কৃষিবিদ এম এ মজিদ: বোরো ধানে চিটা হওয়ার প্রধান কারন হলো, বোরো মৌসুমে নভেম্বর মাসে ঠান্ডা আবহাওয়া দ্বারা শুরু আর শেষ হয় গরম কালে (এপ্রিল/মে মাসে)। গবেষণায় দেখা গেছে ধান গাছ তার জীবন চক্রের মধ্যে কাইচ থোর থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত সময়ে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরমে খুবই স্পর্শকাতর। উক্ত সময়ে বাতাসের তাপমাএা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে অথবা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলে ধানে অতিরিক্ত পরিমান চিটা পরিলক্ষিত হয়। যেমন- অংকুরোদগমে-১০, চারা অবস্থায়-১৩, কুশি অবস্থায়-১৫, থোর অবস্থায়-১৮, ফুল ফোটা অবস্থায়-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ক্রিটিক্যাল তাপমাএা। ফসল উৎপাদন কালে উক্ত তাপমাএার নীচে হলে জীবন চক্রের ভিন্নতা দেখা যায়। বাতাসের তাপমাএার উপর ভিত্তি করে এ মৌসুমে ধানের বীজ বপনের সময় নভেম্বর- ডিসেম্বর ও রোপনের জন্য ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস নিধৃারিত হয়েছে। কিন্ত কৃষক তার পারিপার্শ্বিকতা বিশেষ করে সেচের পানির অপ্রাপ্যতা এবং বিরুপ আবহাওয়ার জন্য এ সময় অনুসরন করে না। আগাম (অক্টোবর মাসে) বীজ বপনের কারনে বিশেষ কিছু এলাকায় চিটার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ ক্ষেএে দীর্ঘ জীবন কাল সম্পন্ন (১৫০ দিনের উপরে) ধানের জাতগুলো নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এবং স্বল্প জীবন কালের (১৫০ দিনের নীচে) জাতগুলো ১৫ নভেম্বরের পর থেকে বীজ তলায় বপন করতে হয়। ধানের চারা অবস্থায় শৈত্য প্রবাহ হলে নিম্নলিখিত কাজ করতে হবেঃ (১) বীজতলায় ৩-৫ সেন্টি মিটার পানি ধরে রাখতে হবে। (২) সকালবেলা লম্বা বাঁশের কঞ্চি বা দড়ি টেনে শিশির ফেলে দিতে হবে। (৩) চারাতে সুসম সার ব্যবহার করতে হবে। (৪) বীজতলায় ছাই প্রয়োগ করলে তাপমাএা বাড়ে ও উপকারে আসে। (৫) এ সময় ছএাক জনিত রোগ বেশি হয় তাই পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উপযুক্ত ছএাক নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
বীজতলায় ক্ষতিকর পোকা ও প্রতিকার
(ক) থ্রিপস- (১) সুর্যের আলো উঠার পর চারার পাতা সুচেরমত সুঁচালো হয়ে যায়। (২) পাতার কিনারা সাদা হয়ে যায় ও পাতা উপর হতে শুকে যায়। (৩) বীজতলায় হাত বুলালে হাতের তালুতে ছোট কালো পোকা দেখা যায়। প্রতিকার ঃ (১) বীজতলায় বেশি করে পানি দিয়ে পোকা ভেসে দিতে হবে। (২) প্রতি বর্গ মিটারের জন্য ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার গুলে ঝাঝরি দিয়ে স্প্রে করতে হবে।(খ) পামরী পোকাঃ (১) পাতা সাদা হয়ে যায়। (২) চারা ক্রমানয়ে নীচের দিকে ডেবে যেচ্ছে মনে হয়। প্রতিকা্রঃ সকালে বিকালে দুই বার সুইপিং করে পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে।(গ) পাতার মাছি- পাতায় ঘাঁয়েরমত সাদা দাগ দেখা যায়। প্রতিকারঃ সকালে বিকালে দুই বার সুইপিং করে পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে।(ঘ) উড়চুঙ্গা -(১) চারার শিকড় কাটে ফলে গাছ লাল হয়ে যায়। (২) গাছ শুকিয়ে খড়ের মত মনে হয়। প্রতিকার ঃ নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। (ঙ)বাদামী দাগ (১) ছোট ছোট বাদামী দাগ চোখে পড়ে। (২) দাগের আকৃতি আলপিনেরমত মনে হয়। প্রতিকার ঃ (১) নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। (২) ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। (চ) রুটনট- (১) চারার বৃদ্বি কমে যায়। (২) চারা ফ্যাকাসে সবুজ দেখায়। প্রতিকার (১) নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। (২) সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম