বিরূপ আবহাওয়ায় মাছচাষীদের জন্য করণীয়

মাছচাষীদের জন্য করণীয়

মাছচাষীদের জন্য করণীয়

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি:

মাছচাষীদের জন্য করণীয় : কখনো বৃষ্টি কখনো রোদ। আবার কখনো বন্যা কখনো খরা। এই রকম অবস্থায় কি ব্যবস্থা নিবেন এই নিয়ে অনেকটা দ্বিধাদন্দ্বে থাকেন মাছ চাষী সহ বিভিন্ন খামারীরা। অনেক সময় সঠিক ব্যবস্থাপনা না নিতে পেরে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় মাছ চাষীদের। এমতাবস্থায় মাছ চাষীদের কি করনীয় রয়েছেসেসব নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ), বগুড়া এর সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো: আশরাফুল আলম। 
তিনি জানান, একদিকে করোনা অন্যদিকে বন্যার পরিস্থিতির কারনে পুকুর থেকে মাছ ভাসিয়ে যাওয়ার কারণে নাজুক অবস্থায় রয়েছেন মাছ চাষীরা। বেশ কিছুদিন ধরে আবহাওয়ায় বিরুপ অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্প্রতি দেখা গেছে মেঘলা আকাশ, হঠাৎ বৃষ্টি আর প্রচন্ড দাবদাহে  রাজশাহী ও এর আশেপাশের জেলায় দুই দিনে ( ১ ও ২ সেপ্টেম্বর) প্রায় ৬১৬ মেট্রিক টন মাছ মরে গেছে যার আনুমানিক অর্থমূল্য ১৪.৫ কোটি টাকা (দৈনিক ইত্তেফাক, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০) । এই করোনা পরিস্থিতিতে মাছ চাষ চাষীদের জন্য এই বৈরী আবহাওয়া যেন মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে। এরই মধ্যে আবার ধেঁয়ে আসছে শক্তিশালি প্রায় পুর্ণাঙ্গ বৃষ্টি বলয় আঁখি-২ । যা আরও উদ্বেগ ও আতংক তৈরি করেছে মাছ চাষীদের মাঝে। 
এটা শুধুমাত্র রাজশাহী জেলাই নয়। দেশের উত্তরাঞ্চল জুড়ে এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। হঠাৎ বৃষ্টি বাতাসে বিদ্যমান নাইট্রক এসিডকে পুকুরের পানিতে মিশিয়ে ফেলে। এছাড়াও, বৃষ্টির পানি বাড়ির ঢাল ও পুকুর পাড়ের নির্গত জৈব এসিড পুকুরের পানিতে মিশিয়ে পুকুরের পিএইচকে কমিয়ে দেয়। হঠাৎ তাপমাত্রা ও পিএইচ এর পরিবর্তন মাছকে প্রচন্ড ভাবে দূর্বল করে ফেলে। ফলশ্রুতিতে মাছ মারা যাওয়া কিংবা খাবি খাওয়ায় ঘটনা ঘটছে। তাপমাত্রা বেশি হলে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। আবার মেঘলা আবহাওয়ায় পানিতে অক্সিজেন তৈরী বাধাগ্রস্ত হয়।এছাড়া অনেক সময় অতিরিক্ত ফিড খাওয়ানোর কারণে বিপাকীয় কাজে অক্সিজেন ব্যবহৃত হওয়ায় মাছের অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে এই সময় পুকুরে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয় এবং মাছ খাবি খেতে থাকে ও মারা যায়। 
আশরাফুল আলম আরও বলেন,  বিরুপ আবহাওয়ায় প্রচন্ড চাপ থাকার কারণে মাছের খাদ্য গ্রহনের চাহিদা কমে যায় এবং প্রতিকূল পরিবেশে পুকুরে খাবার প্রয়োগ করলে অপচয়কৃত খাবার, মাছের মলমূত্র ও পুকুরের কাদায় বিদ্যমান অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস মাছের ক্ষতি করতে থাকে। তাই বিরূপ আবহাওয়ায় মাছচাষীদের নিম্নোক্ত বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে অনেকাংশেই মাছ মারা যাওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
(১) মেঘলা আবহাওয়ায় পুকুরে শতক প্রতি ৪-৫ টি অক্সিজেন ট্যাবলেট প্রয়োগ করা অথবা এয়ারেটরের ব্যবস্থা করা।  (২) পুকুরের প্রয়োগকৃত খাবারের দুই তৃতীয়াংশ কমিয়ে ফেলা।(৩) পুকুরের পানির পিএইচ, অ্যামোনিয়া পরিমাপ করে প্রয়োজন অনুসারে চুন, লবণ, জীবাণুনাশক ও বেনজাকোনিয়াম ক্লোরাইড (বিকেসি) গ্রুপের ঔষুধ প্রয়োগ করতে হবে।(৪) পুকুরে প্রতি মাসে ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম চুন, লবণ এবং ৫০ গ্রাম চিটাগুড় প্রয়োগ করতে হবে।(৫) প্রয়োজনে অতিরিক্ত মাছ উঠিয়ে পরিমিত পরিমাণে মাছ পুকুরে মজুদ রাখা এবং মর্টার বা শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পুকুরের পানি এক তৃতীয়াংশ পরিবর্তন করে নিতে হবে।

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *