রাতারগুল নয় মায়াবনে সিকৃবি ও খুকৃবি’র গবেষণা শুরু

রাতারগুল নয় মায়াবনে

রাতারগুল নয় মায়াবনে

কৃষি সংবাদ ডেস্ক

সিলেটের রাতারগুল জলাবন নয়, মিঠাপানির আরেকটি জলাবন ‘মায়াবন’। সিলেটেরই গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নে জুগিরকান্দি হাওরে এই জলাবনের অবস্থান। স্থানীয় লোকজন ব্যতীত পর্যটকদের দৃষ্টির আড়ালে থাকা এই জলাবন নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি) গবেষকদল।

গত ১৫ অক্টোবর (শনিবার) মায়াবনে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে পরিদর্শন করেছেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য জীববিদ্যা ও কৌলিতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক ও গবেষক অঙ্কুর চৌধুরী ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তর গবেষক ইফতেখার আহমেদ ফাগুন। গবেষণা দলটিতে আরও আছেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও গবেষক দেবাশীষ পন্ডিত। কার্যক্রম শুরু হওয়া গবেষণার তত্ত্বাবধায়ন করছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড ও অধ্যাপক ড. আহমেদ হারুন-আল-রশিদ।

পরিদর্শনকালীন গবেষক দলের সদস্যরা স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলেন। এছাড়া উদ্ভিদ, মাছ, অন্যান্য প্রাণির তালিকাও লিপিবদ্ধ করেন। এছাড়াও তারা ভূত্বাত্তিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও গবেষক অঙ্কুর চৌধুরী জানান, ‘ধারণা করা হতো, রাতারগুল জলাবন বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন। কিন্তু এছাড়াও মায়াবন সহ আরও বেশকিছু জলাবন রয়েছে। মায়াবন নিয়ে আমরা কিছু মৌলিক গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছি। এই জলাবনটি প্রতিনিয়ত এই অঞ্চলের হাওরের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। জলাবনটি লোকচক্ষুর অনেকটাই আড়ালে। পর্যটনখাতের জন্য সম্ভাবনাময় হলেও টেকসই পর্যটনখাত গড়ে তোলা সম্ভব না হলে এখানকার জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে’।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর গবেষক ইফতেখার আহমেদ ফাগুন জানান, ‘হাওরাঞ্চলের জলাবনগুলো দেশীয় মাছের প্রজনন, বংশবিস্তার ও বৃদ্ধির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল। মায়াবন জলাবনটি যেমন বনসংক্রান্ত বিজ্ঞানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে মৎস্য ও উদ্ভিদবিজ্ঞানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই জলাবনটি হাওরাঞ্চলের ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য ঠিক রাখতে মূখ্য ভূমিকা রাখছে। আমাদের গবেষণা কার্যক্রম শেষে এই বন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য দেয়া সম্ভব হবে’।

ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ১৮০ হেক্টর জায়গাজুড়ে এই জলাবনের অবস্থান। জুগিরকান্দি মায়বনে রয়েছে জলের উপর ভাসমান সারি সারি হিজল, জাম, বরুণ, করচ ও বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি। এটি একটি ঘন জলারণ্য হওয়ায় ভেতরের দিকটায় সূর্যের আলো গাছের পাতা ভেদ করে জল ছুতে পারে না। বনের দক্ষিন পাশে রয়েছে কাশবন। পূর্ব দিকে রয়েছে শাপলা ও পদ্ম ফুলের সমারোহে ভরপুর কুরুন্ডি ও রৌয়াসহ বিশাল বিশাল বিল। পশ্চিম দিকে রয়েছে হিদাইরখাল (সরকারি নথিপত্রে বাউলিখাল) নামে পরিচিত একটি নদী, যার তীরে বনবিভাগের মালিকানাধীন বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় মূর্তা বাগান।

জুগিরকান্দি মায়াবনে বিচরণ করে মাছরাঙ্গা, বিভিন্ন প্রজাতির বক, ডাহুক, ঘুঘু, সারি, দোয়েল-শ্যামা, ফিঙে, বালিহাঁস, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি। বিভিন্ন প্রজাতির গুই সাপ ও নানা ধরনের সাপের অভয়াশ্রম এই জলারণ্যে বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে বানর, উদবিড়াল, কাঠবিড়ালী, মেছোবাঘ ইত্যাদি।

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *