পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকার অব্যাহতভাবে কাজ করে চলছে : প্রধানমন্ত্রী

পাটের সুদিন

কৃষিসংবাদ ডেস্ক:

সোনালী আঁশ পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে তাঁর সরকার অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগেও পাটের সেই অমিত সম্ভাবনা রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ সরকার সোনালী আঁশ পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার অংশ হিসেবে দেশব্যাপী পাট দিবস এবং পাটপণ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনষ্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পাট দিবস ও বহুমুখী পাটপণ্য মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। উল্লেখ্য, এবারই দেশে প্রথমবারের মত জাতীয় পাট দিবস পালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় পাটই বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্র অর্জনের বৃহৎ খাত থাকলেও পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশে যে হত্যা, ক্যু ষড়ন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয় সেখানেই পাটেরও কপাল পোড়ার শুরু।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজউদ্দিন প্রমাণিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা করেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পাট খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করেন। পাট বিষয়ে সারাদেশে আয়োজিত রচনা প্রতিযাগিতার বিজয়ীদের মাঝেও পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি সরকারের আমলে পাট শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯১ সালে বিএনপি যথন সরকারে তখন এই শ্রমিকেরা আন্দোলন করেছিল। এই আওয়ামী লীগ তখন পাটের শ্রমিকদের আন্দোলনের সাথে যুগপৎ আন্দোলন করে পাটের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে এবং প্রেস কনফরেন্সও আয়োজন করে। ‘সে সময় বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়ে ১৭ জন শ্রমিককে হত্যা করে,’ অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন মা তাঁর রুগ্ন সন্তানকে কোলে নিয়ে সেবা শশ্রুষা করে যেমন সুস্থ করে তোলে ঠিক সেভাবেই সমস্ত কলকারখানাগুলো, পাটকল বস্ত্রকল প্রভৃতি জাতীয়করণ করে সেগুলো পুনরায় চালু করেন বঙ্গবন্ধু। ধীরে ধীরে এসব প্রতিষ্ঠানে মানুষের অন্ততপক্ষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।’ প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ’৫৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে (যুক্তফ্রন্ট সরকার) তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী এবং তিনি ‘জুট মার্কেটিং কর্পোরেশন’ গড়ে তোলেন। এই পাটের রপ্তানি, উৎপাদন, বিপণন ও গবেষণা কার্য বৃদ্ধি করার জন্য।
বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বৃহৎ পাটকল আদমজী জুটমিল বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ’৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পরই বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে একটি চুক্তি করে যে, পাটকলগুলো একে একে বন্ধ করে দেবে। ’৯৩ সাল থেকেই বন্ধের কাজ শুরু হবে বিনিময়ে তারা ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে পাটকলের শ্রমিকদের বিদায়ের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা পাবে।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, বিএনপি যখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে এই চুক্তি করলো তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আবার ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। যে চুক্তি মোতাবেক বিশ্বব্যাংক ভারতকে টাকা দেবে নতুন পাটকল তৈরির জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি যে চুক্তিটা করেছিল তাতে আড়াই লাখ বেল পাট রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবার কথা। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকে চুক্তি মোতাবেক তাদের টাকায় ভারতে যে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে তাতে আড়াই লাখ বেল পাট উৎপাদনে সক্ষমতা থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে এর তীব্র বিরোধীতা করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিটা করে আসলো আমি সেটার কাগজ সংসদে উপস্থাপন করি এবং আমরা আওয়ামী লীগ এর তীব্র বিরোধিতা করে। যেটা জাতীয় সংসদের সংসদ কার্যাবলীতেও পাওয়া যাবে ( ৯১-৯৬)।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সে সময় সংসদে তাদের কাছে (বিএনপি) প্রশ্ন তুললাম- আমাদেরকেতো সবসময় ভারতের দালাল বলেন অথচ আপনাদের দালালির যে জ্বলন্ত উদাহরণ সমনে সেটার কি করবেন?’ ‘এভাবেই আমাদের পাটকলগুলোতে তারা একে একে ধ্বংস করে দেয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের উদ্যোগের ফলে আপনারা দেখেন- পাটের সোনালি দিন আবার ফিরে এসেছে। পাট হচ্ছে একটি কৃষিপণ্য এরসঙ্গে আমার হাজার হাজার কৃষকের জীবন জড়িত এবং জমিতে পাট চাষ হয় তা প্রাকৃতিকভাবেই শস্যবর্তনের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। কাজেই আমাদের পাটের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।
পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর সরকার গঠনের পর আমরা বন্ধ থাকা বস্ত্র ও পাটকলসমূহ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমরা বন্ধ থাকা খুলনার খালিশপুর জুটমিল, সিরাজগঞ্জের কওমী জুটমিলসহ ৫টি পাটকল ও ২টি বস্ত্রকল চালু করেছি। এতে প্রায় ২১ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সে সময় থেকেই পাটপণ্য গবেষণায় গুরুত্ব প্রদান করে বলেই আজ পাট থেকে প্রায় ৩৫ রকম পণ্য উৎপাদন করা যাচ্ছে। এমনকি প্লাষ্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশ বান্ধব পাটের পলিথিন ব্যাগও তৈরী করতে সমর্থ হয়েছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা। তিনি বলেন, পাটের বহুমুখী ব্যবহার এবং পাটের উন্নত চাষাবাদের জন্য আমাদের গবেষকরা কাজ করছেন। আমাদের বিজ্ঞানী মরহুম ড. মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে পাটের জিন রহস্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে পাটের উন্নত চাষাবাদের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পাটের মেধাসত্ত্ব অধিকার অর্জন করেছি। এখন থেকে পাট আমাদের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এ সময় প্রয়াত বিজ্ঞানী মকসুদুল আলমের অকাল প্রয়ান দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের চাহিদা সুষ্টিতে সরকারের উদ্যোগ প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ এবং ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা ২০১৩’ কার্যকর করেছে। ইতোমধ্যে ১৭টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সংসদে পাট আইন অনুমোদন করা হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন জোরদার হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘কপ-২১’ সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ পরিবেশ রক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হন। কাজেই পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাটের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে।
তিনি বলেন, পাটের বহুমুখী ব্যবহারের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের মাধ্যমে এ লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ‘জুট জিও টেক্সটাইল’ উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি। দেশে ও বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় জুট জিও টেক্সটাইল আমাদের পাটের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। অনুষ্ঠানে জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরিকৃত প্রামাণ্যচিত্র ‘বাংলার পাটে বিশ্বমাত’ পরিবেশিত হয়। পরে পাটপণ্যের ফ্যাশন শো এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী এবংপাট পণ্যের মেলার স্টলগুলি ঘুরে দেখেন।

সংবাদ সূত্র:-বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *