতে লাগলো। একসাথে ছবি তোলা। পানিতে ভিজে সময় পার হল। পানি খুব ঠান্ডা তাই গোসল করেনি কেউ। তার পরেও বেলাল, মুনির, সালাউদ্দিন, শুভ, মামুন, রিংকি, সাগর সহ অনেক ই ভিজে ছিল । কেউ কেউ আবার সেখানে থাকা পাথর উঠিয়ে শক্তি পরীক্ষাও করছিল। হোটেলে ফিরতে রাত ৯ টা।
এবার যাবার পালা চট্রগ্রাম। আবারো মজাদার ট্রেনের ভ্রমন। সারারাত খুব ভাল কাটবে। একদিকে যেমন ট্রেনে ভ্রমণের আনন্দ, অন্যদিকে ভ্রমণের ক্লান্তে অনেকে খুব ভাল ঘুম ঘুমিয়েছিল ট্রেণে। খেলা , গান শুনা, কেউ সবাইকে মজা দিয়ে শেষ করলো রাতের ভ্রমণ। পরদিন সকালে ফয়েজ লেক। সেখানে ঢুকার আগেই ঘটল আঘটন, আমাদের বন্ধু নাজমুলের ক্যামেরা সহ ব্যাগ হারিয়ে গেল। ভিতরে ডুকেও সবাই অন্যরকম অনুভুতি প্রকাশ করলো। সি ওয়াল্ডে গিয়ে তাদের গোসল করার তীব্র ইচ্ছা পুরণ হলো। সমস্ত রাইডে উঠে আনন্দ করা, গোসল করা, ডিজে পার্টিতে ড্যন্স করা সব ভাললাগার অপুর্নতা যেন সেখানেই পূর্ণ হল। সেই দৃশ্য আজো মনে হলে সেই সুখানুভূতি পায় সবাই। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদের ১০ ব্যাচের দেশভ্রমণ সত্যি আনন্দে ভরপুর ছিল। ডঃ মোহাম্মদ খালেদ হাসান, ডঃ মোঃ আব্দুল হামীদ এবং মোঃ শাহীন স্যারের তত্বাবধানেই ফেব্রুয়ারী ২০১৬ এর সফর সারা জীবন আনন্দ যোগাবে সবার।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *