মোঃ শাহীন সরদার
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূল চালিকাশক্তি কৃষি, আমাদের আবহমান বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। প্রথম উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ও গবেণার পথিকৃৎ ও সর্বোচ্চ জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ৫৬ বছরের গৌরবময় যাত্রাপথ অতিক্রম করে ৫৭তম বর্ষে পর্দাপন করেছে। ১৯৬১ সালের ১৮ই আগস্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
পরাধীন দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সন্তোষজনক ছিলো না। এদেশের উর্বর জমি মৎস্য ও প্রাণীসম্পদে সমৃদ্ধ হলেও দুর্ভিক্ষ ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী। জাতীয় খাদ্য ও কৃষি কমিশন এবং শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৬১ সালের ১৮ই আগস্ট ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। লক্ষ্য ছিলো কৃষি উন্নয়নের জন্য দক্ষ কৃষিবিদ তৈরি করা, কৃষিকে বিশ্ববাজারে প্রাতিযোগিতামুখী ও ঠেকসই করে তুলার জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা , কৃষির সকল বিষয়ে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার জন্য বিজ্ঞানী তৈরি করা এবং গবেষণালব্ধ প্রযুক্তিকে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সে লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠালগন্ন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। গত ৫৬বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদদের অনেকেই জাতীয় ও আন্তজার্তিক ক্ষত্রে পুরস্কৃত হয়েছেন এবং একই সাথে পেশাগত পূর্ণতায় বিকশিত হয়ে তাঁরা দেশের কৃষি-সংস্কৃতির পরিমন্ডলে করেছে সমৃদ্ধ ও আলোকিত। এই দক্ষ কৃষিবিদদের নিরন্তন প্রচেষ্টার ফলেই দেশ আজ খাদ্য-শস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি জমি কমতে থ্কাাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যাশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ধান, গম, ভূট্টা, সবজি, মাছ ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বে ও অন্যান্য দেশের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে ৩য় স্থান ও মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। এছাড়া বাংলাদেশ এখন খাদ্যশস্য বিদেশে রপ্তানি শুরু করেছে। কৃষিক্ষেত্রে দৃশ্যমান এ সাফল্যগুলো ও কৃতিত্ব এ দেশের কৃষক ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের।
১৯৭৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এক ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন যার ফলে কৃষিবিদগন চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর গেজেটেট পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিন বদলের যে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তাঁরই অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনুপাত শতকরা ১৫ভাগ নামিয়ে এনে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বর্তমান সরকার ‘ভিশন টুয়েন্টি ওয়ান’ ঘোষণা করেছে। সরকারের এ কর্মসূুচি সফল করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ও কৃষি বিজ্ঞানীগণ অতীতের ধারাবাহিকতায় অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০কিলোমিটার উত্তরে ও ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম বিদ্যাপীঠ জাতীয় ও আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত ও গৌরবমন্ডিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরেই ১৯৬১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির মাঝেই নিহিত রয়েছে গোটা জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতাল অবরোধের মধ্যে ও পুরোদমে চলে ক্লাস-পরীক্ষা-অ্যাসাইনমেন্ট । এখানকার শিক্ষার্থীদের চাকরীর জন্য রয়েছে অবারিত সুযোগ। এছাড়া এখান থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী বিসিএস ক্যাডার প্রাপ্ত হয়। এখানকার শিক্ষার্থীরা স্কলারশীপ সহ অনেক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। প্রকৃতিকন্যা খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পূনাঙ্গ আবাসন ব্যবস্থা ও করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩টি ইনস্টিউট, ৬টি অনুষদ ও ৪৪টি বিভাগ রয়েছে।
সম্প্রতি জুলাই ২০১৭ সংস্করণে বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রকাশিত ওয়েবমেট্রিক্সে র্যাংকিং অব ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটিস এ বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। স্পেনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্প্যানিশ জাতীয় গবেষণা কাউন্সিলের করা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এদের অধিভুক্ত কলেজের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে এ অবস্থান দেখানো হয়েছে। ওয়েবমেট্রিক্সের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় দেশে ১ নম্বর অবস্থানে থাকলেও বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এর অবস্থান ২০৬১ নম্বরে। দেশভিত্তিক তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং তৃতীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং তৈরিতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষণ পদ্ধতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রভাব, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা, সাম্প্রদায়িক সন্নিবেশ অর্থাৎ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ভূমিকা বিবেচনা করে ওয়েবমেট্রিক্স। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ আবাসিক। আর গবেষণা ও শিক্ষা বিষয়ে বিশ্ব র্যাংকি ১ম স্থানে থাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা এখন প্রাচ্যের অক্্রফোর্ড হিসেবে ডাকতে পারি। অক্্রফোর্ডকে সেরা হিসেবে বিবেচনার কারণ তার আবাসিক ব্যবস্থা ও উন্নত গবেষণার জন্য।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয় এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার দক্ষ কৃষিবিদ তৈরি করেছে। এ যাবত জাপান, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, ইরান, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, শ্রীলংকা এবং নেপাল থেকে পড়াশুনা করতে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২৫ জন। তাছাড়াও বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোবেল লরিয়েট কৃষি বিজ্ঞানী ড. নরম্যান ই. বোরলগকে সম্মানসূচক ডিএসসি (অনারিস কজা) ডিগ্রী প্রদান করা হয়।
ভৌত অবকাঠামো.
ছয়টি অনুষদীয় ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, গ্রাাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ছাত্রদের জন্য নয়টি ও ছাত্রীদের জন্য চারটি হল, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবন, কেন্দ্রীয় গবেষনাগার, দুই হাজার আসন বিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন ভবন, জিমনেসিয়াম, স্টেডিয়াম, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রকৌশল ভবন, অতিথি ভবন, ক্লাব ভবন, ৬৫৭টি আবাসিক ইউনিট, ১২টি ফার্ম, ফিল্ড ল্যাব, ক্লিনিক, ওর্য়াকশপ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জার্মপ্লাজম সেন্টার, শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মরণে নির্মিত বধ্যভূমি, বিজয় ৭১, মরন সাগর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্বর সহ দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট (বিনা) এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিউট (বিএফআরআই) এ ক্যাম্পাসে অবস্থিত।
গৌরবের বিষয়সমূহ
জার্মপ্লাজম সেন্টার. উদ্ভিদের অন্যন্যা সংগ্রহশালা, এটি গবেষনায় বিশ্বের মধ্যে প্রথম এবং আয়তনে দ্বিতীয়। প্রায় ৩২ একর জায়গার উপর সাড়ে ১১হাজার ফলের প্রজাতি নিয়ে গড়ে ওঠেছে জার্মপ্লাজম সেন্টারটি গত ২২বছরে ৬৭টি ফলের নতুন জাত আবিষ্কার করেছে।
কৃষি জাদুঘর. প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত এই মিউজিয়ামটি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র কৃষি মিউজিয়াম।
মৎস্য জাদুঘর. ‘বায়ো-ডাইভারসিটি সেন্টার’ বিচিত্র প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক প্রাণি সংরক্ষণের দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফিশ মিউজিয়াম এটি।
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী. কৃষি বিষয়ক বই সংগ্রহের বিচারে এশিয়ার বৃহত্তম লাইব্রেরী। পুস্তক সংখ্যক প্রায় ২লক্ষ ১২ হাজার। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তিন তলা বিশিষ্ট এই ভবনে একটি সাইবার কক্ষ রয়েছে।
ক্যাম্পাস. বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর ক্যাম্পাস এটি যা প্রায় ১২০০একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদী। ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে চলে গেছে রেল লাইন।
বোটানিক্যাল গার্ডেন. বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষনের দিক থেকে বাংলাদেশের এক নম্বর এটি। দুষ্প্রাপ্য গাছ-গাছালির সংগ্রহ নিয়ে ২৫ একর জায়গা জুড়ে ব্রক্ষপুত্র নদীর পাড়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠেছে সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেনটি।
ভেটেনারি ক্লিনিক. প্রশিক্ষণ, পশু চিকিৎসা সেবা প্রদানের দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যতম পশু চিকিৎসালয়।
প্লান্ট ডিজিজ ক্লিনিক. উদ্ভিদের রোগ নির্ণয়, গবেষণার কাজে ব্যবহৃত এই ক্লিনিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম উদ্ভিদ চিকিৎসালয়।
গবেষণা
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩২ একর জায়গা গিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎতম ফল সংগ্রহশালা বাকৃবি জার্মপ্লাজম সেন্টারটি এখন পর্যন্ত শত শত দেশী বিদেশী ফলের বাণিজ্যিক জাত উদ্ভাবন করে দেশের পুষ্টি ও অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করে আসছে। জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক ড. এম এ রহিম সহ সহকারি গবেষকদের দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছে প্রায় ৮০ জাতের ফল। এছাড়া বর্তমানে দেশী বিদেশী নানা ফল ও শস্য জাত নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।
পশুসম্পদ বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির মধ্যে মোরগ-মুরগির রানিক্ষেত রোগ ও ফাউল পক্সের প্রতিষেধক টিকা উৎপাদন; মাংস উৎপাদনকারি ্ব্রাহমা ক্্রস এর উৎপাদন, হাঁসের প্লেগ ভ্যাকসিন ও হাঁসমুরগির ফাউল কলেরার ভ্যাকসিন তৈরি; হাঁসমুরগির সুষম খাদ্য তৈরি, কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে ব¬াক বেঙ্গল ছাগলের সিমেন সংরক্ষণ; ছাগলের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল; গবাদি পশু উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন বৃদ্ধিতে ইউরিয়া মোলাসেস ব¬ক; কোয়েল পাখির নতুন উপজাত উদ্ভাবন উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে নতুন নতুন কৃষি প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে, বাকৃবি জিয়া সার-বীজ ছিটানো যন্ত্র ; সোলার ড্রায়ার ; উন্নত ধরনের হস্তচালিত টিউবওয়েল পাম্প ; জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নত মানের দেশি চুলা ; কেন্দ্রীয়ভাবে শস্য শুষ্ককরণ ব্যবস্থার উপযোগী কম্পিউটার সফ্টওয়ার তৈরি উল্লেখযোগ্য।
মাৎস্যবিজ্ঞান প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়েছে বাকৃবিতে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা। এর মধ্যে খাঁচায় দেশি কই মাছ চাষ, সুপার মেল তেলাপিয়া, গাঙ মাগুরের কৃত্রিম প্রজনন, পানিতে একই সাথে সবজি ও মাছের চাষ, ( একোয়াফনিক্্র ও একোয়াজিওফনিক্্র), ক্ষত রোগের প্রতিকার নির্নয়, মাগুর, শিং, তারা বাইম, গুচি বাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজননসহ ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি; দেশি পাঙ্গাসের কৃত্রিম প্রজনন; এলোজাইম মার্কার ব্যবহার করে পিতামাতার সাথে ক্রস কৈ মাছের কৌলিতাত্ত্বিক পার্থক্য নিরূপণ; হিমায়িত শুক্রানুর মাধ্যমে দেশীয় জাতের মাছের পোনা উৎপাদন; মাছের পোনা পালনের জন্য রটিফারের চাষ; পেরিফাইটন পদ্ধতিতে মাছ চাষ, কুচিয়া মাছের প্রধান প্রজনন সময়কাল নির্ণয় প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধে বাকৃবিঃ
১৯৭১ সালের দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হারায় তার ১৯ বীর সস্তানকে । তারা হলেন জামাল হোসন, নাজমুল আহসান, শামসুল হক তালুকদার, নাজির আকতার কাশেম, আবদুল মতিন খন্দকার টিপু, হাবিবুর রহমান, আবুল কাশেম, খুরশীদ আলম শিবলু, কাজী মঞ্জুর হোসন, ইব্রাহিম মো¯তফা কামাল, মনিরুল ইসলাম আকন্দ নামের ১১ ছাত্র ও আক্কাস আলী, মধুসুধন, নূরুল হক, গাজী ওয়াহিদুজ্জামান, হাসান আলী, গিয়াস উদ্দিন নামের ছয় কর্মচারী এবং পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম ভুইয়াকে। তাদের নামে বিশ্বদ্যিালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের পিছন অংশে নির্মাণ করা হয় মরণ সাগর নামের স্মৃতিসোধ । এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শহীদ ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার নামে তিনটি হলের নামকরণ করা হয় । হলগুলো হচ্ছে শহীদ শামসুল হক হল, শহীদ নাজমুল আহসান হল এবং শহীদ জামাল হোসেন হল ।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড, মো, আলী আকবর বলেন, “খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা ” নামে যে ইস্যু বর্তমানে সারা বিশ্ব জুড়ে শোনা যাচ্ছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক-গ্র্যাজুয়েটদের অক্লান্ত পরিশ্রম এ অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে রপ্তানীর দিকে ধাবিত হচ্ছি। দেশ থেকে ক্ষুধা মঙ্গার অবসান ঘটেছে। যার ধারাবাহিকতায় বিশ্ব সমাদৃত ওয়েবমেট্রিক্সে র্যাংকিং এ বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থান পেয়েছে বাকৃবি। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দিয়ে যেখাবে সম্পানিত করেছিলেন তাঁর মান আমরা কৃষিবিদরা রাখতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষতে বাকৃবি কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় বিগত ৫৫ বছরের গৌরবময় ঐতিহ্য ধরে রেখে বিশ্ব র্যাংকিং এ শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।