বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু আখ চাষে নতুন আশা দেখছেন চাষীরা

জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু আখ চাষে নতুন আশা


মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) ঃ

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাবনার ফিজিওলজি এন্ড সুগার কেমিষ্ট্র বিভাগের বাস্তবায়নে এবং বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, জামালপুর উপকেন্দ্রের সহযোগিতায় এগারোটি ক্লোনের পাঁচটি নতুন জাতের জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু আখ চাষে সফলতা পাওয়া গেছে। এর ফলে আখের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত ও সমৃদ্ধ করতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে ব্যাপকভাবে এই আখের চাষ বাড়াতে হবে। দেশের সব জলাবদ্ধ এলাকায় এর চাষ করতে পারলেই আখ ফিরে পাবে তার অতীত ঐতিহ্য, আর কৃষক হবেন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান। স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন লাখো কৃষি পরিবার। এমনটাই মনে করছেন ইক্ষু গবেষকসহ কৃষি গবেষকরাও।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, জামালপুর উপকেন্দ্রের আওতায় জলাবদ্ধ থাকে এমন এক বিঘা জমিতে প্লট আকারে আই ১২৭-০৯, আই ১৩০-০৯, আই ৮৫-১০, আই ১০১-১০, আই ১০৩-১০, আই ৭-১১, আই ১১১-১১, আই ১৯৮-১১, আই ২৩০-১১, আই ১১৮-১০, আই ১৩১-১০ ক্লোনের মাধ্যমে ঈশ্বরদী-৩৪, ঈশ্বরদী-৩৭, ঈশ্বরদী-৩৯, ঈশ্বরদী-৪০ এবং বিএসআরআই আখ-৪৩ জাতের আখ চাষ করা হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায়্য শেরপুরের নকলার এক বিঘা জলাবদ্ধ জমিতে বিভিন্ন জাতের ওই আখ পরীক্ষা মূলকভাবে চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে। ফলন দেখে অনেকেই মনে করছেন, সমতল ও উঁচু জমির অন্য ইক্ষুর চেয়ে এই জাতের আখের উৎপাদন কোন অংশেই কম না বরং বেশি।

নকলা কৃষি অফিসের সিটিজেন চার্টের মতে, প্রায় ১৭৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নকলা উপজেলার ৩০ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমি আবাদী এবং ১ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমি নিচু এলাকা রয়েছে। তার মধ্যে ৭০০ হেক্টর জমি বরাবর পতিত থেকে যায়। ওইসব নিচু ও জলাবদ্ধ পতিত জমিতে নতুন উদ্ভাবিত এই জাতের আখ চাষ করা সম্ভব। তাছাড়া দখল, বাধ, ঘরবাড়ি রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন ইমারত নির্মান, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারনে একটু বৃষ্টি হলেই দেশে বন্যার সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় এই ইক্ষুর উদ্ভাবন যেন কৃষকের জন্য আর্শীবাদ বয়ে আনছে। দিন দিন এই জাতের আখচাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

উপজেলার পাঠাকাটা ইউনিয়নের চকপাঠাকাটা এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি বাব দাদার আমল থেকেই আখ চাষ করে আসছেন। তবে বন্যার পানিতে অনেক সময় আখের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু তার নিচু জমিতে জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ঈশ্বরদী-৩৪ ও বিএসআরআই আখ-৪৩ জাতের আখ চাষ করতে পেড়ে সে খুব খুশি; এখন আর তার ক্ষেত নষ্ট হবেনা। তিনি আরও জানান যে, আগে বর্ষকালে তার নিচু জমি পতিত পড়ে থাকত, শুকনা মৌসুমে মাঝে মধ্যে কিছু জমিতে ধান চাষ করতে পারতেন। কিন্তু ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি ওইসব জমিতে জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ইক্ষু চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন; এতে কৃষি ক্ষেত্রে লাভবান হওয়ার পথ খোঁজে পেয়েছেন তিনি।

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, কৃষি নির্ভরশীল এদেশের ক্রমবর্ধমান মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনেই দিন দিন আবাদী জমি কমছে। এমতাবস্থায় কোন জমি অনাবাদী থাকুক তা কারো কাম্য নহে। তাতে কৃষি অর্থনীতির চাকা সচল না হয়ে উল্টা স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। তাই নিচু ও জলাবদ্ধ পতিত জমিকে কাজে লাগাতে এই আখের চাষ বাড়ানো জরুরি। এর জন্য সরকারকে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে পতিত জমির ব্যবহার বাড়ানো উচিত বলেও তিনি মত দেন।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, জামালপুর উপকেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মহিউল আলম জানান, জলাবদ্ধ জমিতে জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু জাতের আখ চাষের গভীর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই জাতের আখের সফলতা ও সম্ভাবনা নিয়ে আশা করে তিনি বলেন, সরকারি পৃষ্টপোশকতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিচু এলাকার কৃষকদের জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের আখ চাষে উদ্বোদ্ধ করতে পারলে একদিকে গতি পাবে কৃষি অর্থনীতি অন্যদিকে কৃষক হবেন স্বাবলম্বী, আখ ফিরে পাবে তার অতীত ঐতিহ্য। তাতে দেশের মোট জমির ব্যবহার বাড়বে, কমবে জলাবদ্ধতার কারনে পতিত জমির পরিমাণ। তিনি আরো জানান, তারা একসাথে ৫টি জাতের উপর গবেষণা চালান, তাতে প্রথম বছর যে জাতের সফলতা পাওয়া যায়; পরের বছর ওই জাতের আরো ৫টি প্লট করে গবেষণা চালানো হয়। এভাবে ১০বছর গবেষণার পরে যে ক্লোনের জাতের আখে অধিক সফলতা পাওয়া যায় সে জাতটি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফলে কৃষকরা সরাসরি ভালো মানের ও জাতের বীজ পেয়ে কৃষি ক্ষেত্রে লাভবান হয় বা অধিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *