নানা স্বাদের নানা জাতের নানা রকম পুষ্টিগুণে ভরপুর ফলের রাজা আম

ফলের রাজা আম

ফলের রাজা আম
# বকুল হাসান খাঁন #

ফলের ভর মৌসুম এখন। বিশেষ করে আম। নানা স্বাদের ও নানা জাতের আম পাওয়া যায় বলে এ মওসুমে আমের কদর ও জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। আম এবং আম গাছের জন্মের প্রকৃত সময় নির্ধারণ করা না গেলেও আজ থেকে চার হাজার বছর পূর্ব থেকে আমের পরিচয় পাওয়া যায়। আম বারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব ফল। অর্থাৎ আমের আদি জন্মস্থান এই উপমহাদেশ। বর্তমানে এ উপমহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ছাড়াও ভিয়েতনাম, ফিজি, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, সুদান, কেনিয়া, আমেরিকার ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, অস্টেরিয়ার উষ্ণ অঞ্চল এবং পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে আম উৎপন্ন হয়। ১৮৯৭ সালে এঙ্গেলার ও প্রাস্টস নামের দুই উদ্ভিদ তত্ত্ববিদ ৩২ প্রকার রসালো আমের শ্রেণী বিন্যাস করে ছিলেন। এর পূর্বে ১৮৯৫ সালে হুকার ও জ্যাকস করেছিলেন ৬৫ প্রকারের সুস্বাদু আমের তালিকা। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে ভারতীয় আম্রতত্ত্ববিদ মুখার্জি ৪১ রকমের সুকাদ্য আমের শ্রেণী বিন্যাস করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানেই প্রায় হাজারকানেক আমের জাত রয়েছে। তবে বিখ্যাত আম বলতে দুধিয়া, গোপালভোগ, বৃন্দাবনী, খিরষাপাতি, ফজলি, মোহনভোগ, ল্যাংড়া, কোহিতুর, পিয়ারি, ফার্নাঞ্জিয়ান, জালবীন্দা, আগাসাহেব, বেনারসন, কালাপাড়া, মালদহ, মুলতানি, সিঙ্গাপুর বুঝায়। এর মধ্যে কয়েকটি ছিল বারো মাসের আম। এখন আমাদের দেশে চিন্নাই অঞ্চল থেকে মাঘ-ফাল্গুন মাসে আম আমদানি করা হয়। বর্তমানে বহু আকর্ষণীয় সুস্বাদু আমের জাতের মধ্যে সাধারণত ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরষাপাতি, আশ্বিনা, হিমসাগর, মোহনভোগ, সূর্যপুরা, কুয়াপাহাড়ী, রাজভোগ, বিষাণভোগ, বোম্বাই, লতা, ফনিয়া, মল্লিকা, আম্রপলি, চৌসা, অলফঅনসো, কেইট প্রভৃতি আম রয়েছে। এর অধিকাংশ মধু মাস জৈষ্ঠ্যে পাওয়া যায়। বিশ্ববাজারে আমের এখন খুব চাহিদা। বাংলাদেশের গুলার ঘাস, খিরষাপাতি, বোম্বাই ও ল্যাংড়াকে উৎকৃষ্ট আম বলা হয়। এছাড়া ফজলি আম বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় জাত। আকারের দিক থেকে ফজলি সবচেয়ে বড়, ওজনে কোনটি দেড় কেজি পর্যন্ত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক অঞ্চলে আম উৎপাদন হচ্ছে। পাকা আম শুধু ভোজন রসিকদের রসনা তৃপ্তই করে না। আম দিয়ে নানা জাতের মুখরোচক উপাদেয়ও তৈরি করা হয়। আচার, চাটনি, আমচুর, আমসত্ব, স্কোয়াশ, কাস্টার্ড, পাউডার এবং নানা ধরনের শিশু খাদ্যও প্রস্তুত হয়ে থাকে। আমের যেমন রয়েছে অনেক প্রকার খাওয়ার অনেক প্রণালী তেমনি এর গুণও আছে অনেক। আম সহজেই হজম হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে। আমে রয়েছে প্রায় সব ধরনেরই পুষ্টি উপাদান, আমের যথেষ্ট ভিটামিন রয়েছে। কাঁচা আমে আছে প্রচুর ভিটামিন-সি। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা আমে খাদ্যশক্তি ৪৫ কিলোক্যালরি, আমিষ ০.৭ গ্রাম, শর্করা ২০.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ কিলোগ্রাম, লৌহ ৫.৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ১৫ মাইক্রোগ্রাম এবং ৩ মিলিগ্রামভিটামিন সি থাকে। আমে ক্যারোটিন (প্রাকভিটামিন-এ) থাকে সর্বাধিক, যার পরিমাণ প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ৮৩০০ মাইক্রোগ্রাম। এ ক্যারোটিন প্রায় ছয়ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ১৩৮৩ মাইক্রোগ্রাম রেটিনল, যা ভিটামিন-এ তে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের শরীরে কাজে লাগে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ১০ গ্রাম আমিষ থাকে। অতএব আমে যথেষ্ট পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। অর্থাৎ স্বাদেও অতুলনীয় এবং পুষ্টিমানেও পরিপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *