মোঃ মোশারফ হোসেন, শেরপুর :
শেরপুরের নকলা উপজেলার সর্বত্রই পাওয়া যাচ্ছে টক-মিষ্টি হরেক রকমের আগাম জাতের কুল। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, অফিস আদালতের সামনে সহ স্থানীয় হাট বাজারে মৌসুমি ফল কুল বিক্রির ধুম পড়েছে। পতিত জমিতে কুল চাষে ভাগ্য বদল করেছেন অনেক কৃষক। আর এ কুল বিক্রি করে উপজেলার ৮শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। সকাল ৯ টা হতে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অফিসের সামনে এবং রাত নয়টা পর্যন্ত বিভিন্ন বাজার সহ কমপক্ষে দুই শতাধিক স্থানে দৈনিক প্রায় ৮ হাজার কেজি কুল বিক্রি করা হয় বলে বিভিন্ন তথ্য মতে জানা গেছে। সরেজমিনে দেখাযায়, আগাম কুলের মধ্যে আপেল কুল, নারিকেল কুল, বাউ কুল, বাউ সুন্দরী কুল, টমা কুল সহ দেশীয় জাতের টক-মিষ্টি বিভিন্ন কুল বেশি বেচা কেনা হচ্ছে।
উপজেলার ৩টি নদী, ১০টি বিল ও ৫টি খালের তীরবর্তী চন্দ্রকোণা, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা, টালকী, বানেশ্বরদী, উরফা ও গনপদ্দী ইউনিয়ন সহ উপজেলার ১হাজার ৭৫০ একর জমি দীর্ঘ দিন যাবত অনাবাদী ছিলো। যে জমিতে উন্নত কোন শস্য বা ফসল জন্মাতো না, সেসব অনাবাদী জমিতে গত কয়েক বছর যাবত বিভিন্ন জাতের কুলের বাগান গড়ে উঠেছে। এসব বাগানের কুল এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলা শহরের পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
এমন এক কুলচাষী গনপদ্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক নাজমুল ইসলাম বলেন, তিনি ২০১৩ সালে ৩বিঘা জমিতে কুল চাষ শুরু করেন। তাতে মাটি কেটে জমি সমতল করা, চারা ক্রয় ও মজুরি সহ প্রতি বিঘাতে খরচ হয়েছে ১ লক্ষ টাকা। ওই বছরেই লাভ হয় ৩ লক্ষ টাকা। তার পরের বছর আরও ২বিঘা জমিতে কুল চাষ বৃদ্ধি করেন তিনি। বর্তমানে কুল বাগান হতে প্রতিবছর ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা তার আয় হচ্ছে। তিনি জানান, প্রথম বছরে যা ব্যয় হয় তার পরের বছর হতে খরচ অর্ধেকে নেমে আসে এবং পর্যায়ক্রমে উৎপাদনও কমতে থাকে, তবে লাভের পরিমাণ একই থাকে।
স্থানীয় পাইকাররা বলেন, ১হাজার ১৫০ টাকা থেকে ১হাজার ৩০০ টাকা করে প্রতি মণ কুল কিনেন তারা। প্রতি কেজি ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা করে বিক্রি করায় মণ প্রতি তাদের লাভ থাকে ৩০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। কুল বাগানের শ্রমিক পাঠাকাটার হাসু ও আলাল সহ অনেকেই জানান, তাদের মতো উপজেলায় অন্তত ২/৩শ’ শ্রমিক রয়েছেন যারা কুল বাগানের মজুরি দিয়ে সংসারের খরচ চালান। নকলা বাজারের খুচরা কুল বিক্রেতা ৫ম শ্রেণির ছাত্রী শেফালি ও তানজিনা জানায়, তাদের বড় ভাই নাথাকায় তারা সকাল ও বিকালে বাবাকে কুল বিক্রিতে সহযোগিতা করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, মৌসুমী ফলের মধ্যে কুল চাষের জন্য নকলার মাটি অতি উত্তম। অনুর্বর বা অনাবাদী জমিতে কুল চাষ করে যেকেউ ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন। এতে মাটির সর্বোচ্চ ব্যবহারসহ স্বাবলম্বী হওয়া সহজ। এবিষয়ে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।