মোঃ মোশারফ হোসেন, শেরপুর :
আমেরিকার জনগনের পক্ষে (ইউএসএআইডি) ও আন্তর্জাতিক সার উন্নয়ন সংস্থা (আইএফডিসি)’র সহযোগিতায় কৃষি উৎপাদনশীলতা উন্নয়ন ত্বরান্বিত করন প্রকল্প (অপি)’র মাধ্যমে গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক পরিবার। দিন দিন গুটি ইউরিয়ার প্রতি ঝুঁকছেন কৃষকরা। আর এসফলতায় দিক নির্দেশক হলো কয়েকটি গুটি ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গুটি ইউরিয়া তৈরী করে সফল হচ্ছেন অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত কৃষকরা।
এমন এক প্রতিষ্ঠানের মালিক হলেন টালকি ইউনিয়নের রুনিগাঁও গ্রামের যুবক মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ১০ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১০ সালে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে সাধারন ইউরিয়া থেকে ২০ মেট্রিক টন গুটি ইউরিয়া পরিক্ষা মূলক ভাবে তৈরী করেন। পরের বছর ৩০ মেট্রিক টন, ২০১২ এবং ২০১৩ সালে ৪০ মেট্রিক টন করে এবং ২০১৫ সালে একশ মেট্রিক টন গুটি ইউরিয়া তৈরী করতে সক্ষম হন। তার কারখানায় ৪ জন শ্রমিকের মাধ্যমে দুইটি ব্রিকেট মেশিন দিয়ে সাধারন ইউরিয়া থেকে অধিক উপকারী গুটি ইউরিয়া তৈরি করা হয়। এ সফলতা তরান্বিত করতে ২০১৫ সালে আইএফডিসি’র অর্থায়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরাধীন উপজেলায় ৮ টি গুটি ইউরিয়া সার তৈরি করার মেশিন কৃষকদের ভর্তূকি মূল্যে দেওয়া হয়। ওই সব কারখানায় ঘন্টায় লাভ হচ্ছে প্রায় দেড়শ টাকা। এমন কয়েকজন গুটি ইউরিয়া সার উৎপাদন কারী জানকিপুরের এমদাদুল হক, বাছুর আলগার জান্নাতুল ইসলাম বাদল, চরবসন্তীর খাদিজা বেগম, কুর্শা বাদাগৈড়ের মন্নাফ খাঁ, ছত্রকোনার করিম, বারমাইশার আক্তার উজ্জামানের সাথে কথাবলে জানাগেছে, গুটি ইউরিয়া তৈরি করতে যেখানে অতিরিক্ত ৮শ’ টাকা খরচ হয় সেখানে লাভ আসে ২ হাজার টাকা। তারা বলেন, বোরো মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকে, চাহিদা মিটাতে পারলে এক বোরো মৌসুমেই প্রতি জনের লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব। তাদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ি, একটি মেশিন দিয়ে ঘন্টায় সাড়েতিন বস্তা গুটি ইউরিয়া সার তৈরি করা যায়। যার বিক্রয়মূল্য ৮৭০ টাকা করে মোট ৩ হাজার ৪৫ টাকা। আর সবমিলে খরচ হয় ২ হাজার ৮৯০ টাকা। ফলে ঘন্টায় লাভ হয় ১৫৫ টাকা। এমন সফলতা দেখে অনেক কৃষকরা গুটি ইউরিয়া সার তৈরির কারখানা দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
২০১৫ সালের এক তথ্যমতে, সারাদেশে ২২ জেলার ১২৪ উপজেলাতে ৫২ লাখ ৫৭ হাজার ৫২ জন কৃষক এই সার ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছেন। ১ হাজার দুইশ ব্রিকেট মেশিনে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৯৭০ মেট্রিকটন গুটি ইউরিয়া তৈরি করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৯৮ হেক্টর জমিতে ওই ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে সারাদেশে এমওপিকে ব্যবহারে ১১ হাজার ৩৮৪ মেট্রিকটন চাল বেশি উৎপাদন হয়েছে। যার বিক্রয় মূল্য ১ হাজার ৮ কোটি টাকা। আর এ লাভ মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা পেয়েছেন।
উন্নত বীজ, সুষম সার এবং সেচের নিশ্চয়তা থাকলে ওই ইউরিয়া ব্যবহারে উৎপাদন খরচ ৪০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানালেন কৃষি কর্মকর্তারা। নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান, ৬৭ হাজার ৬৮ হেক্টর জমিতে ওই এমওপিকে গুটি ব্যবহারের প্রক্রিয়া চালু করার জন্যই প্রকল্পটি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বোরো আবাদে প্রতি বিঘায় ২২ থেকে ২৩ কেজি প্রতিটি ২.৭ গ্রাম ওজনের এবং আমনে ১৫ থেকে ১৬ কেজি প্রতিটি ১.৭ গ্রাম ওজনের গুটি ব্যবহার করলেই চলে। এতে গুছা এবং লাইনের দূরত্ব ৮ ইঞ্চি হতে হয়। রোপনের ৫ থেকে ৭ দিন পর জমিতে ২ থেকে ৩ সে.মি. পানি থাকাবস্থায় চার গুছার মাঝখানে একটি করে গুটি ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি নিচে পুঁতে দিলে ভালো সফলতা পাওয়া যায়।