কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ
’বায়োচার’ এক ধরনের চারকোল বা কয়লা যা সীমিত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অক্সিজেনবিহীন তাপের সাহায্যে বিভিন্ন জৈব পদার্থ যেমন- ধানের তোষ, কাঠের গুড়া, কাঠ, মুরগির বিষ্ঠা এমনকি নালা নর্দমার বর্জ্য পদার্থ, আবর্জনা থেকে তৈরি করা হয়। বায়োচার মাটিতে প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এটি মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে, রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বাড়ায়. মাটিতে গাছের খাদ্য উপাদানগুলোকে ধরে রাখে, মাটিতে লবণাক্ততা ও খরার প্রভাব এবং মাটির অম্লত্ব দূর করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য মাটিতে বায়োচার প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরের আবর্জনা ব্যবহার করে যদি বায়োচার উৎপন্ন করা যায় তবে একদিকে যেমন আবর্জনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, অন্যদিকে এটি সার হিসাবে জমিতে ব্যবহার করা যাবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বায়োচার নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও বাংলাদেশে এ নিয়ে গবেষণা একেবারেই নতুন। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শামীম মিয়া ২০১৪ সালে একটি বায়োচার চুল্লি তৈরি করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান ড. এম. এ. মান্নান শামীম মিয়ার উদ্ভাবিত বায়োচার চুল্লির নকশার আংশিক পরিবর্তন করে আরও কার্যকরী একটি বায়োচার চুল্লি তৈরি করেন। তিনি বিগত ২ বছর যাবত ফসলের উপর বায়োচার এর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত ৩ জন ছাত্র ছাত্রী উৎপাদিত বায়োচারের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা শেষ করেছেন এবং আরও কয়েকজন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গবেষণায় দেখা যায়, খরা আক্রান্ত সয়াবিন ফসলের উপর মুরগির বিষ্ঠা থেকে তৈরি বায়োচার প্রয়োগ করে খরার প্রভাব অনেকটা কমানো যায় এবং ফলন ২৫ ভাগেরও বেশী বাড়ানো যায়। ভুট্টার জমিতে ধানের তোষের বায়োচার প্রয়োগ করে দেখা যায় বায়োচার প্রয়োগ করা হয় নি এমন জমির তুলনায় ভুট্টার ফলন শতকরা ৬০ থেকে ৮০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বায়োচার প্রয়োগ করে ধানের জমি থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরন এর মাত্রা কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেছেন এ গবেষক। তিনি আরও মনে করেন বায়োচার নিয়ে আরও গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে। অধ্যাপক ড. এম. এ. মান্নান বলেন, তার উদ্ভাবিত চুল্লি দিয়ে স্বল্প পরিমাণে বায়োচার তৈরি করা যায় যা দিয়ে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করা কষ্টকর। সরকারের সহায়তা পেলে বায়োচার প্ল্যান্ট স্থাপন করে বাণিজ্যিকভাবে বায়োচার তৈরি করা যাবে এবং কৃষক পর্যায়ে এটি ব্যবহার করা যাবে।
কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ
সহকারী অধ্যাপক কৃষি শিক্ষা
শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূয়াপুর, টাঙ্গাইল।
মোবাইল ঃ ০১৭১১-৯৫৪১৪৩
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম