বিষমুক্ত সবজি চাষে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ প্রযুক্তির ব্যবহার

সেক্স ফেরোমন ফাঁদ

 সেক্স ফেরোমন ফাঁদ

মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা থেকেঃ

বিষমুক্ত শাক সবজিসহ ফসল চাষে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে শেরপুরের নকলা উপজেলার সহস্রাধিক কৃষক সুফল পেয়েছেন। চলতি মৌসুমে পৌর এলাকা, বানেশ্বরদী, টালকী, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা ও গৌড়দ্বার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সরকারী প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় শাক সবজি ও বিভিন্ন ফসলে মাছি জাতীয় ক্ষতিকর পোকা দমনে এফাঁদ ব্যবহার বৃদ্ধি করতে কৃষকদের নিয়ে মাঠ দিবস করা হচ্ছে। অনেক কৃষকদের বিনামূল্যে ফেরোমন ফাঁদের ট্র্যাপ দেওয়া হয়েছে। নামে মাত্র ব্যয়ে তৈরী করা ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারে সুফল পাওয়ায় রাসায়নিক বিষ ব্যবহারের পরিবর্তে এ ফাঁদে ঝুঁকছেন কৃষক। স্ত্রী পোকার গায়ের গন্ধের অনুরুপ জৈবিক পদার্থ দিয়ে তৈরী এ ফাঁদে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে এসে সাবান বা কেরোসিন মিশ্রিত পানিতে পড়ে মারা যায়। ফলে কৃষকের অর্থ ও সময় বেঁচে যাচ্ছে; পক্ষান্তরে বিষমুক্ত শাক সবজি ও বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। উৎপাদন ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে ফসলি জমি। রক্ষা হচ্ছে পরিবেশ; ভোক্তারা পাচ্ছেন নিরাপদ শাক সবজি।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বেগুন, শিম, টমেটো, করলা, কপি, কাকরুল, বরবটি, শশা, কুমড়া, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন মাঠ ফসলের ক্ষেতে ফেরোমন ফাঁদ ঝুঁলছে। কোন একসময় এসব ফসলের ক্ষেতে উচ্চ মূল্যের কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকরা অপেক্ষাকৃত কম লাভ পেতেন। কৃষি অফিসের পরামর্শে বর্তমানে ওইসব ক্ষেতে ক্ষতিকর কীটনাশক ছেড়ে ফেরোমন ব্যবহার করায় কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। লাউ ও কুমড়া ক্ষেতে ব্যবহার কারী ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সদস্য হেলাল , রায়হান, কামাল, কমল, ঈসমাইল, রিপা, সাদির মাহমুদ, নাছিমা ও তাহমিনা; লাভার শাহাদৎ, কামাড়পট্টির হাফিজুর, বানেশ্বরদীর দেলোয়ার ও মোস্তাফিজুর রহমান খান; ধুকুড়িয়ার হাফেজ উদ্দিন, নজরুল, হাসেম ও ইসমাইল; গড়েরগাঁওয়ের মানিক ও বকুল; বাছুর আলগার মোক্তার, আজিম ও মোকছেদসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তারা কয়েক বছর ধরে ফসলে পোকা দমনে উচ্চ মূল্যের কীটনাশক ত্যাগ করে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছেন। অনেক সময় বেশি দামের বিভিন্ন কীটনাশক কাজে আসতো না; কিন্তু ফেরোমন ফাঁদ কুমড়া জাতীয় ফসলে ক্ষতিকর পোকা দমনে শতভাগ কাজে আসায় তারা লাভবান হয়েছেন। তাদের সুফল দেখে অন্যান্য কৃষকারাও ফেরোমন ফাঁদে ঝুঁকছেন এবং অনেকেই নতুন করে এফাঁদ ব্যবহার শুরু করেছেন। ভুরদীর রায়হান জানান, উচ্চ মূল্যের কীটনাশক কে ‘না’ বলায় এবং সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করায় বছরে অন্তত ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা শুধুমাত্র কীটনাশক ক্রয় বাবদ খরচ কমেছে। পূর্ব লাভার শাহাদৎ বলেন, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারে একদিকে কৃষকের টাকা বেঁচে যাচ্ছে, অন্যদিকে গ্রাহক বা ভোক্তারা পাচ্ছেন বিষমুক্ত শাক সবজি ও ফলমুল; পাশাপাশি রক্ষা হচ্ছে পরিবেশ।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই কম বেশি ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহৃত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এর ব্যবহার বাড়ছে। আগামী দিনে কৃষক হয়তো ক্ষতিকর ও উচ্চ মূল্যের কীটনাশক ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দিবেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন, কুমড়া জাতীয় সবজির আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়ে নিয়মিত উদ্বোদ্ধকরণ মাঠ দিবস অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। তাতেকরে বিভিন্ন জাতের উন্নত ফসল ও প্রযুক্তির সাথে কৃষকদের সঙ্গে পরিচয় ঘটানোসহ ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে আকৃষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে অর্থ ও সময় বেঁচে যাচ্ছে; পক্ষান্তরে বিষমুক্ত শাক সবজি ও বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। উৎপাদন ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে ফসলি জমি। রক্ষা হচ্ছে পরিবেশ; ভোক্তারা পাচ্ছেন নিরাপদ শাক সবজি, ফলমূল ও অন্যান্য নিরাপদ খাদ্য।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *