আলুচাষিদের মাঝে চেক
মো. মোশারফ হোসাইন, শেরপুর প্রতিনিধি:
আলুচাষিদের মাঝে চেক : শেরপুরের নকলায় ২০১৯-২০২০ উৎপাদন মৌসুমে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)’র সংগৃহীত বীজ আলুর মূল্য পরিশোধ বাবদ ১৯ টি ব্লকের চুক্তিভিত্তিক ৬০ জন আলু চাষির মাঝে মোট ৩ কোটি ২২ লাখ ৩ হাজার ৯৫০ টাকার চেক বিতরণ কাজ শেষ হয়েছে। দুই ধাপে এসব চেক বিতরণ করা হয়। প্রথম ধাপে এক কোটি ৩৫ লাখ ৮০ টাকা ও দ্বিতীয় ধাপে এক কোটি ৮৭ লাখ ৩ হাজার ৮৭০ টাকার চেক বিতরণ করা হয়।
বুধবার দুপুরে শেরপুরের নকলা বিএডিসি হিমাগারের উপ-পরিচালক মহোদয়ের অফিস কক্ষে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দ্বিতীয় ধাপের এক কোটি ৮৭ লাখ ৩ হাজার ৮৭০ টাকার চেক বিএডিসি’র চুক্তিভিত্তিক আলু চাষিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এসময় বিএডিসি নকলা হিমাগারের উপ-পরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম, উপ-সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমানসহ বিএডিসি নকলা হিমাগারের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, বানেশ্বরদী খন্দকার পাড়া গ্রামের আলু চাষি আলহাজ্ব মো. ছাইদুল হক, মো. কামাল হোসেন, মো. আনার মিয়াসহ উপজেলার বিভিন্ন ব্লকের চুক্তিভিত্তিক আলু চাষিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএডিসি নকলা হিমাগারের উপ-পরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান আলাদা ভাবে জানান, ২০১৯-২০২০ উৎপাদন মৌসুমে উপজেলায় বিএিডিসি চুক্তিভিত্তিক চাষিদের মাধ্যমে ২৭০ একর জমিতে ডায়মন্ট, এস্টারিক্স ও কার্ডিনাল জাতের ১৪৪০.৩০০ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত ‘এ’ গ্রেডের বীজ আলু প্রতি কেজি ২৩ টাকা করে এবং ‘বি’ গ্রেডের বীজ আলু প্রতি কেজি ২২ করে ক্রয় করে চাষিদের কাছ থেকে কিনেনেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃপক্ষ। আর এ ক্রয়কৃত আলুর সমুদয় টাকা কৃষকদের মাঝে দুই ধাপে পরিশোধ করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে দ্বিতীয় ধাপের চেক বিতরণ শেষে ২০২০-২০২১ উৎপাদন মৌসুমে বীজ আলু উৎপাদন, ব্লক ও চাষি নির্বাচন, বীজ আলু লাগানোর পূর্বে মাটি শোধনের জন্য স্টেবল ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার সম্পর্কে ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়।
অভিজ্ঞ চাষি আলহাজ্ব মো. ছাইদুল হকসহ বেশ কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক আলু চাষি জানান, আবহাওয়া আলু চাষের অনুকূলে থাকায় এবং বিএডিসি হিমাগারের কর্মকর্তাগন নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করায় ও তাদেরকে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ সেবা দেওয়ায় ফলন ভালো হয়েছিল। তাছাড়া এ বছর বীজ আলুর ভালো দাম পাওয়ায় আলু চাষে কৃষকরা অধিক লাভবান হয়েছেন। বীজ আলুর ভালো দাম পাওয়ায় চুক্তিভিত্তিক আলু চাষিরা খুব খুশি। আগামীতে উপজেলায় আলু চাষির সংখ্যা ও জমির পরিমাণ বাড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। তারা বলেন, এরই মধ্যে বিএডিসি বীজ আলু চাষের জন্য জমি নির্বাচনের কাজ শুরু করা হয়েছে।
বিএডিসি হিমাগারের উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শেরপুরের নকলায় ১৯টি ব্লকে আলু চাষ বৃদ্ধি ও কৃষকদের অধিকতর অভিজ্ঞাতা সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে এরই মধ্যে উপজেলার চুক্তিভিত্তিক ৩০ জন কৃষককে ২দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছ। প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সরকার কর্তৃক প্রাপ্য প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদী ও প্রশিক্ষণ ভাতা প্রদানের পাশাপাশি উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমানের সংকলণে ও নিজস্ব অর্থায়নে মুদ্রিত বিশেষ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল প্রশিক্ষাণার্থী আলু চাষিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালটি কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন বই, পত্রিকা, খ্যাতিমান বিভিন্ন কৃষিবিদ ও গবেষকগণের লেখাসহ বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে সংকলণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের যে কোন কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে ও চেষ্ঠায় সংকলণ ও মুদ্রণ করা এ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালটি প্রয়োগ করতে পারলে, কৃষকরা বেশ উপকৃত হবেন। প্রশিক্ষণ শেষে অনেক কৃষক প্রশিক্ষণ লব্দ জ্ঞানকে ভুলে যান, কিন্তু এই প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালটি তাদের বাড়িতে থাকলে তা থেকে পুনরায় শিক্ষা নিয়ে মাঠে প্রয়োগ করতে পারবেন। এতে করে প্রশিক্ষণটি কৃষকের মাঝে টেকসই হবে বলে মনে করছেন উপপরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলামসহ অনেকে।