মুনিরুজ্জামান
কুরবানীর পশু কিনতে যে বিষয় গুলো সাধারাণত আমাদের নজরে থাকে –
পশুটির গায়ের রং– আমরা সাধারণত লাল, খয়রি, কালো কিংবা লাল কালো মিশ্রিত প্রাণী বেশি পছন্দ করি, তাই অন্যান্য রং এর তুলোনাই এই রঙের পশুর দাম দেড়- দু হাজার টাকা বেশি হয়।
শারীরিক কাঠামোঃ শারীরিক কাঠামো হবে শক্ত সামর্থ, হাড়ে চোখে পড়ার মত মাংস থাকবে।
স্বাস্থ্যঃ আমরা অবশ্যি স্বাস্থবান পশুটি কিনব কিন্ত অতিরিক্ত স্বাস্থবান কেনা মটেও উচিত নয়। অতিরিক্ত ইউরিয়া বা ক্ষতিকর হরমনাল ঔষধ ব্যবহার করার ইতিহাস রয়েছে।
মাংসে পরিমাণ; আর নিজ নিজ সামর্থ প্রভৃতি। আর সব থেকে যে বিষয়টা গুরুত্ব দেয়া উচিত তা হচ্ছে পশুটির সুস্থতা কেননা অসুস্থ পশু কুরবানীর জন্য বিবেচ্য নয়।
সুস্থ পশু বৈশিষ্টঃ
- পশু নিয়মিত জাবর কাটবে।
- স্বাভাবিক ভাবে সুস্থ পশুরা মাথা নিচু বা পিঠ কুজো করে রাখে না,
- সুস্থ পশুতে আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সজাগ থাকবে।
- সুস্থ পশুতে কোন উদাসিন ভাব থাকবে না,
- চোখ দু’টো থাকবে উজ্জ্বল ও চঞ্চল।
- মাজেল(ঠোট)দু’টো হবে একটু ঠান্ডা ও ভেজা (ঘামের ফোটায়);
- উল্লেখ যে অতিরিক্ত ইউরিয়া খাইয়ে গরু মোটা করলে নাইট্রেট বিষক্রিয়ার কারণে মাজেল শুষ্ক থাকে।
- জিহ্বা দিয়ে নাক চাটবে, মুখ দিয়ে কোন লালা ঝরবে না।
- কান ও লেজ প্রয়োজনমত নড়াবে।
- দেহের লোম হবে মসৃন চকচকে হবে।
- শরীরে কোন পরজীবী (উকুন, আঠালি) থাকবে না।
- চামড়ায় কোন ক্ষত বা রক্তের দাগ অথবা লাঠিদিয়ে পিটানোর দাগ থাকবে না।
- শ্বাস প্রশ্বাস থাকবে স্বাভাবিক প্রতি মিনিটে গরু ১০-৩০ বার, ছাগল ২৫-৩৫বার,মেষ ১০ থেকে ২০ বার।
- হাটালে কোন রকম খোরামি ভাব থাকবে না।
- শরীরে কোন প্রকার ফোলা টিউমারের মত অংশ থাকবেনা।তবে জন্মগত কিছু চিহ্ন থাকে সে গুলোর জন্য কুরবানির কোন সমস্যা হবে না।
- মুখের সামনে খাবার ধরলে খেতে চাইবে।
- শরীরে হাত দিলে প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
- পশুর কুরবানির উপযুক্ত বয়স হয়েছে কি না,তা দাত দেখে নির্নয় করতে হবে। সাধারনত পূর্ণাঙ্গ দুটি কেন্দ্রীয় স্থায়ী ছেদন দাত গোজালে গরুর বয়স ২ বছর, স্থায়ী দুটি মধ্যবর্তী দাত থাকলে ৩ বছর, ৬টি পার্শ্ববর্তী স্থায়ী দাত থাকে তাহলে সাড়ে তিন বছর এবং ৮টি পূর্ণাঙ্গ দাত থাকলে ৪ বছর বয়স ধরা হয়ে থাকে।
আমরা সাধারণত খামার বা পরিচতি পশু চাষী অথবা বাজার থেকে পশু কিনে থাকি। খামার বা পরিচিত পশুপালনকারীদের নিকট থেকে কিনলে সুবিধে হয়। বিশেষ করে যে সব খামারের খামারিরা আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশু পালন করেন নিওয়মিত টিকা প্রদান করে থাকেন তাদের কাছথেকে নির্ভয়ে পশু কেনা যায়। ঝামেলা হয় হাটে গিয়ে কেনাতে। তবে নিম্নে উল্লেখিত বিষয় গুলো খেয়াল করলে সহজে সব ঝামেলা সমাধান করতে পারব ইনশাআল্লাহ্।
প্রস্তুতি- হাটে যাবার সময় পশু সম্বন্ধে ভালো ধারণা রাখে এরকম কাওকে সাথে নেয়া ভালো। আর পোকেটে দূরত্ব মাপার ফিতা নিয়ে নিন। যা গরুর ওজন জানতে সহায়তা করবে।
- প্রথমে পশুর কাছে না গিয়ে দূর থেকে দেখুন। পশুর হাটাচলা, অন্যান্য ক্রতারা পশুটিকে যখন দেখছে তখন পশুটি কেমন আচরণ তা লক্ক করুন।
- এভাবে দূর থেকে দেখে তিন চারটি পশু নির্বাচন করুন।
- এবার কাছে গিয়ে দেখার পালা। পশুর দড়ি ধরে মালিককে পশুটিকে হাঁটাতে বলুন লক্ষ করুন। পশুর হাঁটা সাভাবিক আছে কি না।
- এরপর উপরে বর্ণিত সুস্বাস্থের বৈশিষ্ট গুলো মিলিয়ে নিন।
- বয়স দেখার জন্য যখন দাঁত দেখবেন তখন জিহ্বা ও মুখও ভালো ভাবে লক্ষ করুন কোন প্রকারের ঘা বা ক্ষত আছে কিনা।
- চামড়া কোন অংশে থ্যাতলানো থাকলেও সেই গরু পরিহার করে অন্য গরু পর্যবেক্ষণ করুন। চামড়ার মান ভাল কিনা সেটা বুঝবেন গরুর গলার অংশে চামড়া দেখে ও ধরে। যদি সেখানকার চামড়া ভারি হয় তাহলে বুঝবেন যে চামড়া উন্নতমানের।
- অতিরিক্ত মোটা, অতীব স্বাস্থ্যবান গরুর গায়ে টিপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে যদি দেখতে পাবেন যে, টিপ দেওয়া স্থানটি ভিতরের দিকে চুপসে গিয়েছে অর্থাৎ শরীরে পানি জমে গেছে এবং গরু শরীরের অতিরিক্ত ভারের কারণে ভালভাবে দাঁড়াতে বা হাটতে পারছে না তাহলে তা পরিহার করুন।
- একইভাবে ছাগল/খাসি/বকরি/মহিষ কেনার সময়ও তার চোখ, চামড়া, ক্ষুর, মুখ, মল ইত্যাদি দেখে নির্বাচন করবেন। মনে রাখবেন, একটি অসুস্থ পশু আপনার কুরবানির প্রধান অন্তরায়। সব ঠিকঠাক থাকলে এবার আমারা দাম নির্ণয়ের দিকে যেতে পারি।
পশুর দাম ঠিক করাঃ পশুর হাটে সাধারণত কি পরিমাণ মাংস এই পশু থেকে পাওয়া যাবে তার উপর নির্ভর করে দাম ঠিক করা হয়। কসাইরা সাধারণত পশু দেখে আন্দাজ করেই সঠিক অথবা খুব কাছাকাছি ওজনের মাংসের পরিমাণ বলতে পারে। এটা তাদের অভিজ্ঞতার ফসল। কিন্তু আমরা যেহেতু বছরে একবার পশু কিনি আর মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনূষ্ঠান করে থাকি এজন্য আমরা আন্দাজ ঠিকভাবে করতে পারি না। তাই আমাদের বিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হবে।
যেভাবে জীবন্ত পশুর ওজন নির্ণয় করা যায়ঃ–
এ বাজারে যা নিতে হবে তা হলো শুধু একটা দূরত্ব বা কাপড় মাপার ফিতা আর সাথে মোবাইলে ক্যালকুলেটরতো থাকছেই।
- প্রথমে পশুটির হার্ট গ্রিথ বা বুকের বেড়-সামনের পায়ের ঠিক পিছন দিক বরাবর মাপ নিতে হবে ফিতার সাহায্যে ইঞ্ছিতে(inch)। নিচের ছবিতে
- এর পর শরীরের দৈর্ঘ্য-পশুর পেছনের পায়ের উচু হাড় থেকে গলার মাঝ বরাবর (সোল্ডার পয়ন্ট) এর দৈর্ঘ্য নিন ইঞ্চতে। ছবিতে A-B
জীবন্ত পশুর ওজন=
দৈর্ঘ্য (ইঞ্চি) X বুকের বেড় (ইঞ্চি)2
————————————— = কেজি
৩০০ X ২.২
- এবার এই সুত্রটি ব্যবহার করুণ
আর সম্পূর্ণ পশুর ওজন থেকে ৩৫-৪৫% বাদ দিলে মোট সম্ভাব্য মাংসের পরিমাণ পাওয়া যাবে এটি জাত অনুসারে পরিবর্তন হয়ে থাকে। আপনি নাড়িভুঁড়ি ইত্যাদির ওজন আন্দাজ করে বাদ দিয়ে মোট মাংসের পরিমাণ নির্ণয় করতে পারেন।
এবার বাজারের দামের সাথে মিল রেখে দর কষাকষি করে কিনে ফেলুন আপনার পছন্দের পশুটি।
উল্লেখ্য যে কুরবানির জন্য গাভি গরু বা ছাগী যথাসম্ভব কেনা থেকে বিরত থাকায় ভালো, এতে করে পরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় না । কেননা কিছু অসাধু মানুষ আছে যারা কুরবানির বাজারে জেনে না জেনে গর্ভবতী পশু বাজারে আনেন।
পশু পরিবহনঃ পশু কেনা হলে বাসায় ঠিক মত পশুটিকে আনা একটা বড় দায়িত্ব। হাট থেকে আপনার বাসা বা বাড়ি খুব দূরে হলে কুরবানির পশুটিকে ট্রাক বা পিকআপ এ নিয়ে আসুন। আর বাসা কাছে হলে ধীরে ধীরে হাঁটাতে হাঁটাতে নিয়ে আসুন। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাড়াহুড়ো করে বা দৌড় দিয়ে শারীরিক শক্তি ক্ষয় করার কোন প্রয়োজন নেই। কেননা কুরবানির পশুগুলো সাধারণত অনেক দূর দূরান্ত থেকে হাটে আসে, অনেক ক্লান্ত থাকে।
লেখক পরিচিতিঃশিক্ষার্থী ও সাংবাদিক
হাবিপ্রবি,দিনাজপুর Email- munir_vet@yahoo.com
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম